নিঃশব্দ আঁততায়ী




……….জাজাফী             

স্বপ্ন ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়।ক্ষুধার্তের চোখ দিয়ে কবি পূর্নিমার পূর্ণ চাদঁকে ঝলসানো রুটি রুপে দেখে। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে ঝরে যায় কত প্রাণ।কত ঘরে জমে বুক চাপা কান্না। কত পরিবারের বেঁচে থাকার আলোটুকু নিভে যায় চোখের নিমিষে।কিন্তু তবুও মানুষকে পথ চলতে হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের মাঝ থেকে,ধুলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে হাজারো স্বপ্ন। পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে দুর্ঘটনার খবর।

একটি স্বাধীন সুন্দর দেশে অনেক অনাবিল হাসি ব্যথিতের আর্তনাদের নিচেয় চাপা পড়ে যাচ্ছে।অনেক অর্জনের আনন্দ নিমিষে ফিকে হয়ে যাচ্ছে স্বজন হারানো মানুষের আকুল আর্তনাদে। দম ফেলতে হয়তো আমাদের কিছুটা দেরি হচ্ছে কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটতে দেরি হচ্ছেনা। প্রতিনিয়ত দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। কিন্তু অব্যাহত সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কাযকর কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছেনা।ফলে বহু মূল্যবান জীবন বিনষ্ট হচ্ছে। অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছে। চোখের সামনে হারিয়ে যাচ্ছে মিশুক মুনির,তারেক মাসুদদের মত ক্ষণজন্মা মনীষী। 

দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটেছে। স্থানে স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে ফ্লাইওভার,আন্ডারপাস,ফুট ওভার ব্রিজ।কিন্তু কমছেনা সড়ক দুর্ঘটনা।ক্রমাগত ভাবে তাই সড়ক পথ হয়ে উঠছে বিপজ্জনক। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই,অদক্ষ চালক,অপ্রশস্ত রাস্তায় বাস চালনার প্রতিযোগিতা,ত্রুটিযুক্ত যানবাহন এগুলোই হয়তো সড়ক দুর্ঘটনার কারণ।কিন্তু ওই সবের দোহাই দিয়েতো আমরা আমাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারিনা।সব কিছুর মূলে রয়েছে সচেতনতার অভাব। যদি আমরা সচেতন হতাম তাহলে মালিক হিসেবে আমরা কখনোই আমাদের ত্রুটিপূর্ন গাড়িটি রাস্তার বের হতে দিতাম না,চালক হিসেবে আমরা ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চালাতে সম্মত হতাম না কিংবা প্রকৃত প্রশিক্ষণধারী না হয়ে গাড়ির স্টিয়ারিংএ হাত দিতাম না। 

সচেতন হলে আমরা কখনোই অদক্ষ কাউকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দিতামনা কিংবা কিছু টাকার বিনিময়ে আমাদের হাত থেকে কোন ত্রুটিপুর্ণ গাড়ি ছাড়া পেতো না। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের উপস্থাপিত তথ্য মতে সড়ক দূর্ঘটনার কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে বেপরোয়া গাড়ি চালানো,অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল ওঠানো,গাড়ি চালকের প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব,গাড়ীর যান্ত্রিক ত্রুটি, যানবাহনের সংখ্যা ক্রমাগত হারে বৃদ্ধি,ট্রাফিক আইন অমান্য,মহাসড়কের স্থানে স্থানে অনুমোদনহীন স্পিড ব্রেকার,জনগণের উদাসীনতা ইত্যাদি অন্যতম।

নিঃশব্দ আততায়ির মত প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের চার হাজার স্বজনকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।কিন্তু সত্যিকার অর্থে যদিও কেউ মৃত্যুকে ঠেকাতে পারেনা তবে এ মৃত্যুকে আমরা ঠেকাতে পারি।এড়াতে পারি পঙ্গুত্বের অভিশাপকে।

খুব বেশি কিছু করতে হবেনা। এ জন্য দরকার একটুখানি সচেতনতা,ধৈয,সতর্কতা আর ট্রাফিক আইনের যথাযথ প্রয়োগ। আমাদের মনে হয় যে সব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে তার প্রত্যেকটি কারণই প্রতিরোধযোগ্য। এক জরিপে দেখা গেছে ৯১ শতাংশ চালক জেব্রাক্রসিং এ অবস্থানরত পথচারিদের অধিকার আমলেই নেয়না। পাশাপাশি ৮৪ ভাগ পথচারি নিয়ম ভেঙ্গে রাস্তা পার হয়। অন্য এক সমীক্ষার তথ্য মতে শতকরা ৯৪ জন রিকশাচালক ট্রাফিক আইন ও নিয়মের প্রাথমিক বিষয় গুলোও ঠিকমত জানেনা।তারা জানেনা ডানে বা বায়ে যেতে হলে কি সংকেত দিতে হয়। কোথায় কিভাবে মোড় নিতে হয়। 

যারা তা জানে তাদের অধিকাংশ ইচ্ছাকৃতভাবে সিগন্যাল অমান্য করে,দ্রুত এবং দিগ্বিদিক শুন্য হয়ে গাড়ি চালায়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।এ ছাড়াও অনেক পথচারীই নানা কারণে ওভার ব্রিজ পার হতে ইচ্ছুক নয়। কোথাও কোথাও ওভার ব্রিজ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিন্তু সেখানে ওভার ব্রিজ নেই বরং অপরিকল্পিত ভাবে ওভার ব্রিজ করা হয়েছে এমন কোথাও যেখানে ওভারব্রিজ থাকাটা অতটা জরুরী নয়।সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ কাযক্রম জোরদার না করলে এ নিঃশব্দ ঘাতকদের রোধ করা সম্ভব হবেনা।

এ জন্য বাড়াতে হবে জনসচেতনতা। সচেতন হতে হবে যানবাহন চালক,হেলপার,যানবাহন মালিক,যাত্রী,পথচারি থেকে শুরু করে ট্রাফিক পুলিশকেও। মনে রাখতে হবে বেপরোয়া গতিতে যেমন গাড়ি চালানো যাবেনা তেমনি অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করা যাবে না।রাস্তায় চলতে হলে গাড়ি ও চালকের ফিটনেস থাকতে হবে এবং কোন ক্রমেই চলন্ত গাড়িতে ওঠা যাবেনা। 

ক্রসিং এবং ওভারব্রিজ ও আন্ডার পাস দিয়ে রাস্তা পারাপারের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। যদি এসব কিছুকে আমরা আয়ত্বে আনতে পারি তবে আশা করা যায় সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের স্বজন হারানো আর্তনাদ শুনতে হবেনা।আইনের ফাকফোকর দূর করে আরো কঠোরতা আনতে হবে, এর পাশাপাশি সব ধরনের অনিয়ম রোধে কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক হতে হবে।

এক কৃষক তার জমিতে চার জন কাজের লোক লাগিয়েছেন যাদের মধ্যে একজন অন্ধ।কৃষক দুপুরে তার ক্ষেতে আসলেন। কাজ ঠিক মত হয়নি দেখে জিজ্ঞেস করলেন এখানে এরকম ঘাস রয়ে গেছে কেন? অন্যরা তখন জোর গলায় বললো ওই জায়গাতো আমরা পরিস্কার করিনি,ওটা অন্ধলোকটা করেছে।এভাবে একে একে কৃষক পুরো জমি দেখলেন এবং সবখানেই একই অবস্থা।যখনই কৃষক জানতে চাইলেন তখনই বাকি লোক গুলো বললো ওই জায়গাতো আমি পরিস্কার করিনি ওটা অন্ধ লোকটা করেছে। কৃষক বললেন সব যদি অন্ধ লোকটাই করে থাকে তাহলে তোমরা কি করেছ। যাও তোমাদের আর দরকার নেই।ঠিক একই ভাবে ওই অন্ধলোকটার ঘাড়ে সব চাপিয়ে দেওয়ার মত সড়ক দূর্ঘটনা রোধের সব দায়িত্ব কেবল সরকারের ওপর চাপিয়ে দিলেই হবেনা বরং সকলকে এ নিয়ে কাজ করতে হবে। তবেই হয়তো সড়ক হবে নিরাপদ,জীবন হবে সুন্দর,ঠিক যেমনটি আমরা কল্পনা করি।

…………
জাজাফী
এস এম হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

তুমি ভাবছো




........................জাজাফী
........................................................................
তুমি ভাবছো তোমায় নিয়ে ভাবার মত কেউ নেই
জেনে রেখো তোমায় নিয়ে ভাবার আছে অনেকেই

তুমি ভাবছো মানুষ সবাই মিথ্যে বলে শান্তনা দেয়
তুমি ভাবছো ব্যস্ত জীবনে কে আর তোমার খবর নেয়?

জেনে রেখো অনেক মানুষ তোমায় ভাবে সারাক্ষণ
হয়তো তুমি জানোনা তা,জানায় না তা সমীরণ

একটা মানুষ সকাল দুপুর তোমায় নিয়েই ভাবে
কেউ যদি তা না বলে দেয়,জানবে তা কিভাবে

এখন তুমি একটু খানি ভাবো এসব কথা
নিশ্চুপ আর কতই রবে নিরব চারুলতা
............................
জাজাফী
২৯ আগষ্ট ২০১৫
সন্ধ্যা ৭.৪৫

লেখা নিয়ে লেখা






বই মানুষের অকৃত্রিম বন্ধু। ওমর খৈয়াম তাই লিখেছিলেন রুটি মদ ফুরিয়ে যাবে,প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হবে। বই তবু রবে অনন্ত যৌবনা।আর বাংলা ভাষায় চলিত রীতির প্রবর্তক প্রমথ চৌধুরী বলেছেন বই কিনে কেউ দেউলিয়া হয়না। বাংলা সাহিত্য এখন রীতিমত সমৃদ্ধ বলা চলে। ১৯০৭ সালে চর্যাপদ আবিস্কারের মধ্য দিয়ে হয়তো বাংলা সাহিত্যের যাত্রা শুরু তবে সেটা বর্তমানে উৎকর্ষতার দিক থেকে অন্যান্য ভাষার সাহিত্যকে ছাড়িয়ে গেছে। ১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যে নোবেল প্রাপ্তি বিশ্ব দরবারে বাংলা সাহিত্যকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছে নব রূপে। পৃথিবীর অনেক ভাষা আছে যে ভাষার বয়স বাংলা ভাষার চেয়ে অনেক বেশি কিন্তু সাহিত্য রচনার দিক থেকে তারা যোজোন যোজন ব্যাবধানে রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের ভাষা হিন্দি। 

হিন্দি ভাষায়ও কম বেশি রচিত হয়েছে অনেক কাব্য মহাকাব্য কিন্তু এখনো সে ভাষার কেউ নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়নি। আমাদের আছে রবীন্দ্রনাথ,নজরুল জীবনানন্দ থেকে শুরু করে মাইকেল মধুসুদন দত্ত। আমাদের আছে জসীম উদদীন,শামছুর রাহমান,আল মাহমুদ হয়ে হালের চির তরুণ কবি নির্মলেন্দু গুণ। কবিতার মায়া জাল বিছিয়ে আমাদের মুগ্ধ করে রেখেছেন বুদ্ধদেব বসু,বিনয় মজুমদার সহ আরো অনেকেই। বাংলা সাহিত্যের রয়েছে আলাদা একটি বৈশিষ্ট্য। আমাদের ভালবাসায় গড়ে উঠেছে বইমেলা। প্রতি বছর বইমেলার দিকে তাকালেই বিষয়টা আমাদের বোধগম্য হবে বলে আশা করি। 

প্রতি বছরই একুশে বইমেলায় বের হচ্ছে পাঁচ হাজারের অধিক নতুন বই। এর মধ্যে সিংহ ভাগ লেখক কবিই নতুন। এভাবে সঠিক পরিসংখ্যন হয়তো আমাদের হাতে নেই তবে বিগত কয়েক দশকে আমাদের সাহিত্যে যোগ হয়েছে কয়েক মিলিয়ন নতুন বই।কিন্তু প্রতি বছর যে পরিমান নতুন বই বের হচ্ছে তার সব কি পাঠযোগ্য? কিংবা যে লেখকেরা নতুন নতুন বই নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হচ্ছেন তারা সবাইকি টিকে আছেন? কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছেন তাদের অনেকেই।বিশ্বের বিভিন্ন ভাষার শ্রেষ্ঠ লেখকদের জীবনীর দিকে তাকালেই দেখা যাবে তাদের রচিত সাহিত্য সংখ্যা হাতে গোনা। কিন্তু তারা সমাসীন উচু আসনে। তাদের রচিত সাহিত্যের কদর বিশ্বব্যাপী।

একজন মানুষের পক্ষে কত গুলো বই পড়া সম্ভব? জীবনে অবসরেরই আজ বড় অভাব তাই আমরা হয়তো আজ খুব কম মানুষই আছি যারা বই খুলে অন্য ভূবনে ডুব দিতে পারি। ফেসবুক,টুইটারের যুগে এখন সবাই সময় কাটায় সোশ্যাল মিডিয়াতে। প্রমথ চৌধুরী বলেছিলেন বই মনের চোখ বাড়ায়। আমাদের এ যুগে মনে হয় কারো সেই চোখের দরকার নেই। কিন্তু তারপরও যারা সাহিত্যের ভূবনে হারিয়ে যেতে চান। যারা ওরান পামুক,গার্সিয়া মার্কেজ,ড্যান ব্রাউন থেকে শুরু করে আল মাহমুদ,শামছুর রাহমান কিংবা নির্মলেন্দু গুণে মুগ্ধ তাদের সংখ্যাও কিন্তু একেবারে কম নয়। হুমায়ুন আহমেদেইতো মজে আছে এ দেশের কোটি কোটি তরুন তরুনী।কত জন হিমু হতে চেয়েছে তার কোন সীমা নেই। এই লেখাটি তাদের জন্যই।

লেখা নিয়ে লেখা এই শিরোনামটি আদতে ধারকরা। বর্তমান বাংলাদেশের জনপ্রিয় সাহিত্যিক আনিসুল হকের একটা বই আছে লেখা নিয়ে লেখা শিরোনামে। প্রতি বছর যে হারে বই প্রকাশ পাচ্ছে তার মধ্যে সেরা বই গুলি বাছাই করে পড়া আমাদের অনেকের পক্ষেই অসম্ভব। বাংলা সাহিত্যের দিকপাল কবি ও সাহিত্যিকের লেখা গুলো পড়তে গেলেই আমাদের আরো দুই তিনবার জন্ম নিতে হবে সেখানে নতুনদের লেখা পড়াতো বাদই থাকলো। সেই অসাধারণ কাজটিই করেছেন সুলেখক আনিসুল হক। তিনি লেখা নিয়ে লেখা বইটিতে তুলে ধরেছেন এদেশের কবি ও সাহিত্যিকদের সেরা বই ও লেখা গুলো। বইটির প্রতিটি পাতা আপনাকে বিমোহিত করবে আটকে রাখবে সেটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত। বাদ পড়েনি মানিকবন্দ্যোপাধ্যয় থেকে শুরু করে হাসান আজিজুল হক। সেলিনা হোসন,আব্দুল মান্নান সৈয়দ থেকে শুরু করে শামছুর রাহমান আছেন বইয়ের পাতায় পাতায়। আল মাহমুদের কবি হয়ে ওঠা কিংবা নির্মলেন্দুগুণের হুলিয়া থেকে শুরু করে স্থান পেয়েছে শামছুর রাহমানের আসাদের শার্ট। উঠে এসেছে শহীদুল জহিরের কথা আছে অতসীমামী নিয়ে সুন্দর আলোচনা।

 আধুনিকতা,উত্তর-আধুনিকতা ও নজরুল থেকে প্রধান কবির প্রেম গাথা।আধুনিকতার শেষ প্রান্ত এবং আবিদ আনোয়ারের কবিতা যেখানে স্থান পেয়েছে। উঠে এসেছে টোকন ঠাকুর এবং হুমায়ুন রেজার কবি হয়ে ওঠার চিত্র। আখতারুজ্জামান ইলিয়াস এবং দেবেশ রায় যেখানে বার বার ফিরে এসেছেন তাদের শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে। আলালের ঘরের দুলাল কিংবা হুতোম প্যাচার নকশা যেখানে তুলনীয় হয়ে উঠেছে বিশ্বের সেরা সাহিত্যের সাথে। খোয়াব নামা কিংবা তিস্তা পারের বৃত্তান্তকে দেখানো হয়েছে বিশ্ব সাহিত্যের অবিস্মরণীয় উপন্যাসের তালিকার শীর্ষে যেখানে আছে গ্যাবরিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ,নগীব মাহফুজ এবং গুন্টার গ্রাসের মত শ্রেষ্ঠ লেখকেরা। নোবেল পুরস্কারের ভাষনে মার্কেজ সাহিত্য নিয়ে কি বলেছিলেন সেটাও টেনে আনা হয়েছে। বাহুল্যবর্জিত এবং অসাধারণ কথামালা সাজিয়ে লেখক চিনিয়েছেন শ্রেষ্ঠ সাহিত্য ও সাহিত্যিকদের। 

শুধু মাত্র এই একটি বই পড়লেই বাংলা সাহিত্যের দিকপাল কবি ও সাহিত্যিকদের রচনা সম্পর্কে সাম্যক ধারণা পাওয়া যাবে যা একজন পাঠককে সুপাঠ্য খুজে পেতে সাহায্য করবে।আমি লেখা নিয়ে লেখা বইটি রচনার জন্য ধন্যবাদ দিতে চাই সুলেখক আনিসুল হককে। তার এই বইটি আমাদের মত পাঠকদের সেরা রচনা গুলো বেছে নিতে অনেকটাই সাহায্য করেছে। হুমায়ুন আজাদের লাল নীল দীপাবলি যদি হয় বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস তবে আনিসুল হকের লেখা নিয়ে লেখা বইটি অবশ্যই বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ট বইগুলোর পরিচয়দানকারী বলে বিবেচিত হতে বাধ্য। বইয়ে লেখক অসাধারণ পান্ডিত্য দেখিয়েছেন। কোথাও কোথাও আহমদ ছফার বয়ানে সরাসরি তুলে ধরেছেন অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাককে। বইটি তাই হয়ে উঠেছে একটি সাহিত্যপরিচয়দানকারী স্বর্ণখন্ড রুপে। 

শুধু কয়েক ছত্র লিখে সেটা বই আকারে প্রকাশ করলেই যে সাহিত্য হয়না কিংবা সাহিত্যের ভান্ডার সমৃদ্ধ করা যায়না তা এ বইয়ে লেখক যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছেন। আমাদের বাংলা সাহিত্যে যেমন জন্মেছিলেন সুকুমার রায়,সত্যজিৎরায় তেমনি এখনো লিখে চলেছেন অনেকেই। তাদের মধ্যে কারো কারো লেখা চিরকালীন সাহিত্যের মর্যাদা পেয়ে গেছে আর কেউ কেউ হারিয়ে যাচ্ছে কালের গভীরে। লেখক দেখিয়েছেন আমাদের লেখকদের অনেকের রচনাই সাহিত্যরসে ভরপুর এবং কোন কোনটা বিশ্ব সাহিত্যের শ্রেষ্ঠত্বেরও দাবীদার। জীবনানন্দের বনলতা সেন কিংবা নির্মলেন্দু গুনের হুলিয়া থেকে শুরু করে শামছুর রাহমানের আসাদের শার্ট সব গুলোই আমাদের অন্তরে প্রশান্তি এনে দিয়েছে। 

প্রতি বছর কত সংখ্যক নতুন বই বের হলো আর কত সংখ্যক নতুন লেখকের আবির্ভাব হলো সেটা পরিসংখ্যনের খাতাতেই পড়ে থাক। আপাতত আমরা লেখা নিয়ে লেখা বইয়ে তুলে ধরা বাংলা সাহিত্যের শ্রেষ্ঠ সব রচনাগুলোর সাহিত্য রসে অবগাহন করে আসি। তখন বুঝতে কারো বাকি থাকবেনা বাংলা সাহিত্য কতটা সমৃদ্ধ আর কতটা মধুর। এ সাহিত্যকেই আমাদের বিশ্ব দরবারে পৌছে দিতে হবে। যেন বিশ্ববাসী সেটা পড়ে বুঝতে পারে শুধু একজন রবীন্দ্রনাথই নয় আমাদের সাহিত্যে আরো অনেক দিকপাল সাহিত্যিক রচনা করে গেছেন এমন সব সাহিত্য কর্ম যা বিশ্বের অন্যান্য ভাষার সাহিত্য থেকে এগিয়ে আছে যোজন যোজন ব্যবধানে।
 

এস এম হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


স্বপ্নঃ মধ্যম আয়ের দেশ


............জাজাফী

যুদ্ধ বিদ্ধস্ত বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে এক সময় যারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এ দেশটিকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অভিহিত করতে দ্বিধা করেনি আজ তারাই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে এদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বুঝে উঠতে পারছেনা একটা দেশ কিভাবে তলাবিহীন ঝুড়ির তকমাকে পায়ে ঠেলে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে। এক সময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে। বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তা এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বিশেষ করে সামাজিক সূচকে বাঙলাদেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মত। তাইতো বারাক ওবামাও তার ভাষণের মধ্যভাগে উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশকে টেনে আনতে কাপর্ন্য করেনি। যত হতাশাবদীই হইনা কেন এসব দেখলে বুকটা গর্বেভরে ওঠে। আমার দেশই এখন অন্য অনেক দেশের জন্য উদাহরণ স্বরূপ এটা ভাবতেই ভাললাগার অনুভূতি ছুয়ে যায়। 

বিশ্বব্যাংক মধ্যম আয়ের দেশকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করেছে একটি হচ্ছে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ আর অন্যটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ বলে পরিচিত হবে। কিন্তু আমরা চাই প্রবৃদ্ধি নির্ভর মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পাশাপাশি আমরা সামগ্রিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে। দেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন ও স্বীকৃতি এটি। জাতি হিসেবে এটি অবশ্যই আমাদের জন্য একটি মাইলফলক ও বড় অর্জন বলে বিবেচিত হতে পারে। মধ্যম আয়ের দেশ মূলত বিশ্ব ব্যাংকের একটি শ্রেণীকরণ ছাড়া তেমন কিছু নয়। বিশ্ব ব্যাংক যেহেতু বিভিন্ন দেশকে অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে থাকে তাই এ শ্রেণী করণ। 

বাংলাদেশ যে শ্রেণীতে আছে এটির নিম্নক্রমে মাথা পিছু আয় হতে হয় ১০৪৫ ডলার এবং সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৭৪৫ যলার পর্যন্ত এ সীমা নির্ধারিত। এর বেশি হলে সেটি উচ্চ আয়ের তালিকাতে পড়ে।ভ বাংলাদেশ এ তালিকাতে আসায় বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির বিষয় যেমন অনুকূল হয়েছে বলে অনেকের ধারনা তেমনি মনে রাখা দরকার এটির মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও লক্ষ্যনীয়। সেই সাথে রয়েছে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ। বিশ্ব ব্যাংক এটলাস মেথড নামে একটি নিজস্ব পদ্ধতিতে দেশগুলোকে চারটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করেছে। বিশ্বব্যাংক মূলত কোন দেশের তিন বছরের গড় বিনিময় হারকে সমন্বয় করে,এতে করে আর্ন্তজাতিক মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হারের ওঠানামা সমন্বয় করা সম্ভব হয়। একটি দেশের স্থানীয় মুদ্রায় মোট জাতীয় আয়কে (জিনএনআই) মার্কিন ডলারে রুপান্তর করা হয়। এ কারণে আমরা দেখতে পাই বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবের সাথে বাংলাদেশ পরিসংখ্যন ব্যুরো (বিবিএস) এর হিসাবে গরমিল থাকে। বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ সরকার দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করবে বলে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা হয়েছে এবং সেই পঘে যতটা সম্ভব কাজও হয়েছে। ফলে সরকারের ১০ বছরের প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় ২০২১ সালের মধ্যে আজ থেকে ৪৪ বছর আগে স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া এই দেশটি মধ্যম আয়েল দেশ হওয়ার কথা আছে। 

মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া অবশ্যই একটি মর্যাদার বিষয়। বিশ্ব ব্যাংক যেহেতু সাহায্য দেওয়ার সবিধার জন্য এ শ্রেনীকরণটি করেছে সুতরাং এই শ্রেণীকরণের মূল উদ্দেশ্য দাড়াচ্ছে সাহায্য প্রদান প্রকল্প। তবে ১৯৬০ সালে যখন প্রথম এলডিসি ধারনাটি নিয়ে বিশ্বে আলোকপাত করা হলো তখন থেকেই বাংলাদেশ এলডিসি ভূক্ত ছিল। যদিও তালিকা প্রণয়ন হয় এগার বছর পর ১৯৭১ সালে ১৮ নভেম্বর যখন বাংলাদেশ স্বাধীনতার দ্বার প্রান্তে দাড়ানো। অবশ্য বাংলাদেশকে তালিকা ভূক্ত করা হয় ১৯৭৫ সালে যে সালটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বেদনাদায়ক স্মৃতিতে ভরপুর। স্বল্পোন্নত দেশের সেই তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা ছিল বাংলাদেশ নামক ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের। আর সে লক্ষ্যেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এখন বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে সে ধারায় এগোলে বাংলাদেশ সরকার গৃহীত লক্ষ্যমাত্রা ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবেনা। সূচকে দেখা গেছে বাংলাদেশের বর্তমান মাথাপিছু আয় ১০৮০ মার্কিন ডলার। কিন্তু এলডিসি থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে হলে প্রয়োজন হবে ১২৪২ মার্কিন ডলার। সুতরাং লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিকে আরো বাড়াতে হবে। বর্তমানে দেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬.২ শতাংশ যা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যথেষ্ট নয়। সে ক্ষেত্রে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে ৭.৫ থেকে ৮ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন বিনিয়োগ বাড়াতে হবে জিডিপির আরও ৫ শতাংশ হারে এবং সেই সাথে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি রাখতে হবে ৮ শতাংশ। এটি অর্জিত হলে বাংলাদেশ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে বানিজ্য ক্ষেত্রে বাজার সুবিধা পাবে। ২০০৬ সালে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) রুপকল্প তৈরি করে স্বাধীনতার ৫০ তম বছরে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার স্বপ্ন দেখিয়েছিল যা সরকারকে সে পথে হাটতে অনুপ্রাণিত করেছে। আর তাই আরো একধাপ সাহসী হয়ে সরকার ঘোষণা করেছে ২০২১ সালে সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে এবং দেশের প্রবৃদ্ধির হার হবে ১০ শতাংশ সেই সাথে মাথাপিছু আয় হবে ২ হাজার ডলার যা পাশ্ববর্তী দেশের মাথাপিছু আয়ের অধিক। বাংলাদেশ এ যাত্রায় অগ্রগামি পথিক হয়েছে কিছু বলিষ্ঠ কমকান্ডের মাধ্যমে। 

শিশুদের স্কুলে যাওয়া,কার্বন নিঃসরণ কমানো,শিশু মৃত্যুর হার কমানো,দারিদ্রতা কমিয়ে আনার পাশাপাশি জীবনযাত্রার ব্যায় নিম্নমূখী করা বাংলাদেশের অগ্রগতির মূল রহস্য। তবে এটুকুতেই আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোন সুযোগ নেই। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে এবং সময়ের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে আগামীতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে যার প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। পুষ্টি,স্বাস্থ্য,শিশুদের স্কুলে ভর্তি এবং শিক্ষার হারের সমন্বয় আনতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ,জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমান হ্রাস সহ বিশ্ববাজার থেকে দূরত্ব হ্রাসের জন্য ঐক্যমতের সমাজ গঠন করতে হবে। একটা দেশকে কারো একার পক্ষে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় এমনকি সেটা সরকারের একার পক্ষেও সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। 

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও মজুরী আর্ন্তজাতিক মানের করা গেলে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদি।ধ পাবে যা আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা কমিয়ে আনতে হবে। আশার কথা হচ্ছে বিরোধী দলগুলো তাদের সহিংস মনোভাব থেকে কিছুটা হলেও বেরিয়ে আসতে পেরেছে যা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। সে ক্ষেত্রৈ সরকারকে তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মানসিকতা রাখতে হবে। সবার সর্বাত্মক প্রচেষ্টাই রুপকল্পকে রুপকথার রাজ্য থেকে বাস্তবে নিয়ে আসতে পারে। সুতরাং আমরা আশা করতে পারি স্বাধীনতার ৫০ বছর পুর্তির সময় আমাদের দেশটা হবে এমন একটি দেশ যে দেশটিকে সবাই মিলে এগিয়ে নিয়ে যাবে।  

চলে এসো এক বর্ষায়





................জাজাফী

বাংলাদেশ সৌন্দর্যের লীলাভূমি বলে সারা বিশ্বেই পরিচিত।প্রাচীন কাল থেকে এদেশের গ্রামবাংলার সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়েছে বিশ্বের অগণিত পর্যটক।সুদুর চীন থেকে আসা ফা হিয়েন মুগ্ধ হয়েছেন এদেশের গ্রামের সৌন্দর্য দেখে। মুগ্ধ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন ইবনে বতুতা।এদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অপার সৌন্দর্য। সেই সব সৌন্দর্য ছাপিয়ে যায় বর্ষা কালে। বর্ষার আকাশে মেঘের আনাগোনা থাকে,সারাদিন চলতে থাকে অবিরাম বৃষ্টি।

টিনের চালে সেই বৃষ্টির ঝরে পড়ার শব্দ মনে হয় নৃত্যরত কোন কিশোরীর পায়ের নুপুরের শব্দ।বর্ষা কাল এদেশের মানুষের অতি প্রিয় একটা ঋতু।বর্ষা কালে গ্রামে গ্রামে চলে নানা রকম পিঠা পুলির আয়োজন।কোথাও কোথাও দেখা যায় জারিসারি গানের আসর বসানো হয়।ঘুম কাতুরেরা বর্ষার সময় কাথার গায়ে ঘুমের দেশে হারিয়ে যায়।সারাদিন চলে বৃষ্টির অবিরাম বর্ষন।চারদিকে পানি আর পানি।

ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা সেই বৃষ্টিতে ভিজে উল্লাসে মেতে ওঠে।অনেকেই বর্ষার মৌসুমে জাল বানাতে বসে যায় এবং যাদের জাল আছে তারা খাল বিলে মাছ ধরতে ছুটে যায়।বর্ষাকালে গ্রাম যেন ভিন্ন আঙিকে সাজে তার অপরুপ সৌন্দর্যে।কৃষকেরা বর্ষাকে ঘিরে তাদের ধানের জমি প্রস্তুত করে,আর বাড়ির মেয়েরা অনেকেই মনের মাধুরী মিশিয়ে নকশী কাথা সেলাইয়ের কাজে হাত দেয়।

গ্রামের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা দাদা দাদিকে ঘিরে বসে গল্প শোনার জন্য।শহরের সাথে গ্রামের এখানেই পার্থক্য। শহরের কংক্রিটের দালানের মধ্যে থেকে কখন বৃষ্টি আসলো আর গেল সেটা আমাদের অনেকের চোখেই পড়েনা।অপর দিকে গ্রামে বর্ষার আকাশ ক্ষণে ক্ষণে গুড়ুম করে ডেকে ওঠে আর ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা ভয় পেয়ে দৌড়ে মায়ের কোলে গিয়ে লুকায়।বৃষ্টির ছোয়া পেয়ে ঘাস থেকে শুরু করে সব কিছু সতেজ হয়ে ওঠে।

গ্রামে না গেলে তাই বর্ষার প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা সম্ভব নয়।খাল বিল পানিতে থৈ থৈ করতে থাকে আর দুরন্ত ছেলেরা সেখানে সাতার কাটতে থাকে।হাসেরা হাপুস হুপুস ডুব দেয়। হয়তো কোথাওবা পানকৌড়ি কিংবা মাছরাঙা ওৎ পেতে বসে সাথে মাছ ধরার আশায়।কিন্তু অনেকেই এখন আক্ষেপ করে বলে এখন গ্রাম পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। ক্রমাগত ভাবে আধুনিকতার ছোয়া লেগে গ্রাম হয়ে উঠছে শহরের মত।গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে,পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। ফলে এখন গ্রামেও অনাবৃষ্টি দেখা দিচ্ছে।তবে সর্বপরি এই বাংলার রুপ রস গন্ধ সবতো গ্রামেই লুকিয়ে আছে।তাইতো শিল্পীর কন্ঠে ধ্বনিত হয় যদি মন কাঁদে, তবে চলে এসো এক বরষায়। এসো ঝরো ঝরো বৃষ্টিতে,এসো জলে ভেজা দৃষ্টিতে


...................
জাজাফী
এস এম হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

শিশুর প্রতি নৃশংসতা ও আমাদের দায়িত্ব



.....................

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় সাতকোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী,রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করোনি। সত্যিই আমরা মানুষ হতে পারিনি। তাই আমাদেরই হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছে রাজন রাকিব সহ আরো কত জন।সভ্যতার মূখোশ পরে আমরা হয়ে উঠছি ক্রমাগত অসভ্য ও বর্বর।সামাজিক অবক্ষয় আর মূল্যবোধের অভাব এখন চরম পর্যায়ে পৌছেছে।হিতাহীত জ্ঞান শুন্য হয়ে পড়ছে জাতি।যে বর্বরতা আর নৃশংসতায় রাজন রাকিবকে হত্যা করা হয়েছে তা স্বয়ং সীমারের নিষ্ঠুরতাকেও ছাপিয়ে গেছে।

স্বাধীন দেশে এরকম বর্বর ঘটনা ঘটিয়ে তার ভিডিও চিত্র ধারণ করার মত দুঃসাহস যারা দেখিয়েছে তারা মানুষ ছিলনা কোন কালেও। সেই অমানুষ গুলোকে গ্রেফতার করার পরও এখনো কেন বিচার হচ্ছেনা সেটাই আশ্চর্যের বিষয়। যেখানে সুস্পষ্ট প্রমান আছে সেখানে বিচারের বিলম্বিকরণ বিচারবিভাগকেই প্রশ্নের মূখে ঠেলে দিচ্ছে।দারিদ্রতার যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে আমাদের সমাজে অনেক শিশুকেই তাদের শৈশব কৈশর জলাঞ্জলী দিয়ে বেচে থাকার সংগ্রামে নামতে হচ্ছে। জীবন যুদ্ধের সেই শিশুরাই হচ্ছে নির্যাতিত নিগৃহীত।কি অপরাধ ছিল রাজনের?রাকিবকেই বা কেন অকালে ঝরে যেতে হলো।মাগুরার ছোট্ট শিশুটি ভুমিষ্ট হওয়ার আগেই সমাজের নিষ্ঠুরতার মূখোমুখি হয়েছে।আমাদের সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার। শিশুবান্ধব পরিবেশের বড়ই অভাব। 

দারিদ্রতার কবলে কোন শিশুকে যখন তার শৈশব বিসর্জন দিয়ে শ্রমিকের জীবন বেছে নিতে হয় তখনও তাকে নানা নির্যাতনের শিকার হতে হয়।এ ছাড়া অশিক্ষা এবং আইনের দুর্বলতার কারণে অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায় বলেও অনেক অপরাধী নির্দ্বিধায় অপরাধ করতে থাকে।রাজন এবং রাকিবের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে তা কেবল নেক্কার জনকই নয় রীতিমত জঘন্য অপরাধ এবং এই অপরাধে যারা অপরাধী তাদের শাস্তি কোনভাবেই যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির থেকে কোন অংশে কম হওয়া উচিত নয়।

স্কুলের শিক্ষকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি বন্ধ করা হয়েছে তাহলে সমাজের অন্য স্তর গুলো কেন বাকি থাকবে।শিশুবান্ধব পরিবেশের নিশ্চয়তা দিতে সরকারকে কাজ করে যেতে হবে এবং শিশু অধিকার নিয়ে যারা কাজ করে তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। রাজন রাকিবের হত্যাকারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারলে সেটার ভয়াবহতা দেখে আর কোন দিন কেউ শিশুদের প্রতি নৃশংসতা দেখাতে সাহস করবেনা। শিশুরা ফুলের মত পবিত্র এবং শিশুরাই আমাদের পৃথিবীর সৌন্দর্য। সেই শিশুকে আমাদের ভালবাসতে হবে। 

শিশুদের সব অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। ক্ষুধায় জর্জরিত পৃথিবীতে শিশুটিকেতো আমরাই এনেছি, তাই তার তো কোন দোষ নেই। তবে কেন তাকে এভাবে অকালে ঝরে যেতে হবে।শিশু অধিকারের কথা শুধু মূখে বললেই হবেনা সেটাকে বাস্তবে রুপ দিতে হবে।শেখ রাসেল থেকে শুরু করে আজকের রাজন রাকিবকে যারা হত্যা করেছে তারা কেউই মানুষ নয়। সুতরাং মানুষরুপী জানোয়ারদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করে এ সমাজ থেকে নৃশংসতা সৃষ্টিকারীদের চির তরে দূর করতে হবে।যেন আর কোন রাজন রাকিবকে অকালে ঝরে যেতে না হয়।


........................
জাজাফী
এস এম হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

অতিথি




...............
..........................

যার আসার কোন নির্ধারিত সময় নেই তিনিই অতিথি।তাদের আসার সময় অসময় না থাকলেও আমরা কিন্তু ঠিকই তাদের আপায়্যনে কোন রুপ কমতি রাখিনা। তাইতো আমাদেরকে অতিথি পরায়ণ জাতি বলা হয়।এমনও দেখা যায় ঘরে চাল নেই,বসতে দেওয়ার যায়গা নেই তারপরও আমরা চাই অতিথি আসুক এবং অতিথি আসলে আমাদের সাধ্যেরও বেশি তাদের আপ্যায়ন করতে চেষ্টা করি। মাসের একটা দিন হয়তো পরিবারের চার সদস্যের জন্য চারটুকরা মাছ কিনে আনা হয়ছে। তিনজন খেতে বসেছে শুধু বাকি আছেন পরিবারের গৃহকর্তী। সেই সময়ে অতিথি আসলে তাকে সমাদর করে বসতে দেওয়া হয় এবং গৃহকর্তীর জন্য বরাদ্দ শেষ মাছের টুকরাটিও অতিথির পাতে তুলে দেয় বাঙ্গালী।ওই মাসে সেই গৃহকর্তীর ভাগ্যে আর কোন মাছের টুকরা জোটেনা, তার পরও তিনি খুশি।

এই অতিথি পরায়নতার ভীড়েও কিন্তু কিছু কিছু অতিথি আছে যাদের আগমনকে আমরা মোটেও পছন্দ করিনা। এমনকি যথেষ্ট সামর্থ থাকলেও সেই সব অনাহুত অতিথিকে আপ্যায়ন করতে গেলে আমাদের বিবেকে বাঁধে,মেজাজ খারাপ হয়। কিন্তু ওই যে বাঙ্গালী অতিথি পরায়ণ খেতাবের কারণে সেটা বাইরে প্রকাশ করতে পারেনা।ওই সব অনাহুত অতিথি বছরে দু বছরে এক দুবার আসে। কিন্তু ওই এক দুবারেই মনের মধ্যে জ্বলুনি দিয়ে যায়। গরীব চাষি আতর আলী। সারা বছর দিনে আনি দিনে খাই এভাবে খুব সুখেই চলে যায় তার। আত্মীয় পরিজন আসলে নুন ভাত যা জোটে খাওয়াতে কুন্ঠা বোধ করেনা। কিন্তু তিনি মাঝে মাঝেই বছরে দু বছরে একবার ওরকম অতিথির কবলে পড়েন। যে অতিথি তার ছনের একচালা ঘরের বারান্দায় এসে উঠে  লম্বা সালাম দিয়ে বলে চাচা ভাল আছেন। এই ভাল আছেন কথাটা শুনেও তার মনের মধ্যে খ্যাচ খ্যাচ করে।আতর আলীর বয়সতো আর কম নয়। এই অনাহুত উটকো অতিথিকে এক জীবনে অন্তত বিশ বছর ধরে আপ্যায়ন করে চলেছেন। তিনি স্থানীয় সাংসদ। ভোটের আগে আসেন আহ্লাদে গদগদ হয়ে চাচার বাড়িতে বসে চাচার মেয়ে জামাইয়ের জন্য তৈরি করা শেষ দুটো নাড়ু চিড়ে খেয়ে বিদায় হন।তিনিতো একা আসেন না, আসেন আরো কিছু সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে।

একটা হিসাব করে আতর আলী দেখলেন এই উটকো অতিথিকে আপ্যায়নে প্রতি বার যদি তার পঞ্চাশ টাকাও খরচ হয় তো বিগত বিশ বছরে তার হাজার খানেক টাকা খরচ হয়েছে। বিনীময়ে তিনি কি পেয়েছেন?স্বাধীনতার পর থেকে তিনি দেখে এসেছেন এই সব অতিথিদের। তারা আসে বড় বড় কথা বলে আর গরীবের কষ্টের টাকায় বানানো নাড়ু চিড়ে পেট পুরে খেয়ে চলে যায়।সেই কাচা রাস্তা এখনো কাচাই আছে,প্রতি বছর নাকি কয়েকশো মেগাওয়াট বিদ্যুৎ নতুন করে উৎপাদন হচ্ছে কিন্তু আতর আলীদের গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। ডিজিটাল বাংলাদেশ বলে আতর আলী একটা শব্দ শুনেছে কিন্তু তার কোন ভাবেই বিশ্বাস হয়না।তার মতে ডুমুরের ফুল যেমন কেউ দেখেনি এই তথা কথিত কয়েকশো মেগাওয়াট বিদ্যুৎও আসলে কিছু না। যদি তাই হতো তবে স্বাধীনতার পর থেকে আজ পর্যন্ততো কম বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়নি তাহলে সে গুলো গেল কোথায়। আতর আলীদের গ্রাম কিংবা তার পাশের গ্রামেও বিদ্যুৎ নেই কেন?

যে অনাহুত অতিথি মেয়ে জামাইয়ের জন্য বানিয়ে রাখা নাড়ু চিড়ে বার বার এসে খেয়ে গেছেন তিনিতো এখন শুধুই সংসদ সদস্য নন।তিনিতো আরো উপরে উঠেছেন। বাংলাদেশ ক্রিকট দল যখন স্টেডিয়ামে অন্য দলকে নাস্তানাবুদে ব্যস্ত তিনি তখন  ভিআইপি লাউঞ্জে মূখে একরাশ হাসি নিয়ে বসে থাকেন। ক্যামেরায় বার বার সেটা ধরা পড়ে। টিভিতে আতর আলীরা সেটা দেখে আর হতাশ হয়।তারা কি তবে কেবল মাত্র ওই অনাহুত অতিথির নিজের মূখের হাসি ফোটানোর জন্য তাকে নির্বাচিত করেছিল?আতর আলীরা তা বুঝে উঠতে পারেনা।

এক রাজা একবার বিলেত ভ্রমনে গিয়ে সেখানকার শহরের আলোক সজ্জা দেখে অভিভুত হয়ে দেশে এসে মন্ত্রিকে নির্দেশ দিলেন তিনি বিলেতের মত তার রাজ্যটাকেও আলোকিত করবেন।এ জন্য তিনি দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেন। মন্ত্রী তার অধঃস্থন কর্মকতার্কে রাজার নির্দেশের কথা জানালেন এবং বললেন রাজা এক কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।নির্দেশটা মাত্র একজন থেকে আরেকজনের কাছে পৌছাতেই বরাদ্দের পরিমান অর্ধেকে নেমে আসলো।সেই অধঃস্থন আবার তার নিচের কর্মকতার্কে বললেন পঞ্চাশ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে।এভাবে একে একে যখন ঘোষণাটি ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে পৌছলো তখন টাকার পরিমান দাড়ালো দশ হাজারে। যেটা দিয়ে কোনভাবেই শহর আলোকিত করা সম্ভব নয়।তাছাড়া কাউন্সিলরেরওতো একটা ভাগ থাকা উচিত। তাই ওয়ার্ড কাউন্সিলর বাড়ি বাড়ি গিয়ে রাজার নির্দেশ শোনালেন যে রাজা চান প্রতিটি বাড়ির আঙ্গিনা আলোকিত হোক। সবাই কালকের মধ্যে নিজ নিজ আঙ্গিনায় আলোকসজ্জা করবেন।নির্দেশ মত সত্যি সত্যিই পুরো রাজ্য আলোকিত হলো। 

রাজা খুশি হলেন তার মন্ত্রী কর্মচারিদের কাজে।কিন্তু তিনি কোনদিন জানতেও পারলেন না তার বরাদ্দকৃত দুই কোটি টাকা কিভাবে খরচ হলো।আতর আলীরা অনাহুত অতিথি আপ্যায়নে যথেষ্ট খরচ করেছেন,বিনিময়ে পাননি কিছুই। আজীবন অন্ধকারে থেকেছেন আর হেটেছেন কর্দমাক্ত পথে।অনাহুত অতিথি সেই সব আতর আলীদের পিঠে পা রেখে মন্ত্রীত্ব বরণ করছেন।তাই বলে আতর আলীরা এখন আর অন্ধকারে নেই।

রাজার আদেশ যেভাবে পালিত হয়েছিল ঠিক সেভাবে না হলেও আতর আলীরা সৌরবিদ্যুৎ লাগিয়ে নিয়েছেন।সামনেতো দিন আসছে। অনাহুত অতিথি আবার আসবে, তাকেতো আর অন্ধকারে আপ্যায়ন করা যাবেনা। আর তা ছাড়া অতিথি নির্লজ্জ হতে পারেন কিন্তু গ্রামের সহজ সরল আতর আলীরাতো নির্লজ্জ নয়।


..........................
জাজাফী
এস এম হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ইমেইলঃ zazafee@yahoo.com

গণিত ক্লাসে একদিন






আব্দুল স্যার ক্ল্যাসে আসলেই সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা তোলেন। উনি গণিতের শিক্ষক অথচ এমন ভাবে কথা বলেন যেন উনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান কিংবা সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক। গত কাল ক্লাসে এসেই প্রথমে লেকচার শুরু করলেন বুঝলি আবারতো মধ্য প্রাচ্য তেলের দাম বাড়িয়ে দিল। নে সবাই একটা অংক কর। যদি তেলের মুল্য লিটারে ছয়টাকা বাড়ানো হয় তবে কি পরিমান খরচ কমালে একটা পরিবারের তেলের খরচ আগের মত থেকে যাবে। 

স্যারের বলা শেষ হতে না হতেই জামিল উঠে দাড়ালো। স্যার অংক করতে পারবোনা তবে উত্তরটা বলতে পারবো। স্যার জানতেন জামিল দুষ্টুর দুষ্টু। তিনি বললেন তা শুনি আমাদের পন্ডিত মহাশয়ের উত্তর। জামিল বললো তেলের দাম বেড়েছে খরচ কমাতে হবে এমন ভাবে যেন আগের খরচরে সমান থাকে। আচ্ছা স্যার আগে যেন কত খরচ হতো? ওর কথা শুনে স্যারতো রেগে আগুন। আগে কত খরচ হতো তা কে জানে? ধর চল্লিশ টাকা। জামিল বললো তাহলে স্যার চল্লিশ থেকে ছয় বাদ দিলে চৌত্রিশ টাকার তেল কিনলেই খরচ আগের সমান থেকে যাবে। 

স্যারের অংক করানোর মুড চলে গেল। তিনি ক্লাসের সবাইকে বললেন আজ আর অংক করাবোনা। যে অংকটা বলেছি এর ওপর সবাই মতামত দাও। এবার উঠে দাড়ালো মহান। নামেই মহান কাজে লাপাত্তা। সে বললো স্যার যখন রান্না করবো তার কিছুক্ষন আগে কেউ একজন তেলের বোতলটা অন্য কোথাও লুকিয়ে রেখে আসলে তেল খরচ বেচে যাবে! স্যার একে একে নির্বাক হয়ে সবার কথা শুনতে লাগলেন। 

এবার অনীক উঠে দাড়ালো। মনে হচ্ছিল উঠতে তার বেশ কষ্ট হচ্ছে। সে বললো স্যার স্যার তেলের মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তো কি হয়েছে ঘুষ বেশি করে খেলেইতো খরচ নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা। আমাদের ক্লাসের বিজ্ঞানী জিহাদ বললো স্যার এতো কিছুর দরকার নেই রান্নার সময় চুলার পাশে তেলের বোতলের সিপি খুলে রাখলেইতো হলো। রান্না হবে আর তার সাথে তেলের একটা আন্তঃনাক্ষত্রিক যোগাযোগ হবে। এর ফলে যে বিক্রিয়া করবে তা নিউটনের তৃতীয় সুত্র মতে..........ওর বলা আর শেষ হলোনা স্যার ওকে থামিয়ে দিলেন। 

রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় আমাদের নিনাদ। এবার নিনাদ বলে উঠলো স্যার এটা ভারি অন্যায় সময় নেই অসময় নেই ইচ্ছে হল আর মধ্যপ্রাচ্য তেলের দাম বাড়িয়ে দেবে?এটা হতে পারেনা। তেলের দাম এভাবে বাড়লেতো আমাদের গণিতও পাল্টে যাবে। এতে করে ছাত্রছাত্রীদের চিন্তা শক্তি কমে যাবে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। রাজনীতিবিদের কথা শেষ হলে স্যার বললেন আচ্ছা করতে দিলাম অংক তা তোরা করলিনা আউল ফাউল উত্তর দিতে শুরু করলি আমি তাও মেনে নিলাম। কিন্তু তোর এই উত্তরের সাথে অংকটারতো কোন সম্পর্কই দেখতে পেলাম না। পাশ থেকে নিলয় বলে উঠলো স্যার সম্পর্ক আছে। ও দেখেন না কি মোটাসোটা। পেটেতো তেল জমেছে। ওর বাবা ওকে কষে একটা ধমক দিয়েছে। বলেছে দিন দিন বসে বসে খেয়ে তেল বৃদ্ধি করছো?তোমার তেল বাড়ানো কমাচ্ছি।  

 এবার উঠে দাড়ালো ইফতি। ও বললো স্যার তেলের দাম বৃদ্ধি পাওয়া এবং খরচ আগের মত রাখা ও দুটো এক করে সমাধান করতে অনেক কষ্ট হবে। এখন সবচেয়ে সহজ হবে যদি আমরা তেলের বদলে অন্য কিছু দিয়ে রান্না করি। আব্দুল স্যার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাড়ালেন। ঘন্টা পড়ে গেছে। আজ তিনি কিছুই পড়াতে পারলেন না। তেলের দাম বেড়েছে কি করে তিনি পড়াবেন? ক্লাসের প্রায় সবাই কিছুনা কিছু বলেছে শুধু আমি কিছু বলিনি। স্যারের সেটা হঠাৎ খেয়াল হলো। স্যার বললেন কিরে তুই কিছু বললিনা যে? 

আমি বললাম স্যার আমি স্বর্গ। আমারতো তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। আমার এখানেতো সব সময় সব কিছুই ফ্রি।আমার বোন পুন্যকে নিয়ে স্বর্গ সুখেই আছি। স্যার আরো একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন স্বর্গতো স্বর্গ সুখেই আছে। তোরা দেখ তেলের বদলে অন্য কিছু আবিস্কার করতে পারিসকিনা যা দিয়ে রান্না করা যাবে।


জাজাফী
এস এম হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


সন্ত্রাসবাদ




আধুনিক সভ্যাতার চরম উৎকর্ষতার এই যুগে বিশ্বের প্রায় তিনশোকোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে। বর্তমান বিশ্ব ক্ষুধা,দারিদ্র,অপুষ্টি,নিরক্ষরতা,জনসংখ্যার বিস্ফোরণ ইত্যাদি সমস্যায় জর্জরিত। কিন্তু সব কিছুকে ছাপিয়ে আলোচনার শীর্ষে সন্ত্রাসবাদ। যা গোটা বিশ্বকে অস্থির করে তুলেছে। যেহেতু সন্ত্রাসবাদের সবর্জন স্বীকৃত কোন সংজ্ঞা নেই তাই কারা সন্ত্রাসী বা কারা সন্ত্রাসী নয় তা নিরুপন করা বেশ দুরুহ।বলা হয়ে থাকে “One Mans Terrorist is another mans Freedom Fighter” অর্থাৎ যে একজনের কাছে সন্ত্রাসী সে অন্যজনের কাছে মুক্তিযোদ্ধা। যেমন কশ্মীরীদের স্বাধীনতা আন্দোলন ভারতের কাছে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসবাদ। 

কিন্তু মুসলিম বিশ্ব সহ অনেকের কাছে তারা স্বাধীনতাকামী। তাদের যৌক্তিক দাবী খোদ জাতিসংঘ কর্তৃক স্বীকৃত।অনুরুপ ভাবে ইসরাইলি বাহিনী যখন নিরস্ত্র ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়ে নিরাপরাধ লোকদের হত্যা করে, তাদের বাড়ি ঘর ধ্বংস করে তখন তা বিবেচিত হয় আত্মরক্ষার অধিকার হিসেবে । পক্ষান্তরে ফিলিস্তিনিরা পাল্টা আক্রমন করলে তা সন্ত্রাসবাদ বলে উচ্চবাচ্য করা হয়। 

মার্কিন তাবেদারী না করলে কতিপয় রাষ্ট্র হয় সন্ত্রাসীদের মদদদাতা।পক্ষান্তরে কন্ট্রাবিদ্রোহীদের সহ বিভিন্ন গুপ্তহত্যা ও গণহত্যার জন্য মার্কিনীরা যখন সামরিক সহায়তা দেয় তখন তাদেরকে সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করা হয়না। এই কথা বলে সভ্যতার মূখোশ পরা যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের মত একটি রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছে। মূলত যতদিন পযন্ত বিশ্বে মৌলিক মানবাধিকার ও সবার জন্য ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত না হবে ততদিন পযন্ত সন্ত্রাসী ও সন্ত্রাসবাদের সীমারেখা নিরুপন সম্ভব হবেনা।সন্ত্রাসবাদ বা Terrorism শব্দটির উদ্ভব হয় ফ্রান্সে ১৭৮৯-১৭৯৯ সালে ফরাসী বিপ্লব চলাকালীন সময়ে। এ সময়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া চালু এবং জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা প্রবর্তনের লক্ষ্যে The Regime de La Terreur (Reign of Terror) নামে একটি বিশেষ পরিষদ গঠিত হয়। কিন্তু ফরাসী বিপ্লবের তীব্রতা বাড়ার সাথে সাথে মাত্রাতিরিক্ত বাড়াবাড়ি এবং সহিংস কর্মকান্ডের জন্য এই Terror রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের হাতিয়ারে পরিণত হয়। মনে করা হয়ে থাকে ঠিক তখন থেকে Terror  শব্দটি নেতিবাচক ভাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। সন্ত্রাসবাদের সংজ্ঞা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে। 

ব্রায়ান জেংকিন্সের মতে “রাজনৈতিক পরিবর্তন সাধনের উদ্দেশ্যে শক্তির প্রয়োগ বা শক্তি প্রয়োগের হুমকিই সন্ত্রাসবাদ”। অনেকেই মনে করেন সন্ত্রাসবাদের কারণ নিয়ে আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক। কারণ সন্ত্রাস একটি অশুভ শক্তি এবং একে নিমূর্ল করাই মূল কথা। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা মনে করেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালালে তা আরো সন্ত্রাসের জন্ম দেবে।
কেননা রাজনৈতিক,সামাজিক,সাংস্কৃতিক এমনকি ধমীর্য় কারণেও সন্ত্রাসবাদের জন্ম হতে পারে। অনেক ধমীর্য় গোষ্ঠী আছে যাদের ধারনা তাদের বিরোধীদের হত্যা করে নির্মূল করতে পারা পুন্যের কাজ। তেমনি অনেক উগ্রপন্থী খ্রিষ্ঠান ও এটাকে Crusade বা পবিত্র ধর্মযুদ্ধ মনে করেন। ফলে এরাই জড়িয়ে পড়ে সন্ত্রাসবাদে। কখনো কখনো ধর্মীয় মূলনীতির অপব্যাখ্যার ফলে সৃষ্টি হয় ধর্মীয় উগ্রবাদ যা ক্রমান্বয়ে সন্ত্রাসবাদের দিকে ধাবিত করে। বাস্তবতা আরো কঠিন। 

আমরা কেবল সন্ত্রাসবাদ সন্ত্রাসবাদ করে করে গলা ফাটাই। সন্ত্রাসবাদকে চিরতরে মিটিয়ে দেওয়ার জন্য লাখ লাখ নিরীহ মানুষকেও হত্যা করতে দ্বিধা করিনা। কিন্তু কখনো ভেবে দেখিনা কেন সন্ত্রাসবাদের জন্ম হয়। এটা ভুলে গেলে চলবেনা যে বৃহৎ রাষ্ট্রগুলো যখন তাদের বন্ধু রাষ্ট্রগুলোকে অন্যায় কর্মকান্ডে অর্থনৈতিক ও সামরিক মদদ যোগায় তখন প্রায় নিরস্ত্র নিযাতিত জনগণ অনন্যোপায় হয়ে সন্ত্রাসের পথ বেছে নেয়। এর জ্বলন্ত উদাহরণ হচ্ছে মাকির্নীদের ইসরাইলকে অনৈতিক কাজেও আর্থিক সমর্থন যোগানো। এর ফলে ইসরাইলরাই আক্রান্ত হচ্ছেনা খোদ আমেরিকাকেও চরম মূল্য দিতে হচ্ছে।বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে শুধু ধর্ম ও বর্ণের কারণে অনেক মানুষ প্রতিনিয়ত বৈষম্য ও নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে। কোন অঞ্চলের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় যখন ধর্মীয় ও বর্ণবাদী কারণে তাদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয় তখন মারাত্মক সামাজিক অসন্তোষ ও সন্ত্রাসবাদের জন্ম হয়। 

অপেক্ষাকৃত দুবর্ল রাষ্ট্রগুলোর ওপর ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রগুলোর আগ্রাসন ব্যপক সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিয়ে গোটা বিশ্বকে বিপজ্জনক করে তুলেছে। ঠান্ডা লড়াইয়ের যুগে আমরা এর বিকাশ লক্ষ্য করেছি। এমনকি একবিংশ শতাব্দীতে সভ্যতার চরম উৎকর্ষতার এই যুগে যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আফগানস্তান,ইরাক সহ বিভিন্ন দেশে চালানো আগ্রাসন  গোটা বিশ্বকে সন্ত্রাসবাদের লীলাভূমিতে পরিণত করেছে।ফলে জন্ম নিয়েছে তালেবান,আলকায়দা কিংবা আইএসের মত সংগঠনগুলো। 

যুক্তরাজ্যের লিচেষ্টরশায়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এন্ড্রু সিল্কের মতে, পাল্টা সন্ত্রাস তথা সন্ত্রাসের মাধ্যমে সন্ত্রাস দমননীতির ফলে সন্ত্রাসবাদ বন্ধ হওয়াতো দূরের কথা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। প্রতিটি সুস্থ বিবেক সম্পন্ন মানুষ সন্ত্রাসবাদকে ঘৃণা করে। কিন্তু পরিস্থিতির কারণে তারা বাধ্য হয়ে সন্ত্রাসের আশ্রয় নেয়।তাই যেসব পরিস্থিতির কারণে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের জন্ম হয় সেসব চিহ্নিত করে তা প্রতিকারের ব্যবস্থা করতে পারলেই কেবল সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করা সম্ভব।

 বিশ্ব এখন এমন এক সময় পার করছে যখন সন্ত্রাস মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী।অধিকার হারা মানুষ অধিকারের জন্য সন্ত্রাসের পথ বেছে নিচ্ছে। বিশ্ব ব্যাপী অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। আর সেই মানুষের অধিকার কেড়ে নিয়ে তাদের সন্ত্রাসের পথে ঠেলে দিয়ে আবার সন্ত্রাস দমনের নামেও রাষ্ট্র নিজেই সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছে।

 মানুষ কখনো সন্ত্রাসী হয়ে জন্মায়না, পরিস্থিতিই তাকে সন্ত্রাসী করে তোলে। তাই বিশ্বব্যপী সন্ত্রাসবাদ বিস্তারের কারণ গুলো চিহ্নিত করে প্রতিকার মূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।বিশ্বের প্রতিটি মানুষের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত হলে সন্ত্রাসবাদ আপনাআপনি কমে যাবে।মাহাত্মাগান্ধীর ভাষায় “চোখের বদলে চোখ নেওয়ার রীতি গোটা জাতিকে অন্ধ করে দিচ্ছে”।আমরা একটি শান্তিময় বিশ্বের স্বপ্ন দেখি। আগামীর বিশ্ব হোক সন্ত্রাস মুক্ত। নূর হোসেন বেঁচে থাকলে হয়তো নতুন করে বুকে পিঠে লিখতেন “সন্ত্রাসবাদ নিপাত যাক,গোটা বিশ্ব শান্তি পাক”।

……………..
জাজাফী
এস এম হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ইমেইলঃ zazafee@yahoo.com   

মুক্ত আকাশ এখন যে তার

সকাল থেকে সন্ধ্যাবধি যার ছবিটা দেখি
ভুলেও কভু আমার কথা মনে করে সে কি।

এখন সেতো ব্যস্ত ভীষণ চারদিকে তার সুখ
কেন তবে কোন দুঃখে সে দেখবে আমার মূখ।

আকাশ নীলে তাকিয়ে থাকার সময় যে তার নেই
আকাশটাকেও ছাপিয়ে যাবে হয়তো অচিরেই।

সে তো আমার আকাশ ভরা তারার মাঝে চাঁদ
তার জোছনায় মুগ্ধ আমি পাগল ও উন্মাদ।
......................জাজাফী
২৬ আগষ্ট ২০১৫ রাত ৩.০৯

স্বপ্নঃ মধ্যম আয়ের দেশ




............জাজাফী

যুদ্ধ বিদ্ধস্ত বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে এক সময় যারা দীর্ঘশ্বাস ফেলে এ দেশটিকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে অভিহিত করতে দ্বিধা করেনি আজ তারাই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে এদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বুঝে উঠতে পারছেনা একটা দেশ কিভাবে তলাবিহীন ঝুড়ির তকমাকে পায়ে ঠেলে তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে। এক সময়ের তলাবিহীন ঝুড়ি বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পথে। বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তা এখন বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বিশেষ করে সামাজিক সূচকে বাঙলাদেশের অগ্রগতি চোখে পড়ার মত। তাইতো বারাক ওবামাও তার ভাষণের মধ্যভাগে উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশকে টেনে আনতে কাপর্ন্য করেনি। 

যত হতাশাবদীই হইনা কেন এসব দেখলে বুকটা গর্বেভরে ওঠে। আমার দেশই এখন অন্য অনেক দেশের জন্য উদাহরণ স্বরূপ এটা ভাবতেই ভাললাগার অনুভূতি ছুয়ে যায়। বিশ্বব্যাংক মধ্যম আয়ের দেশকে দুটি শ্রেণীতে ভাগ করেছে একটি হচ্ছে নিম্ন মধ্য আয়ের দেশ আর অন্যটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। বাংলাদেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ বলে পরিচিত হবে। কিন্তু আমরা চাই প্রবৃদ্ধি নির্ভর মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার পাশাপাশি আমরা সামগ্রিক উন্নয়নের পথে অগ্রসর হতে। দেশের ধারাবাহিক অর্থনৈতিক উন্নয়নেরই প্রতিফলন ও স্বীকৃতি এটি। 

জাতি হিসেবে এটি অবশ্যই আমাদের জন্য একটি মাইলফলক ও বড় অর্জন বলে বিবেচিত হতে পারে। মধ্যম আয়ের দেশ মূলত বিশ্ব ব্যাংকের একটি শ্রেণীকরণ ছাড়া তেমন কিছু নয়। বিশ্ব ব্যাংক যেহেতু বিভিন্ন দেশকে অর্থনৈতিক সহায়তা দিয়ে থাকে তাই এ শ্রেণী করণ। বাংলাদেশ যে শ্রেণীতে আছে এটির নিম্নক্রমে মাথা পিছু আয় হতে হয় ১০৪৫ ডলার এবং সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৭৪৫ যলার পর্যন্ত এ সীমা নির্ধারিত। এর বেশি হলে সেটি উচ্চ আয়ের তালিকাতে পড়ে।ভ বাংলাদেশ এ তালিকাতে আসায় বিশ্ব ব্যাংক কর্তৃক বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তির বিষয় যেমন অনুকূল হয়েছে বলে অনেকের ধারনা তেমনি মনে রাখা দরকার এটির মনস্তাত্ত্বিক প্রভাবও লক্ষ্যনীয়। সেই সাথে রয়েছে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ। 

বিশ্ব ব্যাংক এটলাস মেথড নামে একটি নিজস্ব পদ্ধতিতে দেশগুলোকে চারটি ভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত করেছে। বিশ্বব্যাংক মূলত কোন দেশের তিন বছরের গড় বিনিময় হারকে সমন্বয় করে,এতে করে আর্ন্তজাতিক মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হারের ওঠানামা সমন্বয় করা সম্ভব হয়। একটি দেশের স্থানীয় মুদ্রায় মোট জাতীয় আয়কে (জিনএনআই) মার্কিন ডলারে রুপান্তর করা হয়। এ কারণে আমরা দেখতে পাই বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবের সাথে বাংলাদেশ পরিসংখ্যন ব্যুরো (বিবিএস) এর হিসাবে গরমিল থাকে। বেশ কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশ সরকার দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করবে বলে যে পদক্ষেপ নিয়েছে তা নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা হয়েছে এবং সেই পঘে যতটা সম্ভব কাজও হয়েছে। ফলে সরকারের ১০ বছরের প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় ২০২১ সালের মধ্যে আজ থেকে ৪৪ বছর আগে স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়া এই দেশটি মধ্যম আয়েল দেশ হওয়ার কথা আছে। মধ্যম আয়ের দেশ হওয়া অবশ্যই একটি মর্যাদার বিষয়। 

বিশ্ব ব্যাংক যেহেতু সাহায্য দেওয়ার সবিধার জন্য এ শ্রেনীকরণটি করেছে সুতরাং এই শ্রেণীকরণের মূল উদ্দেশ্য দাড়াচ্ছে সাহায্য প্রদান প্রকল্প। তবে ১৯৬০ সালে যখন প্রথম এলডিসি ধারনাটি নিয়ে বিশ্বে আলোকপাত করা হলো তখন থেকেই বাংলাদেশ এলডিসি ভূক্ত ছিল। যদিও তালিকা প্রণয়ন হয় এগার বছর পর ১৯৭১ সালে ১৮ নভেম্বর যখন বাংলাদেশ স্বাধীনতার দ্বার প্রান্তে দাড়ানো। অবশ্য বাংলাদেশকে তালিকা ভূক্ত করা হয় ১৯৭৫ সালে যে সালটি ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের অন্যতম বেদনাদায়ক স্মৃতিতে ভরপুর। স্বল্পোন্নত দেশের সেই তালিকা থেকে বেরিয়ে আসার আপ্রাণ চেষ্টা ছিল বাংলাদেশ নামক ক্ষুদ্র রাষ্ট্রের। আর সে লক্ষ্যেই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। 

এখন বাংলাদেশের অর্থনীতি যেভাবে এগোচ্ছে সে ধারায় এগোলে বাংলাদেশ সরকার গৃহীত লক্ষ্যমাত্রা ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবেনা। সূচকে দেখা গেছে বাংলাদেশের বর্তমান মাথাপিছু আয় ১০৮০ মার্কিন ডলার। কিন্তু এলডিসি থেকে পুরোপুরি বেরিয়ে আসতে হলে প্রয়োজন হবে ১২৪২ মার্কিন ডলার। সুতরাং লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হলে বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিকে আরো বাড়াতে হবে। বর্তমানে দেশে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার ৬.২ শতাংশ যা লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য যথেষ্ট নয়। সে ক্ষেত্রে জিডিপির প্রবৃদ্ধির হার বাড়িয়ে ৭.৫ থেকে ৮ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। অর্থনীতিবিদরা মনে করেন বিনিয়োগ বাড়াতে হবে জিডিপির আরও ৫ শতাংশ হারে এবং সেই সাথে প্রবাসী আয়ে প্রবৃদ্ধি রাখতে হবে ৮ শতাংশ। 

এটি অর্জিত হলে বাংলাদেশ উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশ থেকে বানিজ্য ক্ষেত্রে বাজার সুবিধা পাবে। ২০০৬ সালে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) রুপকল্প তৈরি করে স্বাধীনতার ৫০ তম বছরে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার স্বপ্ন দেখিয়েছিল যা সরকারকে সে পথে হাটতে অনুপ্রাণিত করেছে। আর তাই আরো একধাপ সাহসী হয়ে সরকার ঘোষণা করেছে ২০২১ সালে সে লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হবে এবং দেশের প্রবৃদ্ধির হার হবে ১০ শতাংশ সেই সাথে মাথাপিছু আয় হবে ২ হাজার ডলার যা পাশ্ববর্তী দেশের মাথাপিছু আয়ের অধিক। বাংলাদেশ এ যাত্রায় অগ্রগামি পথিক হয়েছে কিছু বলিষ্ঠ কমকান্ডের মাধ্যমে। 

শিশুদের স্কুলে যাওয়া,কার্বন নিঃসরণ কমানো,শিশু মৃত্যুর হার কমানো,দারিদ্রতা কমিয়ে আনার পাশাপাশি জীবনযাত্রার ব্যায় নিম্নমূখী করা বাংলাদেশের অগ্রগতির মূল রহস্য। তবে এটুকুতেই আত্মতুষ্টিতে ভোগার কোন সুযোগ নেই। ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে এবং সময়ের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশকে আগামীতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে যার প্রস্তুতি নিতে হবে এখন থেকেই। পুষ্টি,স্বাস্থ্য,শিশুদের স্কুলে ভর্তি এবং শিক্ষার হারের সমন্বয় আনতে হবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ,জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরিমান হ্রাস সহ বিশ্ববাজার থেকে দূরত্ব হ্রাসের জন্য ঐক্যমতের সমাজ গঠন করতে হবে। একটা দেশকে কারো একার পক্ষে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় এমনকি সেটা সরকারের একার পক্ষেও সম্ভব নয়। সে ক্ষেত্রে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে কাজ করতে হবে। 

যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তা ও মজুরী আর্ন্তজাতিক মানের করা গেলে বিদেশী বিনিয়োগ বৃদি।ধ পাবে যা আমাদের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে। রাজনৈতিক অস্থিরতা কমিয়ে আনতে হবে। আশার কথা হচ্ছে বিরোধী দলগুলো তাদের সহিংস মনোভাব থেকে কিছুটা হলেও বেরিয়ে আসতে পেরেছে যা দেশের সার্বিক পরিস্থিতি উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। সে ক্ষেত্রৈ সরকারকে তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপনের মানসিকতা রাখতে হবে। সবার সর্বাত্মক প্রচেষ্টাই রুপকল্পকে রুপকথার রাজ্য থেকে বাস্তবে নিয়ে আসতে পারে। সুতরাং আমরা আশা করতে পারি স্বাধীনতার ৫০ বছর পুর্তির সময় আমাদের দেশটা হবে এমন একটি দেশ যে দেশটিকে সবাই মিলে এগিয়ে নিয়ে যাবে।