যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে


==========================
জাতীয় যাদুঘরের নলীনিকান্ত ভট্রশালী প্রদর্শনী কক্ষের বাইরে লাল ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।সামনে বেশ সুন্দর করে তাজা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দুর থেকে ভেসে আসছে রবীন্দ্র সঙ্গীত। সর্ব সাধারনকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছেনা কারণ তখনো মধ্যমণি এসে পৌছান নি। সাংবাদিকদের সাথে যাদুঘরের কিউরেটর কথা বললেন। আমি সময়ের একটু আগেই পৌছেছি। সাধারণত এসব প্রোগ্রামের একটুও আমি মিস করতে চাইনা।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ইন্দিরাগান্ধী সংস্কৃতি কেন্দ্র এবং রবীন্দ্র একাডেমীর যৌথ আয়োজনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একক চিত্রকলা প্রদর্শনী এবং গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ছিল সেটা। উপস্থিত হলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং আসাদুজ্জামান নূর। তার পাশে প্রফেসর এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যার। একটু দূরে দাড়ানো শিল্পী হাশেম খান এবং নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দুমজুমদার। ফিতা কেটে যেমন বর কনের বাড়িতে প্রবেশ করে তেমনি অতিথিদের নিয়ে আবুল মাল আব্দুল মুহিতও ফিতা কাটলেন। গায়ে গা ঘেষে দাড়িয়েছিলাম আমি। অবাক হয়ে ভাবছিলাম এই বয়সেও তিনি এতো তারুন্যের উদ্দীপনা কোথা থেকে পান।

ঘুরে ঘুরে রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবি দেখলেন। যাদুঘরের মহাপরিচালক বিভিন্ন ছবি সম্পর্কে বর্ণনা দিলেন। বক্তৃতা পর্বে খুব সংক্ষেপে মন্ত্রী তার অনুভূতি ব্যক্ত করলেন। ওখানে না গেলে জানা হতোনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত শত ছবি একেছেন। কবির যখন বয়স ৬৩ বছর তখন তিনি প্রথম ছবি আঁকা শুরু করলেন। বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে তিনি ছবি একেছেন।
সুদুর কোলকাতা থেকে এসছেন প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী প্রমিতা মল্লিক। উপস্থিত ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংগীত শিল্পী প্রখ্যাত রবীন্দ্র গবেষক জন থর্প। জন থর্প উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করেছেন। অসাধারণ বাংলা বলেন তিনি। সেই সাথে তার গানের গলাও অসাধারণ। তিনি রবীন্দ্রনাথকে ভালবেসেছেন অন্য যে কারো চেয়ে বেশিই। তাই তিনি সুর লয় ঠিক রেখে রবীন্দ্রনাথের অনেক গান ইংরেজীতে অনুবাদ করেছেন যা থেকে দু একটা তিনি গেয়ে শুনিয়েছেন। তিনি মনে করেন রবীন্দ্রনাথ তখনি বিশ্ব কবি হবেন যখন তার অসাধারণ সব লেখা ভিন্ন ভাষাভাষিদের হাতে পৌছানো যাবে। যদি অন্যরা নাই জানতে পারলো রবীন্দ্রনাথ কি লিখেছেন তবে তাদের চোখে তিনিতো কোন দিনই বিশ্বকবি হবেন না।

আমাদের মুগ্ধতা যেন কাটতেই চায়না। ১৯৮০ সালে তিনি যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন তখন রবীন্দ্রনাথের নামই শোনেন নি। সেই তিনিই বিগত আঠার বছর ধরে রবীন্দ্রনাথে ডুবে আছেন। আক্ষেপ করে বলেছেন রবীন্দ্রনাথ অসংখ্য গান লিখেছেন কিন্তু সবাই তার থেকে বেছে বেছে চল্লিশ পঞ্চাশটা গানই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে গায়। বাকি গানগুলো আজীবন আড়ালেই থেকে যায়।
রবীন্দ্র একাডেমী আয়োজন করে প্রফেসর আনিসুজ্জামান,প্রমিতা মল্লিক এবং জন থর্পকে সংবর্ধনা দেয়। এর পর উপস্থিত হন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। তিনি মঞ্চে না উঠে দর্শক সারিতে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। 

সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় ‪#‎তক্ষশীলা‬ বিদ্যা নিকেতনের ক্ষুদে বন্ধুদের রবীন্দ্রনাথে মুগ্ধ হয়ে অসাধারণ উপস্থাপনায়। অরিত্ররা এতো অসাধারণ ভাবে রবীন্দ্রনাথকে তুলে ধরেছে যে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপস্থিত থাকলে উঠে দাড়িয়ে পিচ্চিগুলোকে সাধুবাদ জানাতেন। রফিকুল ইসলামের সংগীত পরিবেশনা এবং জয়ন্ত চট্টপাধ্যয়ের আবৃত্তিকে ছাপিয়ে তাই সবার মনে স্থান করে নেয় অরিত্র নামের আট বছরের ছেলেটি ও তার দলের বাকি এগারজন সদস্য।
যাদু ঘর থেকে বেরিয়ে যখন টিএসসির দিকে যাচ্ছি তখনো কানে বাজছে রবীন্দ্রনাথ "যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে"
সন্ধ্যায় যখন মৃত্তিকাদের সাথে সাক্ষাত হলো তখনো যেন আমি রবীন্দ্রনাথে আচ্ছন্ন ছিলাম।

এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে বাসায় বাসায় ফেরার আগেই রেজাল্ট দিয়ে দিল!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!!


............
‪#‎জাজাফী‬
..................
এস এস সি পরীক্ষা শেষ করে বাসায় পৌছানোর আগেই রেজাল্ট বেরিয়ে গেল। বিশ্বাস হচ্ছেনা তাইনা? ঠিক আছে বলছি তাহলে সেই ঘটনাটা । অন্তরা আর তন্ময় দুই ভাই বোন। তন্ময় বড় আর অন্তরা ছোট। ভিকারুননিসা নুন স্কুল থেকে অন্তরা এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। ওদের বাসা উত্তরাতে। ঢাকা শহরের যানজটের অবস্থা দিন দিন ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। তাই কোন রিস্ক না নিয়ে পরীক্ষা চলাকালিন সময়টাতে অন্তরাকে নিয়ে তন্ময় ওর খালামনির বাসায় উঠেছে। খালামনির বাসা সেগুনবাগিচায়। যেখান থেকে অন্তরার পরীক্ষার কেন্দ্র পায়ে হাটা দূরত্ব। নানা ঝামেলার মধ্য দিয়ে আজ পরীক্ষা শেষ হয়েছে, তাই খালামনির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তন্ময় ছোট বোনটাকে নিয়ে উত্তরায় নিজেদের বাসার দিকে রওনা হল। খালামনির বাসা থেকে বেরিয়ে একটা ভাল মানের এসি বাসে উঠে বসেছে। অন্তরা বসেছে জানালার ধারে। 

বাসে উঠতে না উঠতেই বাস দাড়িয়ে গেল। যে ভয়ে অন্তরাকে নিয়ে খালামনির বাসায় উঠেছিল সেই জ্যাম লেগেছে। আধা ঘন্টা হয়েছে গাড়িতে উঠেছে কিন্তু গাড়ি দশ হাতও সরেনি। যাত্রীদের চোখে মূখে বিরক্তির ছাপ। এর মাঝেই এক পত্রিকার হকার উঠলো পত্রিকা বিক্রি করতে। যাত্রীদের আর কিছু করার ছিলনা তাই প্রায় সবাই পত্রিকা কিনলো আর দেখতে দেখতে ছোট্ট ছেলেটার হাতের সব গুলো পত্রিকা বিক্রি হয়ে গেল। তন্ময় ছেলেটাকে ডাক দিলো, এই ছেলে শোন। ছেলেটা তন্ময়ের সামনে এসে দাড়ালো। ওর নাম উৎসব। তন্ময় বললো তোর নামটাতো সুন্দর আর আজকে তো দেখছি সত্যিই তোর উৎসবের দিন। তোর সব পত্রিকাতো বিক্রি হয়ে গেলরে। নিশ্চই অনেক লাভ হয়েছে। এগার বছরের উৎসব তখন অনেকটা হতাশ হয়ে বললো “আর কইয়েন না ভাইজান সব গুলান বেইচ্চা লাভ অইচে চারশো টিহা,সব হিসাব করলে আমার লাভ কিন্তু মাত্র একশো টিহা”। 

অন্তরা আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইলো কিভাবে? তখন সে অন্তরার দিকে ঝুকে চুপিচুপি বললো “ আফা কাউরে কইয়েন না কিন্তু এই যে জ্যাম অইছে এইডা কিন্তু আমাগো চুক্তির জন্যি হইছে”। অন্তরা আরো বেশি আশ্চর্য হয়ে জানতে চাইলো জ্যাম কিভাবে চুক্তির জন্য হয়? ছেলেটা তখন বললো “মালিক সমিতিগো কওয়া আছে যদি জ্যাম ফালাতি পারেন তালি কলাম আমাগো সব পত্রিকা বিক্কিরি অইবো,আর যে লাভ পামু তার থাইক্কা আপনেগো এট্টা অংশ দিমু”। হেইর লাইগাইতো ওরা জ্যাম ফালায়। এই যে আইজা জ্যামে আমার সব বিক্কিরি অইলো এই লাভের টাহা থাইক্কা সমিতিতে দুইশো ট্যাহা দিতি অবি। বাকি থাকবি দুইশো টিহা। সেই দুইশো টিহা থাইক্কা একশো টিহা আমার মালিকের লাগি আর একশো টিহা নিজের”। 

তন্ময় আর অন্তরা দুজনেই ওর কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেল। ছেলেটা ততক্ষণে নেমে গেছে। জ্যাম ছেড়ে গাড়িটা কিছুদূর এগিয়েছে আর অমনি আবার জ্যাম লাগলো। অলরেডি তিন ঘন্টা পেরিয়ে গেছে তন্ময়রা গাড়িতে উঠেছে। অথচ মাত্র এক স্টপেজ পার হতে পেরেছে। পত্রিকা পড়ে পড়ে সবাই মনে হয় ক্লান্ত। এখন পেটে ক্ষুধাও লাগছে। কিছু খাওয়া দরকার। এর মাঝে এক বাদাম ওয়ালা উঠলো। দেখতে দেখতে তার সব বাদাম শেষ হয়ে গেল। এই বাদাম ওয়ালা বয়সে একটু বড়। ওর নাম অনীক। বাবা মা এতো সুন্দর নাম রেখেছে কিন্তু ভাগ্যের দোষে আজ বাদাম বিক্রি করতেছে। আগের ছেলেটার কথাবার্তায় অন্তরা মজা পেয়েছে তাই ভাইয়াকে বললো এই ছেলেটাকেও ডাকোতো ভাইয়া। 

তন্ময় ওকেও ডেকে একই ভাবে লাভের কথা বললো। অনীক নামের ছেলেটাও জানালো তাদের চুক্তি আছে যে, যত বেশি জ্যাম হবে তাদের বিক্রি ততো বেশি হবে এবং লাভের অংশ পাবে মালিক সমিতি। এভাবে একে একে আরো অনেক কিসিমের লোক বাসে উঠলো আর দুই ভাই বোন সবার সাথেই কথা বললো। অন্যরা যখন তীব্র যানজটে বিরক্তির চরম সীমায় পৌছে নিজের চুল ছিড়ছে তন্ময় আর অন্তরা তখন নানা কিসিমের মানুষের সাথে কথা বলে সময়টা আনন্দের সাথেই পার করছে। গাড়ি যখন মালিবাগ মোড়ে এসে থামলো তখন রাত দশটা। ওরা গাড়িতে উঠেছিল দুপুর দুইটায়। ওরা বুঝে ফেলেছে বাসায় পৌছাতে কত সময় লাগবে তা কারো ধারণাও নেই। আব্বু আম্মুকে ফোনে জানিয়েছে ওরা বাসে উঠে বসেছে। আব্বু তন্ময়কে বলেছে তোমার কাছে টাকা কত আছে? তন্ময় বললো ওর কাছে দুই হাজার টাকা আছে। বাবা বললেন সকালে বিকাশ করে টাকা পাঠাবো। 

এভাবে সারা রাত গেল। সকাল এগারটার সময় ওরা মালিবাগ রেলক্রসিং পার হতে পারলো। কিন্তু তারপরই আবার জ্যাম। সকালের নাস্তাটা ওরা ওখানেই শেষ করলো। কিছুক্ষণ পর এক জুতা কালি ওয়ালা উঠলো। এর বয়সও এগার কি বার হবে। গাড়িতে বসে থাকলেতো আর জুতা ময়লা হয়না তাই ওর ব্যাবসা খুব একটা জমেনি। তার পরও আগ্রহের খাতিরে তার সাথেও কথা হলো তন্ময় আর অন্তরা। সেও জানালো চুক্তির কথা। ওর নাম মারু। আসলে হয়তো বাবা মা শিক্ষিত হলে ওর নাম হতো মারুফ। তবে সে খুব গল্প প্রিয়। অন্তরা যখন তাকে কাছে ডাকলো তখন এক গাল হেসে দিয়ে বললো “আফা আমিতো আপনের জুতা কালি করতি পারুম না, আমি খালি ভাইজানগো জুতা কালি করি”।

ওর কথা শুনে অন্তরা হেসে দিয়ে বললো না না আমার জুতা কালি করতে হবেনা। তুমিতো দেখি খুব কথা বলতে পছন্দ করো। অন্তরার কথা শুনে ছেলেটা এক গাল হাসি দিয়ে বললো “তাইলে শুনেন আফা এই যে জামে আটকা পইড়া আছেন কয়দিন হইলো? তন্ময় বললো তাতো প্রায় দুইদিন হতে চললো। ছেলেটা তখন বললো এইডাতো কুন জামই না। জাম ছিল আগে। আমার জন্মই অইছে জামের মধ্যি। বাজানের মুখ থাইক্কা হুনছি বাজান টঙ্গী থাইক্কা যাইতেছিল সদর ঘাট। তহন রাস্তায় নাকি জাম ছিল। সেই জামে বাজান আটকা পড়ে ছিল টানা তের মাস। সেই জামের মধ্যিই বাজানের সাথে আমার মায়ের পরিচয় অইছিল আর বিয়াও অইছিলো। এর পর নাকি বাজান জামে আটকা পইড়া পাশের হুডেলে তাগো বাসর করছিল। এমনকি সেই জাম কাডাইয়া বাজান সদর ঘাট যাওয়ার আগেই দশ মাস পার অইগেছিল আর আমার জন্ম অইছিল”। 

ওর কথা শুনে অন্তরা হো হো করে হেসে উঠলো। তন্ময়ও খুব হাসলো এমনকি তীব্র যানজটে মেজাজ হারিয়ে ফেলা অন্যান্য সব যাত্রীয় ওর কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠলো। অলরেডি তন্ময়রা আট দিন জ্যামে আটকে আছে। এর মধ্যেই ওদের পকেটের প্রায় সব টাকা শেষ। বাবা বিকাশ করে টাকা পাঠিয়েছেন সেটাও তুলে আনা হয়েছে। এই যাত্রা পথের বিচিত্র সব অভিজ্ঞতার কথা অন্তরা ওর ট্যাবে লিখে রেখেছে। আগামী বই মেলায় বই বের করবে। কিন্তু বইটার কি নাম দেওয়া যায় তা ভেবে পাচ্ছেনা। 

অতঃপর এক সকালে ওরা উত্তরা নিজেদের বাসায় পৌছালো। কলিংবেল টিপতেই আম্মু দরজা খুলে দিল। আম্মুর মুখে অনাবিল হাসি আর হাতে মিষ্টির প্যাকেট। অন্তরা আর তন্ময় দুই ভাই বোন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো আম্মু কিসের মিষ্টি! আম্মু বললো অন্তরার এসএসসির রেজাল্ট বের হয়েছে আজকে। ও গোল্ডেন এ প্লাস পেয়েছে তার মিষ্টি। দুই ভাই বোন একে অন্যের মুখের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে ভাবলো পরীক্ষা শেষ করে বাড়ি আসতে আসতেই রেজাল্ট বের হয়ে গেল! বাংলাদেশতো সত্যিই ডিজিটাল হয়ে গেছে। যদিও যানজটের কারণে ওরা একমাস পর বাসায় ফিরেছে! তবুও ওরা খুশি যে অন্তরার কলেজ ভর্তির ডেট শেষ হওয়ার আগেই বাসায় ফিরতে পেরেছে।
...................................................

স্বপ্ন আরও


……………………………………………
‪#‎জাজাফী‬
…………………………….
আমার সাথে কোন দিনও
হয়তো তোমার হয়নি দেখা
তাই বলে কি নিষেধ আছে
তোমায় নিয়ে গল্প লেখা।


হয়তো কভু এক জীবনে
চোখ রাখিনি তোমার চোখে
তাই বলেকি স্বপ্ন দেখা
বন্ধ রবে ইহলোকে।

আকাশ যখন আঁধার করে
হয়তো তখন চাঁদ দেখিনা
তোমার প্রতি যে টান আছে
জেনে রেখো সব মেকি না।

আমারও এক আকাশ আছে
সেই আকাশের চাঁদ যে তুমি
সেই আলোতেই রঙ্গীন থাকে
হয়তো কোন মরুভূমি।

হয়তো কভু তোমার সাথে
হাতটা ধরে হয়নি হাটা
তুমি বিনে জানো কি এই
জীবনটা খুব সাদামাটা।

সাদামাটা জীবনটাকে
রাঙিয়ে দিতে আসতে পার
এসেই না হয় জেনে নিও
আছে কতই স্বপ্ন আরো।
………………….জাজাফী

কান কই

কানে হাত দিয়ে দেখি হায় হায় কান কই
কান নিয়ে চারদিকে শুনি আজ হইচই।
গোটা দেশেরই নাকি কান কাটা গেছে আমারওকি তাই
হায় হায় কানে হাত দিয়ে দেখি কান নাই।
আমার কি দোষ ছিল কেন কাটা গেল কানটা
শিক্ষক কান ধরে ওঠাবসা করলে তবে আর থাকে কার মানটা।
কান কাটা গেছে এর পরও নাকি নাক উচু, উচু নাকি মাথাটাও
কান ছাড়া শুনবে কে আমার বলা কওয়া সব ফাও।
--------------------------------------------------‪#‎জাজাফী‬
১৮ মে ২০১৬

আনিসুল হকের বইয়ের তালিকার একটি গল্প



=====================
‪#‎জাজাফী‬
==================================
এক ছিল রাজকন্যা সে তার প্রাণ প্রিয় "মা" কে বললো জানো মা "আমাদের ক্লাসে একটা পরী পড়ে" মা শুনেতো অবাক। কিন্তু মাও পিচ্চিকে অবাক করে দেওয়ার জন্য বললো এ আর এমন কি? তুমি জানো "রোজ বৃহস্পতিবার আমাদের বাসায় চোর আসে" আম্মুর কথা শুনেতো পিচ্চির চোখ কপালে। জানতে চায় চোর কখন আসে? আম্মু বলে তুমি ঘুমিয়ে গেলে আসে। পিচ্চি নাম সুমাইয়া মিফরা । মিফরা কিছু বলার আগেই বাবার ফোন। রিসিভ করে জানা গেল বাবা লিফটে আটকা পড়েছেন। আম্মু গিয়ে লিফট খুললেন। দেখা গেল সেখানে ঝুনু খালামনিও আছে সাথে তার বড় ছেলে। আম্মু হেসে দিয়ে বললেন কি খবর "লিফটে আটকে পড়া যুবক যুবতীরা" বাবা হাত থেকে এক গোছা গোলাপ আম্মুর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন "পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরী রমনী আপনার জন্য" ঝুনু খালা হেসে দিয়ে বললেন আপা "বিক্ষোভের দিন গুলিতে প্রেম" মনে আছে এখনো? 

ঝুনু খালার কথা শুনে আব্বু বললেন শুধু সেই কথা কেন "বেকারত্বের দিন গুলিতে প্রেম" ও মনে আছে। তারেক ভাইয়া পাশেই দাড়িয়ে ছিল। সে বললো "একাত্তুরের একদল দুষ্টু ছেলে"দের কথা আমার খুব মনে পড়ে। কিসের মধ্যে কি পান্তাভাতে ঘি। তারেক ভাইয়ার বোকার মত কথা শুনে আমি হেসে দিয়ে বললাম তুমি কি "গুড্ডু বুড়া" তাহলেতো "গুড্ডু বুড়ার মজার কান্ড" দেখা যাবে।
আমার কথা শুনে মিফরা বললো আমি কি "স্বপ্ন" দেখছি? নাকি "শহরের অদ্ভুত জন্তু" দেখছি। ওরকথা শুনে আমরা সবাই হো হো করে হেসে উঠলাম। মনে পড়ে গেল "ছোটরা যেদিন বাড়ির বড় কর্তা" ছিল সেদিনের কথা। কতইনা মজা করেছি সেদিন।

নোভা সেদিন "বোকা গোয়েন্দা" সেজেছিল। ওর সব "ভুল গুলো ভালবাসা গুলো" বাড়ির বড়রা ক্ষমা করে দিয়েছিল। রোজা আপু সেদিন মজা করে ওকে চিঠি লিখে বলেছিল "মনে রেখো প্রিয় পাতা"
"এই গল্পটা হাসির" "চার প্রিয়তা" "রম্য অরম্য" নিয়ে "বারটা বাজার আগে" খুনসুটিতে মেতে ছিল। ঠিক সেই সময় "শিপরা নামের পিপড়া মেয়েটা" এসে হাজির। পিছন থেকে কে যেন ওকে ডাকছিল "ফিরে এসো সুন্দরী তমা" কিন্তু সে ফেরেনি। যে বাড়িতে "কাকের নাম সাবানী" সেখানে বসে "নক্ষত্রের পানে চেয়ে বেদনার পানে" "খোলা চিঠি সুন্দরের কাছে" লেখাই যায়। কিন্তু সেই চিঠিটা বেহাত হওয়ায় "জামাই সেজে চোর ঢুকেছিল" বাড়িতে সেটা সবার মনে আছে।

চা খেতে খেতে কখন যেন কেটে গেছে "অন্ধকারের একশো বছর" কেউ টের পাইনি। "রাজা যায় রাণী আসে" কিন্তু "সুদুর তমা" আর আসেনা। "গোধুলী" নামের ছোট্ট মেয়েটি "স্বপ্ন ও স্বপ্ন ভঙ্গের দেশে" গিয়ে কান্না নিয়ে ফিরে এসেছে। "একটি নিষ্ঠুর কল্প কাহিনী এবং" "বীর প্রতীকের খোজে" সে কতনা সমুদ্র পাড়ি দিয়ে আজ ক্লান্ত।

চা খেতে খেতে বাবাকে হঠাৎ মিফরা প্রশ্ন করে "চিয়ারি বা বুদু ওরাও কেন দেশ ত্যাগ করেছিল" তা জানতে চায়। ওর প্রশ্নের জবাবে বাবা বলেন "স্বপ্নের মানুষ" ছিল "হৃদিতা" তাকে খুজতেই সে দেশ ত্যাগ করেছিল। কিন্তু ওরা "দুঃস্বপ্নের যাত্রী" হতাশ কন্ঠে বলেছিল "আলো অন্ধকারে যাই" ফাহিম ভাইয়া মিফরাকে খুব খ্যাপায়। তাই সে হঠাৎ বলে উঠলো "আপা তোমার আব্বাকে একটু আব্বা বলে ডাকি এবং" আদর করি। মিফরাও বৃদ্ধি করে ফিক করে হেসে দিয়ে বললো "এতোদিন কোথায় ছিলেন"?
আমাদের কথা বলার ফাকে দেখি আম্মু কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছেন। হঠাৎ শুনি আম্মু বলছে "বিজয়ী হবে বাংলাদেশ" "তোর জন্য,প্রিয়তা" বুঝলাম প্রিয়তা খালামনির সাথেই কথা হচ্ছে কিছু একটা নিয়ে। অবশ্য বাবা বলেন প্রিয়তার সাথে কথা বলা আর "অরণ্যে রোদন" করা সমান কথা।

বাবা মাঝে মাঝে কবির হয়ে যান কিছু সময়ের জন্য। সেই চায়ের আড্ডাতে বাবা বলে উঠলেন "তোমাকে ভাবনা করি" চার প্রিয়তা" । আমি গুনে গুনে দেখলাম সত্যিই চারজন আছেন তার প্রিয় মানুষ। যদিও আমরাও তার প্রিয়। কিন্তু আমরাতো "দুঃখ পরী,সুখ পরী" আর ফাহিম ভাইয়া এবং তারেক ভাইয়ারাতো "ভীন গ্রহের ক্রিকেটার"।যদিও তারা ক্রিকেট মোটেও পারেনা। কারণ একদিন তারেক ভাইয়া বলেছিল বাংলাদেশের সেরা ব্যাটস ম্যান মাশরাফী বিন মুর্তজা যখন ব্যাট করে তখন এক নাম্বার উইকেট কিপার মুস্তাফিজকে আর স্টাম্পের পিছনে থাকা লাগেন।

"আমার একটা দুঃখ আছে" সবাই আমাকে বলে "ছোটদের বিদ্যাসাগর" অথচ দেখ আমি কিন্তু সামান্যি অখ্যাত মানুষ। আমি জানি "এ ভালবাসার কোন মানে হয়না" তাই আমি বার বার বলছি "প্রিয় পাঠক একটু হাসুন" এবং "ভালবাসা ডটকম" এ ভিজিট করে "না মানুষি জমিন" দেখে আসুন।

গল্প বেশ জমে উঠেছিল কিন্তু ঝুনু খালা আমাদেরকে নিজেদের রুমে যেতে বললেন। সন্দেহ করলাম নিশ্চই কিছু আছে। আমি "মটকু মামার গোয়েন্দা অভিযান" মনে করে লুকিয়ে শুনতে চেষ্টা করলাম। দেখি ঝুনু খালা বলছে ফিরে এলাম "অসমাপ্ত চুম্বনের ১৯ বছর পর"। সব শুনেতো আমার মাথায় হাত। "খেয়া" ঘাটের ওপার থেকে "যারা ভোর এনেছিল"তাদের কথা এরা মনে রাখেনা ঠিকই কিন্তু ওসব মনে রাখে। অথচ এরা জানেইনা "ফাটা ডিমে আর তা দিয়ে কি ফল পাবে"। 

বাবার মুখে কথার খই ফুটলো। বললো "সে" "একাকী একটি মেয়ে" " তার নাম "সুচরিতাসু"। সে ছিল আমার "বৃষ্টি বন্ধু" যার সাথে আমার "শেষ বিকেলে দেখা" হয়েছিল চার রাস্তার মোড়ে। সব শুনে নিজেকে "রোবট" মনে হচ্ছিল। আবার মনে হচ্ছিল "লম্বু ভূত" আসলে "আমি আছি আমার অনলে"। সেখানে "বেটে ভুত" নেই "ঘোড়ার ডিম" নেই কিন্তু আছে "শাকালাকা বুমবুম"। পাশের বাসার "তিনি এবং একটি মেয়ে" যার নাম "মায়া" মিলে "৫১ বর্তী" পরিবার। আমি "ফাজিল" আমার ভাবনা একটাই। "আয়েশা মঙ্গল" "পাই বা না পাই" নিশ্চই "অন্য শরীর" পাবো। হঠাৎ দেখি বাবা বলছেন "অহেতুক কৌতুক" রেখে এটা নাও "সেজুতী তোমার জন্য" এক গুচ্ছ মালা এনেছি। এটার জন্য বাবা আম্মুর হাতে "ধরা" খেলেন। আম্মু মজা করার জন্য বললেন "মেঘরে মেঘ তুই আছিস বেশ" বাবা বললেন তুমি জানো "অশ্ব ডিম্ব" মা উল্টো বললেন "গাধা"। তার পর সে কি হাসাহাসি।

এতোক্ষণ শুনিয়ে গেলাম "সরস কথা নীরস কথা" এটাই আমাদের "রঙ্গ ভরা বঙ্গদেশ"। আমরা "ভালবাসি আশ্চর্য মেঘ দল" এটা তোমাদের কাছে "রম্য কথা" মনে হতে পারে কিন্তু আমরা ভাবি "পড়শী যদি আমায় ছুতো"। কিন্তু পড়শী আসেনা। আমাদের গল্প শেষ হবেনা যদিও পাই "দ্বিতীয় জীবন" কারণ "আইভরি কোষ্টের লাল সবুজের পাশে" আমাদের "ভালবাসা মন্দ বাসা"। সেদিন "কালরাত্রি" ছিলনা তার পরও মনে হলো "এই যন্ত্র লইয়া আমরা কি করিব"।

বাবা আবার কবি হয়ে গেছেন। ঝুনু খালার দিকে তাকিয়ে আবৃত্তি করছেন "দখিন হাওয়ার দক্ষিণ বারান্দায়" "ফাল্গুনের রাতের আধারে" এটা "তোমাকে না পাওয়ার কবিতা"। আম্মু বললেন ও তলে তলে তাহলে এই ছিল? বাবা তখন আম্মুকে শান্তনা দেওয়ার জন্য বললেন "প্রিয়তমাসু" "সেই গুমের পর" "ঊষার দুয়ারে" তোমাকেই দিয়েছিলাম "শুধু একদিন ভালবাসা"। এটা শুনে আম্মু আরো রেগে গেলেন। কী একদিন ভালবাসা? আর বাকি দিন কার শুনি? যদিও জানি সব ছিল আব্বু আম্মুদের খুনসুটিমাত্র।
"আজকালকার ভালবাসার গল্প" শুনলে "হাসতে হাসতে খুন" তবে আমাদের একটা বিড়াল ছিল "পুষি" সে আবার "রাখাল বালকের মুক্তি যুদ্ধ" আর "রাক্ষোস খোক্কস" এর গল্প শুনতে ভালবাসতো। কিন্তু তাকে কে গল্প শোনাবে? এখনতো "কিডনাপারের কবলে গুড্ডু বুড়া" এই সময় Anisul Hoque হাসতে হাসতে প্রবেশ করলেন আর বললেন "আমারও একটা প্রেমকাহিনী আছে" সুতরাং "ভালবাসো,বাঁচো"।
তার কথা টেনে নিয়ে খালামনি একটা চেয়ার এগিয়ে দিতে দিতে বললেন "ভালবেসে তোমায় দিলাম" আর ঠিক তখনি ঘটে গেল "যত কান্ড চিয়ার নিয়া" তবে আর যাই হোক তেমন কিছু ঘটেনি কারণ সেখানে তখন "জেনারেল ও নারীরা" ছিলনা। কেবল ছিলেন এক গল্পের যাদুকর আনিসুল হক।
......(সংক্ষেপিত)
(আরো অনেক গুলো বই বাকি আছে সময়ের অভাবে দেওয়া হলোনা)

অষ্ট ভ্রমন

ইবনে বতুতার মত আমিও ভ্রমন করেছিলাম অনেক দেশ। সেই সব দেশের নাম দিলাম নিচেয়। সাথে আমার পরিচয়টাও।
=======================
আমি জামালপুরের জামাল। মানিক গঞ্জের মানিকের পরামর্শ মতে ঢাকা বেড়াতে গিয়ে ভুতের গলির ভুত দেখে ভয় পেয়ে পালিয়ে ধোলাইখাল গিয়ে বেধড়ক ধোলাই খেয়ে এলিফেন্টরোড এসে বিশাল এক হাতির লাথি খেয়ে ল্যাংড়া ও লুলা হয়ে চিকিৎসার আশায় টাঙ্গাইলের ভূয়াপুর গিয়ে এক ভূয়া ডাক্তারের কাছে প্রতারিত হই।
তার পর সুনামগঞ্জের সুনামী ডাক্তারের কাছ থেকে ওষুধ খেয়ে সুস্থ হয়ে হবিগঞ্জ যাওয়ার পথে এক নতুন হবি চাগিয়ে ওঠে। হবি পুরণ করতে নবাব গঞ্জের নবাবের কাছে যাই। নবাব ব্যর্থ হয়ে আমাকে বগুড়ার গুড় কিনে নিয়ে সোনাখালীর সোনা মিয়ার সাথে দেখা করতে বলে। সোনামিয়াকে না পেয়ে কুড়ি গ্রাম গিয়ে কুড়ি টাকা দিয়ে লালমনির হাটের লাল এবং নীলফামারীর নীল রং কিনে পঞ্চগড়ের পাচ টাকায় গাইবান্ধার গাইয়ের দুধ পান করে লক্ষ্মি হওয়ার আশায় লক্ষ্মিপুর যাত্রা কালে বান্দরবনের কতিপয় বান্দর আমাকে কিলিয়ে ঘুষিয়ে সাতক্ষিরা পাঠায়।
অতঃপর সাতক্ষীরার হাসপাতালে সাত দিন থেকে সাতটি ক্ষিরা খেয়ে এবং বরিশালের বরই খেয়ে সুস্থ্য হয়ে ঝিনাইদাহ গিয়ে জ্বিনের সাথে দেখা করি। তার সাথে কথা বলতে বলতে মহেশপুর এসে দেখি মহিষ এবং হরিণাকুন্ডের হারিণকে বাগের হাটের বাঘ তাড়া করছে। এ অবস্থা নিয়ন্ত্রনে আনতে গিয়ে কালিগঞ্জের কালো কালি গায়ে লাগিয়ে শৈলকুপা থেকে কুপানোর প্রশিক্ষণ নিয়ে বাঘকে কুপিয়ে আহত করে ফেলেছি। বর্তমানে মাগুরার মাগুর মাছ খাইয়ে সুস্থ্য করার জন্য ঝালকাঠির ঝাল এবং ফেনীর ফেন একসাথে মাখিয়ে খাওয়াচ্ছি।
বাঘ সুস্থ্য হলে বানিয়াবহুর বানের মধ্যে ভরে কাওড়ার কাওছারকে সাথে নিয়ে মমিন নগরের মমিনের পরামর্শ মতে কক্সবাজারের বাজারে বিক্স্রি করে একটা বড় ঝামেলা থেকে মুক্ত হবো।
এতো কিছু করে এখন আমি জ্বরে ভুগছি তাই আপনারা দোয়া করবেন যেন সুস্থ্য হয়ে এবার ঠাকুরগাওয়ের ঠাকুর এবং ব্রাহ্মনবাড়িয়ার ব্রাহ্মনের পরামর্শ নিয়ে রাঙ্গামাটির মাটি আনতে যাওয়ার পথে শেরপুরের শের এবং ময়মনসিংহের সিংহকে পরাস্থ করে জয়পুরহাট গিয়ে জগা কুস্তিগিরকে পরাস্থ করে জয় লাভ করতে পারি।
বি.দ্র: লেখাটি প্রথম আলোর রস+আলোতে বেশ আগে প্রকাশিত। তবে লিংক দিতে পারছিনা।

সাংবাদিকেরা যেভাবে রিপোর্ট লেখে

সবার ভালবাসা পেয়ে একদিন সত্যি সত্যি ধরুন জাজাফী বিখ্যাত হয়ে গেল।তার পর অসাংবাদিকেরা জাজাফীর সাক্ষাতকার নিতে শুরু করলো। চলুন দেখি জাজাফীর ভাবনা গুলো জেনে নিয়ে অসাংবাদিকেরা কি লিখতে পারে সেটা দেখে নিই।
জাজাফীঃ আমি গল্প উপন্যাস লিখতে গিয়ে অনেক সময় বাবা মা বোনকে সময় দিতে পারিনা।
পত্রিকার শিরোনামঃ মা বোনকে সময় দেন না জাজাফী।
জাজাফীঃ মনে হয় মাঝে মাঝে বোনের চেয়ে লেখালেখিকেই বেশি ভালবাসি।
পত্রিকার শিরোনামঃ ভালবাসার মাপকাঠিতে বোন সুমাইয়া মিফরা কে অনেক নিচে ঠাই দিলেন জাজাফী।
জাজাফীঃ উপন্যাস মার্কেট না পেলে চিন্তা করি ছোট গল্প দিয়ে পুষিয়ে দেব।
পত্রিকার শিরোনামঃ ব্যার্থতা নিয়ে ভাবেন না জাজাফী।
জাজাফীঃ এই ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা না নিলে উন্নতি সম্ভব হবেনা।
পত্রিকার শিরোনামঃ বাংলা সাহিত্যে উন্নতি সম্ভব নয় সাফ জানিয়ে দিলেন জাজাফী।
জাজাফীঃ আমার প্রিয় লেখক জুলভার্ন।
পত্রিকার শিরোনামঃ বাংলা সাহিত্যকে ঘৃণা করেন জাজাফী।

রানী এলিজাবেথের বই পড়ার গল্প


----------------------------------
ইংল্যান্ডের বর্তমান রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের জন্মদিনে একটি বই উপহার দিলেন তার দেশের এক মন্ত্রী। রানী বই পড়তে ভালবাসেন এটা বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। এক অবসরে তিনি যখন সেই বইটি পড়তে শুরু করলেন তখন মুগ্ধ বিস্ময়ে হতবাক হয়ে গেলেন। একবার দুবার বার বার পড়লেন বইটা। যাদুকরের যাদু যেমন আকৃষ্ট করে তেমনি সেই বইটিও তাকে আকৃষ্ট করলো।
রানী সেই মন্ত্রীকে আদেশ দিলেন বইয়ের লেখককে রাজপ্রাসাদে আমন্ত্রন জানাতে এবং রানীর সাথে মধ্যাহ্নভোজে অংশ নিতে। রানীর আদেশ মত মন্ত্রী সংবাদটি দিলেন সেই লেখককে। রানী নিজে তাকে রাজপ্রাসাদে দাওয়াত করেছেন!!!! বিস্ময়ে তিনি যেন বাক হারা হয়ে গেলেন। তার পর যথাসময়ে হাজির হলেন বাকিংহাম প্যালেসে। রানীর সাথে সেটাই ছিল তার প্রথম সাক্ষাত। রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার বইয়ের প্রসংশায় পঞ্চমুখ।

মহারানী এবার লেখককে বললেন আমি আপনার বই পড়ে এতোই মুগ্ধ হয়েছি যে আমি চাই আপনার লেখা সব বই এক নিমিষে পড়ে শেষ করবো। লেখক আমতা আমতা করে কিছু বলতে চাইলেন। তার লেখা অগণিত বই ছিল তার পরও তিনি জানালেন মহামান্য রানী আমার বাকি বইগুলোর একটাও আপনার ভাল লাগবেনা এটা আমি লিখিত দিতে পারি। রানী তার কোন কথাই শুনলেন না। তিনি বললেন ভাল লাগবে কি লাগবেনা সেটা আমি বুঝবো আপনি আপনার লেখা বাকি সব বই পাঠান। লেখকদের আসলে এভাবেই কথা বলতে দেওয়া হয়না কিংবা লেখকদের কথা সবাই মন দিয়ে শোনেওনা।
রানীর আদেশ মত সেই মন্ত্রী লেখকের সাথে তার বাসায় গিয়ে লেখকের বাকি সব বই নিয়ে আসলেন রাজপ্রাসাদে। নৈশভোজ শেষে রানী সবাইকে বললেন এখন তিনি একাধারে বই পড়বেন এবং এই সময়ে তাকে যেন কেউ বিরক্ত না করে। রানীর আদেশ আজ্ঞাবহ হিসেবে সবাই মেনে নিলো।
দশ মিনিটের মধ্যেই রানী তার পড়ার ঘর থেকে বেরিয়ে আসলেন। তখন প্রায় মধ্যরাত। লেখক নতুন লেখায় মন দিতে যাচ্ছেন। রানী আদেশ দিলেন এখনি ওই লেখককে রাজপ্রাসাদে নিয়ে আসো এবং অবশ্যই স্বসম্মানে।

সেই রাতেই লেখক আবার এলেন রাজপ্রাসাদে রানীর সামনে। কেউ কিছু বুঝতে পারেনি তখনো কিন্তু লেখক নিজে জানেন আসলে কি হয়েছে।
রানী আক্ষেপ নিয়ে বললেন আপনার ওই বইটা এতো অসাধারণ ছিল যে আমি বিশবারের বেশি পড়েছি তাই আগ্রহ ছিল আপনার বাকি বই গুলোও পড়বো। কিন্তু বাকি বই গুলোর নামও পড়তে বিরক্ত লেগেছে।
লেখক বিনীত ভাবে জানালেন মহামাননীয়া রানী আমি আপনাকে আগেই বলেছিলাম আমার বাকি বই গুলোর কোনটাই আপনার ভাল লাগবে না।

--------------------------------------------
বইটি যিনি লিখেছিলেন তিনি বিশ্ব বিখ্যাত একজন লেখক। তিনি ছিলেন ইংল্যান্ডের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একজন গণিতবিদ। তিনি মাত্র একটি গল্পের বই লিখেছেন যা বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত জনপ্রিয়। হলিউডের প্রখ্যাত অভিনেতা জনিডেপ তার সেই গল্পের প্লটে নির্মিত সিনেমায় অসাধারণ অভিনয়ও করেছেন। এই লেখক এর পর যত বই লিখেছেন তার সবই ছিল গণিতের উপর। তাই রানী এলিজাবেথের তা পড়া হয়নি। লেখকের নাম লুইস ক্যারোল। আর বইটার নাম এলিস ইন ওয়ান্ডার ল্যান্ড।
=======================================
‪#‎জাজাফী‬

মুস্তাফিজ


========================
মুস্তাফিজের বাড়ি কিন্তু আমগো বাড়ির পাশে
হেতের পোষা কবুতরও আমগো বাড়ি আসে।

মাঝে মধ্যে খাওন ও দেই পানিও দেই কিছু
হ্যাগো বাড়ি পাডাই আমি আমগো বাড়ির লিচু।

আইপিএলে জনপ্রিয় আজ সে পোলার কাটার
হেতের ভয়ে দলগুলো আজ নামিয়ে রাহে সাটার।

জিতেই নিলো কাপটা হেতে,হেই ছিল প্রাণ ভোমর
ঝালমুড়ি হে না খাওয়ালে ফাঁস করবোই গোমর।

আমগো বাড়ির পাশেই কিন্তু মুস্তাফিজের বাড়ি
বাড়ি এলে এবার হেতের নেইকো ছাড়াছাড়ি।

মাথায় তুলে নাচবোনাকো গাইবোনাকো গান
ধান কাটবো হেতেরে কবো আনতো কাটার খান।

হাইসসা দিবো ফিক করে হেই,পাগল হইলি নাকি
আমি কিন্তু মুস্তাফিজের বাড়ির লগেই থাকি।

মুস্তাফিজের মায়রে আমি কাকি কইয়েই ডাকি
ইচ্ছে অইলে ভাবতি পারেন,আমি ভীষণ লাকি।
৩০/৫/১৬
‪#‎জাজাফী‬

ফটোগ্রাফী আসক্তি


=========================
‪#‎জাজাফী‬
------------------------------------------------------
দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্যের কারণে আকাশের চাঁদ কারো চোখে সম্মোহন আনে আবার কারো চোখে সেটা হয়ে ওঠে ঝলসানো রুটি।অনেকটা সেই বিখ্যাত প্রবাদের মত “কেউ মদ বিক্রি করে দুধ কিনে খায় আর কেউ দুধ বিক্রি করে মদ কিনে খায়”।আগে যেখানে গ্রামতো দুরের কথা শহরেও খুব একটা ক্যামেরা দেখা যেতনা এখন সেখানে প্রায় জনে জনে কাধে ডিএসএলআর নিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়।আর প্রত্যেকের হাতের মোবাইলেতো ক্যামেরা আছেই।চাই সেটা আইফোন হোক বা এক হাজার টাকা দামের কোন অখ্যাত ব্র্যান্ডের সেট হোক সবটাতেই ক্যামেরা অবধারিত। আর ক্যামেরার এই প্রতুলতার কারণে আমরা ক্ষণে ক্ষণে ফটোগ্রাফারের ভূমিকায় অবর্তীণ হচ্ছি।
কিন্তু কখনোই ভেবে দেখছিনা যে কাকের পিছনে ময়ুরের পুচ্ছ লাগলে যেমন কাক ময়ুর হয়ে যায়না তেমনি ডিএসএলআর বা এসএলআর বা অন্য যে কোন ক্যামেরা কাধে নিয়ে ক্লিকের পর ক্লিক করে ছবি তুললেই ফটোগ্রাফার হওয়া যায়না।

বিশেষত আজকের বাঙ্গালীর ফটোগ্রাফী প্রীতির কথা বলতে গেলে মনে পড়ে যাচ্ছে কেভিন কার্টারের কথা।
একটু পিছনে ফিরে গেলেই মনে পড়বে সেই মানুষটির কথা।১৯৯৩ সালে যিনি সুদানের দুর্ভিক্ষের ছবি তুলে পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন। কেভিন কার্টার সেদিন সুদানে একটি ছোট্টো বাচ্চার ছবি তুলেছিলেন। কংকাল প্রায় সেই বাচ্চাটি হামাগুড়ি দিয়ে এগুচ্ছিল খাবারের জন্য। নাহ যতদূর চোখ পড়ে খাবারের কোন চিহ্নই ছিলনা। সেই মৃতপ্রায় শিশুটির পাশেই একটি শকুন অপেক্ষা করছিলো বাচ্চাটি মারা যাবার জন্য। মৃত্যু কত কাছে ছিল। বলা হয়ে থাকে পুলিৎজার পুরস্কার প্রাপ্ত ফটোসাংবাদিক কেভিন কার্টার ওই বাচ্চাটি এবং তার মত আরো অনেক বাচ্চাকে খাবার পেতে সহায়তা না করার যন্ত্রনায় আত্মহত্যা করেছিলেন। যে মানুষটি ফটোগ্রাফীর জন্য সবথেকে দামি পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনিও আক্ষেপ নিয়ে চলে গেলেন।গুগল ঘাটলেই ভেসে ওঠে কেভিন কার্টারের মূখ।

অন্যদিকে ইউরোপে প্রবেশের পথে এইতো ক’দিন আগে কত কত মানুষ লাশ হয়ে ভেসে গেল সাগরের জলে।কোনদিন তাদের আর খোঁজ মিলবেনা।সেই সব অভুক্ত মানুষের ছবিও আমরা দেখেছি নানা মাধ্যমে।সাগর পাড়ে মুখ থুবড়ে পড়ে ছিল ছোট্ট আয়লান।সাগর পাড়ের আয়লানের ছবি তোলা সেই সাধারন ফটোগ্রাফারের কথাই ধরুন। যেই ছবিটি সারা দুনিয়া কাঁপিয়ে দিলো।
একজন ফটোগ্রাফার একটু যত্ন নিয়ে চেষ্টা করলেই দেশটাকে অন্যের কাছে খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করতে পারে।আমাদের অগচরেই হয়তো লুকিয়ে আছে অনেক সৌন্দর্য।সবাইতো সেই সৌন্দর্য খুঁজে পায়না।আমরা যদি সেসব ক্যামেরার চোখ দিয়ে বন্দি করে অন্যদের সামনে তুলে ধরি তাহলে সেই সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারে আরো অনেকে। 

চারদিকে কত কত অসংগতি।আমাদের কাঁধে ঝুলছে দামী লেন্সের ডিএসএলআর ক্যামেরা। চাইলে সেই ক্যামেরায় তুলে আনতে পারি সেই সব অসংগতি আর জানিয়ে দিতে পারি পুরো বিশ্বকে। কিন্তু আমাদের রুচিতে অরুচিকর সব বিষয় ঢুকে পড়েছে।আমরা তাই ঝুকে পড়েছি ফটোগ্রাফী নামে অফটোগ্রাফীতে। আমরা প্রতিনিয়ত ছবি তুলছি আর ফেসবুকে আপলোড দিচ্ছি।সেই সব ছবিতে আমাদের কারো মূখ বাকানো কারো জিহ্ববা দুই ইঞ্চি মুখের বাইরে ধরে রাখা।কারো চোখ বন্ধ, কারো বা নাক বাকানো।আমরা যেটাকে বলছি সেলফী। সেই সব সেলফী নামে অফটোগ্রাফীতে আমরা যেন আমাদেরকে উপস্থাপন করছি মানসিক প্রতিবন্ধীর মত করে আর ক্যাপশন দিচ্ছি উন্মাদের মত। অথচ একবার আয়নার সামনে দাড়িয়ে দেখুনতো আপনাকে আমাকে কতইনা সৌন্দর্য দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে।সেই সুন্দর মুখটাকে বাকিয়ে ছবি তুলে আমরা বরং সৃষ্টিকেই অপমান করছি।

আমাদের বিকৃত মস্তিষ্কও যে দিন দিন আরো বেশি বিকৃত হয়ে যাচ্ছে এগুলোই তার প্রমান। আধুনিকতার নামে, সেলফীর নামে আজ যা চলছে তা সত্যিই অরুচিকর।বাবার লাশ কাঁধে নিয়েও কেউ কেউ যে সেলফী তুলে আপলোড দিচ্ছেনা তাইবা বলি কি করে।সব ছবিতো আমাদের কোন একজনের পক্ষে দেখাও সম্ভব নয়।আমাদের রুচিবোধের যে সামান্য অংশটুকু বাকি আছে তা রক্ষা করতে হয়তো ফেসবুকের যে সে গ্রুপে যুক্ত হতে পারিনা তাই সব ছবিও দেখা হয়না।কিন্তু হরহামেশাই ওসব ভেসে আসে কারো না কারো মাধ্যমে।সদ্য খোড়া কবরের পাশে দাড়িয়ে সেলফী তুলতে তাই অনেকেই দ্বিধা করেনা।

মৃত দাদুর শিয়রের পাশে দাড়িয়ে আমাদেরই কেউ কেউ সেলফী তুলে ক্যাপশন দেই ‘গুডবাই দাদু’। সেই সব সেলফী নাম ধারী ছবিগুলো দেখলে মনে হয় পুরো দেশ ও সমাজ প্রতিবন্ধীতে ভরে গেছে।গুগলের কল্যাণে দেখা যাচ্ছে কয়েক লাখ টাকা খরচ করে হজ্ব পালন করতে গিয়ে কাবা ঘরের মধ্যেও সেলফী তুলে আপলোড দিচ্ছে আর ক্যাপশন দিচ্ছে ‘ইটস অ্যামাজিন,আই ক্যান নট বিলিভ’।দেখে মনে হয় হজ্বব্রত পালন মূখ্য উদ্দেশ্য নয়,উদ্দেশ্য হলো সেলফী তুলে সেটা চারদিকে ছড়িয়ে দিয়ে সবাইকে জানান দেওয়া যে আমি হজ্ব করতে গিয়েছিলাম।মক্কা শরীফের মধ্যে ইমানদারেরা যায় খোদাভীতি অর্জন করতে আর আমরা কেউ কেউ যাই ধর্মপালনের অছিলায় ছবি তুলতে। সেই তালিকায় বাদ পড়েনা আমাদের এদেশীয় কতিপয় খ্যাতিমান নায়ক,গায়কেরাও।

ক্যামেরা নয় বরং ক্যামেরার ধারক ও বাহকই মূলত ছবির কারিগর হিসেবে কাজ করেন।ক্যামেরার আর কী সাধ্য অমন ছবি তোলার।তাইতো আমরা দেখতে পাই শাকুর মজিদের ক্যামেরার চোখে ধরা পড়ে মিশরের সৌন্দর্য,নেবেলের শহর আর লেসওয়ালেসার দেশের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অপার সৌন্দর্য।মঈনুস সুলতানের ক্যামেরায় ধরা পড়ে ইউরোপ,আফ্রিকা সহ আরো অনেক অনেক দেশ ও জাতির সচিত্র ইতিহাস।সেই সব ছবি একটার পর একটা সাজিয়ে লেখা হয় অসাধারণ সব ভ্রমন কাহিনী।কিংবা প্রখ্যাত ফটোগ্রাফার নাসির আলী মামুনের কথাই ধরা যাক যার ক্যামেরা খুঁজে নিয়েছে দেশী বিদেশী বিখ্যাত সব মানুষের মুখ। যার ক্যামেরার বদৌলতে আমরা প্রিয় সব মানুষদের অসাধারণ সব মুহুর্তকে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছি।

সেলফী আক্রান্তের হার দিন দিন বেড়েই চলেছে।এইতো কদিন আগেও এই শব্দটা ছিল অপরিচিত আর হুট করে সেটাই হয়ে উঠলো বর্তমান বিশ্বের বিশেষত বাংলাদেশের সব থেকে আলোচিত একটি শব্দ।তারই ধারাবাহিকতায় সেটি ঢুকে পড়লো বাংলা একাডেমি প্রকাশিত নতুন বাংলা অভিধানে।
ফটোগ্রাফী কোন দোষের কিছু নয়।কিন্তু অফটোগ্রাফী অবশ্যই দোষনীয়।ঐতিহ্যবাহী কোন স্থানে ঘুরতে গিয়ে সেই স্থানের সৌন্দর্য উপভোগের পরিবর্তে যখন সেলফী তোলাই মূখ্য হয়ে ওঠে,ধর্মীয় আচার পালনে মক্কাশরীফে গিয়ে যখন ধর্মকে টপকে ছবি তুলে ফেসবুকে দেওয়াই মুখ্য হয়ে ওঠে তখন সেই ফটোগ্রাফীকে প্রশ্নবানে জর্জরিত করাইকি স্বাভাবিক নয়।

যারা সেলফী প্রচলন করেছিল তারা কিন্তু আসক্ত হয়ে পড়েনি কিন্তু আমরা আসক্ত হয়ে পড়েছি।মার্ক জুকারবার্গ ফেসবুক বানিয়ে ছেড়ে দিলেও তিনি খুব বেশি ফেসবুকে থাকেন না অথচ আমরা দিনরাত পড়ে থাকি।সর্বপরি ফটোগ্রাফীর নামে যে অফটোগ্রাফীর যুগ শুরু হয়েছে তা এখনি বন্ধ হওয়া উচিত।সেফলীর নামে যে প্রতিবন্ধীটাইপ ছবি তুলে উন্মাদটাইপ ক্যাপশন দেওয়ার রীতিতে আমরা আসক্ত হয়ে উঠেছি তা আমাদের ভবিষ্যতকে বিপথেই ঠেলে দেবে।

হাতের ছুরিটা দিয়ে যেমন আপেল কাটা যায় তেমনি অন্যের গলায় বসিয়ে দেওয়া যায়।আমাদের উচিত অন্যের গলায় ছুরি না বসিয়ে সেটা দিয়ে আপেল কাটা।আমাদের উচিত হাতে ক্যামেরা পেয়ে অফটোগ্রাফীতে না মেতে সত্যিকার ফটো তুলি,যে ছবি হৃদয়ের কথা বলে,যে ছবি ব্যথীত মানুষের পাশে দাড়ানোর গল্প শোনায়।যেটা দেখলে প্রশান্তি আসে,মনে হয় নাহ ফটোগ্রাফীটাও একটা আর্ট একটা শিল্প।
..................................................
#জাজাফী

পিথাগোরাসের প্রথম উপন্যাস এবং মোড়ক উন্মোচনের খবর


স্থানঃ নেপালে রাজধানী নেপচুন
=======================================
বিশ্ব বিখ্যাত ঔপন্যাসিক পিথাগোরাসের প্রথম উপন্যাসের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের সভাপতি ছিলেন বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা কাজী নজরুল ইসলাম!!বইটির নাম অবশ্য জানা যায় নি। গুগলে সার্চ দেওয়ার পর সে জানালো তুমি যদি অপারেশান সার্চ লাইট দিয়ে খুঁজতে পারো তবে হয়তো পেলেও পেতে পারো। 

আমি তার সাথে তর্ক করতে যাবো তখন নিউটনের গাছ থেকে আপেল পড়লো। সেটা খাবো না তর্ক করবো?মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানটির আয়োজন করা হয়েছিল নেপালের রাজধানী নেপচুনে। নেপচুন যে নেপালের রাজধানী এটা জানা ছিল না। পরে সদ্য গ্রহত্ব হারানো প্লুটোকে ফোন করে জানতে পারলাম নেপালে প্রবল ভুমিকম্পের কারণে রাজধানী সরে নেপচুনে চলে গিয়েছে আর সেই প্রবল ভুমিকম্পের কারণেই প্লুটোর গ্রহত্ব বাতিল হয়েছিল। 

তো পিথাগোরাসের কাছে জানতে চাওয়া হল আপনি যে উপন্যাসটি লিখলেন তা লেখা শুরু করেছিলেন কবে। পিথাগোরাস বললেন আমি শহীদ বুদ্ধিজীবি দিবস ১৭ই আগষ্ট উপন্যাসটি লেখা শুরু করেছিলাম এবং সেটা ২৬ শে ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় দিবসে শেষ করেছি। কিন্তু পিথাগোরাস তার উপন্যাস লিখতে গিয়ে পড়লেন বিপদে। হঠাৎ বিদ্যুত চলে গেল তখন তিনি অপারেশান টেবিল থেকে সার্চ লাইট নিয়ে এসে আবার লেখা শুরু করলেন। 

পিথাগোরাসের উপন্যাসে উঠে এসেছে কিভাবে শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি করা যায়। তিনি বলেছেন গুরুজনের নাম ধরে ডাকতে নেই তাই তার রচিত উপন্যাসে বাংলাদেশের মাননীয় প্রেসিডেন্টের নাম দেওয়া হয়নি।
তিনি মনে করেন বড় বড় শব্দ মুখস্ত করে লাভ কি তাই জিপিএ মানে জানা না জানা নিয়ে কারো প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়। তার মতে পাশাপাশি দুটো এস থাকলে সাথে সি অক্ষরটা বেমানান তাই স্কুল সেকেন্ডারি শব্দটিই সব থেকে যুক্তিযুক্ত। উপস্থিত ছিলেন নিশাদ মজুমদার।তিনি বললেন আপনার এই উপন্যাসের ভাষা এভারেস্টের মত উচু মানের। পিথাগোরাস খুশিতে তাকে কুর্নীশ করে বললেন ধন্যবাদ। আপনারা জেনে খুশি হবেন যে এভারেষ্ট যেহেতু ইংল্যান্ডে অবস্থিত!! তাই সেই ঐতিহ্যের কথা স্মরণে রেখে নির্ভূল ভাবে উপন্যাসটি লিখেছি। 

ওয়াসফিয়া নাজরীন - Wasfia Nazreen তখন পাশ থেকে নিশাত মজুমদারকে খোঁচা দিয়ে বললেন, এতো কষ্ট করে তাহলে আমরা কোন পর্বত জয় করে এলাম? এভারেষ্টতো ইংল্যান্ডে!!!। ঠিক এই সময় আবদুল মুহিতের ফোনে ফোন আসলো। তিনি ফোন রিসিভ করতেই ভেসে আসলো Musa Ibrahim এর কন্ঠ। তিনি জানালেন সব আমাদের চারজনের খাটাখাটনিই সার। কোন পর্বত না জানি জয় করে এসেছিলাম। যাই হোক সব ঠিক ঠাক করে রেখেছি। আপনারা তিনজন আসলে এবার চার জন মিলেই ইংল্যান্ড গিয়ে সত্যিকার এভারেস্ট বিজয় করে আসবো। 

পিথাগোরাস তার উপন্যাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরেছেন। সহজে দেশটা স্বাধীন করার লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশকে নয়টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।
সব শেষে তার এই সাফল্যমন্ডিত উপন্যাসের জন্য তাকে পুরস্কৃত করা হলো এবং তাকে সার্টিফিকেট দেওয়া হলো।

রমিজ কাকা চোখ কম দেখেন তাই সার্টিফিকেটটা চোখের খুব কাছে নিয়ে দেখতে পেলেন সেখানে লেখা আছে জিপিএ ফাইভ!

ঘটনাটা এর পর একজন ফেসবুকে ছড়িয়ে দিলেন। সেখানে তিনি ট্যাগ করলেন রীবন্দ্রনাথ ঠাকুর,কাজী নজরুল ইসলাম,আইনস্টাইন,নিউটন,এডমন্ড হিলারী সবাইকে। কমেন্টের বন্যা বইয়ে গেল। যাদের ট্যাগ করেছিলেন তারা স্মাইলি ফেস দিয়ে জানালেন ভাগ্যিস তারা কেউ জিপিএ ফাইভ পায়নি।
মার্ক জুকারবার্গ সব জেনে শুনে স্ট্যাটাস দিলেন পৃথিবী বিখ্যাত ঔপন্যাসিক পিথাগোরাসের উপন্যাস কেউ পড়ুক আর না পড়ুক আমার লেখা ফেসবুক অবশ্যই সবাই পড়ে। এবং শুধু মাত্র ফেসবুক পড়লেই জিপিএ ফাইভ পাওয়া যায়।

সেদিন মার্ক জুকারবার্গের ফলোয়ার বেড়ে দাড়ালো একশো কোটি

রাজপুত্রর জন্মদিনের একাল সেকাল




=====================
#জাজাফী
=====================
সাত খুন মাফ বলে একটা কথা প্রচলিত আছে কিন্তু বাস্তবে কেউ কোন দিন দেখেছেন এটা? হু এটা আমি দেখেছি।আমার সাথে আরো অনেকে দেখেছে। মানে যারা ক্যাডেট কলেজে পড়ে তারা অন্তত দেখেছে। আজ সেরকমই একটা গল্প শোনাতে এলাম


রাজপুত্রের মন খারাপ। মন খারাপ তার কারণ এবারই সে বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা বঞ্চিত হয়েছে। চাইলে এটা নিয়ে সে প্লাকার্ড হাতে ফেস্টুন মাথায় বেঁধে পদযাত্রা করতে পারে। কিন্তু এমন একটা সময় চলছে যে রাজপুত্রর সেটা করা সম্ভব হচ্ছেনা। গত বছর এই দিনটার কথা তাই বার বার রাজপুত্রর চোখে ভাসছে। এটা একটা বিশেষ দিন। এই দিনেই সে ভুবন আলো করে তার মায়ের কোলে ঠাই নিয়েছিল। আজ রাজপুত্রর জন্মদিন। জন্মদিনটা এবার বোধ হয় খুব সাদামাটাই হয়ে যাচ্ছে


অথচ এইতো গত বছর জন্মদিনে কলেজে কত কিছুইনা হলো। তার একটা ফিরিস্তি দেওয়াই যেতে পারে


আমি আর আমাদের রাজপুত্র একসাথেই পড়ি।মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ। বিদ্যাই বল কথাটিকে বুকে ধরে এক একটা দিন পার করছি। রাতে লাইটস অফের ঘন্টা বাজার পর সবাই যখন একটু একটু করে ঘুমের দেশে তলিয়ে যাচ্ছে আমি দেখলাম রাজপুত্র তখনো জেগে আছে। আমি জিজ্ঞেস করতেই সে বললো নারে একটু পরে ঘুমাবো। কি কারণে যেন আমারও ঘুম আসছিলনা। আমাদের এই রাজপুত্রর নাম প্রান্ত। প্রন্ত নামটা ঘরে বাইরের কিন্তু বনেদি নাম শাশ্বত। ক্যাডেট শাশ্বত। আমি দেখলাম ডায়েরি নিয়ে কি যেন লিখছে। ডায়েরি লেখার মধ্যে আমি নেই। ঘুমাতে চেষ্টা করতেই ঘুম নেমে আসলো চোখে। কিন্তু বারটার কিছু আগেই কেন জানিনা ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। আমি দেখলাম তখনো জেগেই আছে। আমি অবাক হলাম। ভোর হতে না হতেই যেখানে ব্যস্ততম দিন শুরু হবে সেখানে না ঘুমিয়ে জেগে থাকার সুযোগ কোথায়। আমি যে জেগেছি তা ওকে বুঝতে দেইনি


ঠিক বারটা বাজার এক দু মিনিট আগে ডায়েরিটা বন্ধ করে উঠে দাড়ালো।কাবার্ড(আলমারী) থেকে খুজে পেতে একটা ছোট্ট আয়না বের করলো। আয়নাটা নিজের সামনে ধরে রেখে শোনা যায়না এমন আস্তে করে বললো হ্যাপি বার্থডে টু মি!! আমি ভীষণ চমকে উঠলাম। আরে তাইতো আজতো শাশ্বতর জন্মদিন আর শালা আমি ভুলেই গেছি। অন্যরাও ভুলে বসে আছে! বিছানা ছেড়ে উঠলাম। হকচকিয়ে গেল।আমি ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম হ্যাপি বার্থডে শাশ্বত। সে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়লো। সম্ভবত আমি একটু শব্দ করেই বলে ফেলেছিলাম। আরো একজন দুজন জেগে উঠলো। তবে তারা কিছু বুঝতে পারেনি কি ঘটছে


সকালে ড্রেস ইন্সপেকশানের ফল ইন।আমরা সবাই সারিবদ্ধ ভাবে দাড়িয়ে আছি।আগের রাতেই ঘুমানোর আগে আমি সব ঠিকঠাক করে রেখেছি।জুতা মেটাল পলিশ করে রেখেছি। হঠাৎ শাশ্বতকে হাক ছাড়লেন স্টাফ। এই আপনার জুতা পলিশ নেই কেন?শেভ করেন নাই,মেটাল পলিশ নাই,ভেস্ট পরেন নাই। ফ্রন্টরোল,শুরু করেন ফ্রন্ট রোল। ওদেখি বিপদে পড়ে গেছে। আমার হঠাৎ মনে পড়লো আরে আজতো ওর বার্থ ডে আমি হাত উচিয়ে বললাম স্টাফ,বাদ দেন আজকে। আজকে ছেলেটার বার্থ ডে! স্টাফের মনটা মোমের মত গলে গেল। আরেকটু হলে পানি হয়ে গড়িয়ে যেত। তিনি বললেন আচ্ছা যান আজকের মত মাফ করলাম। তবে কাল থেকে কিন্তু এ গুলো চলবেনা বলে দিলাম।


আমি সময় মত পিটিতে অংশ নিলাম। কিন্তু শাশ্বত সেদিন কিভাবে কিভাবে যেন পিটিতে লেট করলো। সারা বছর কিন্তু পিটিতে লেট করেনা কখনো। স্টাফ পিটিতে লেট করে আসার জন্য ওর নাম নোট করতে গেল। আমি বললাম না না স্টাফ ওর নাম আজকে নোট করেন না। আজ ওর বার্থ ডে! স্টাফ বললেন ঠিক আছে যান বার্থ ডে বলে নাম নোট করলাম না।

ক্লাস রুমে বসে আছি।শাশ্বত আমার পাশের রোতে বসা।ফিজিক্স স্যার ক্লাস নিচ্ছেন।শাশ্বত বললো স্যার টয়লেটে যাব। ফিজিক্স স্যার আবার ইংরেজী ছাড়া কথাই বলেন না।তিনি বললেন নো ভিজিটিং টয়লেট ইন মাই ক্লাস! ইংরেজী শুদ্ধ অশুদ্ধ নিয়ে তিনি কখনো মাথা ঘামান না।এখানেও আমার বাম হাত ঢুকাতে হলো।বললাম স্যার যেতে দিন। আজকে ওর বার্থ ডে। স্যারের মুখটা থমথমে ছিল কিভাবে কিভাবে যেন সেটা হাওয়াই মিঠাইয়ের মত নরম হয়ে গেল। তিনি বললেন যাও। মনে করো আমার পক্ষ থেকে এটা তোমার জন্য বার্থডে ট্রিট।মনে মনে হাসবো না কাদবো বুঝলাম না।টয়লেটে যেতে দেওয়াও যদি বার্থ ডে ট্রিট হয় তাহলে আর বাকি থাকলো কি!

গেমস টাইমটা অসাধারণ কাটে আমার। অন্যদেরটা জানিনা।সকাল থেকে শাশ্বতর বার্থডে উপলক্ষে আমার বার বার বামহাত ঢুকাতে হচ্ছে।আমি মনে মনে প্রস্তুত হলাম গেমস টাইমেও নিশ্চই কিছু না কিছু ঘটবে। এবার মড়ার উপর খাড়ার ঘা। গেমসের সময় অ্যাডজুটেন্ট হাক ছাড়লেন শাশ্বতকে দেখে। ইউ ব্লাডি  ইডিয়ট। হোয়াট ইজ দ্যা কন্ডিশান অফ ইওর পিটি স্যু? গো গেট আ শেল। আমি ভাবছিলাম আর একটুর জন্য ওকে না দুটো ইডি দিয়ে দেয়। অ্যাডজুটেন্টের সামনে কথা বলার মত সাহস কজনের আছে?কি জানি কি হলো হাত উচু করলাম। বললাম স্যার আজকে ওর বার্থ ডে.. ভেবেছিলাম এবার নির্ঘাত আমাকেই এক্সট্রা ড্রিল দিবে। স্যার বললেন সো.....? গো ব্লাডি হারিআপ। 

এবার আর বাম হাত ঢুকিয়েও শাশ্বতকে বাচাতে পারলাম না। পানিশমেন্ট খাওয়ার পর অ্যাডজুটেন্টের মুখের দিকে তাকানোর সাহস ওর ছিলনা। কিন্তু আমি খেয়াল করে দেখলাম অ্যাডজুটেন্টের মূখে হাসি ফুটে উঠেছে। তিনি বললোন ইউ বার্থডে বয় কাম হেয়ার এবং গো টু ক্যাফেটেরিয়া এন্ড এনজয় হোয়াট ইউ ওয়ান্ট।ট্রিট ইজ অন মি। অ্যাডজুটেন্টের কথা শুনে তিন কোটি ওয়াটের বাল্বের মত শাশ্বতর মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। যদিও তিনকোটি ওয়াটের বাল্ব টমাস আলভা এডিসন কেন তার চৌদ্দপুরুষও কল্পনাও করতে পারবেনা।

আহা কলেজে বার্থডে হওয়ার কত সুবিধা সাত খুন মাফ বলে যে কথা আছে এটা তার থেকে কম কিসে?
রাতে বিছানায় শুয়ে শুয়ে শাশ্বত বিড়বিড় করে বললো জীবনের সেরা জন্মদিন ছিল এটা।কিন্তু সকাল থেকে রাত অবধী আমি যে তার জন্য এতো কিছু করলাম সে একটুও সেটার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলো না।আমরা শুধু মনে মনে ভাবি ইস কেন যে কলেজে বার্থডেটা পড়েনা।

সেই রাজপুত্রটার আজকে জন্মদিন। সে এখন কলেজে নেই তাই জানিনা তার গত বছরের জন্মদিনের কথা মনে আছে কিনা।শুনেছি আজ সন্ধ্যায় ওয়েস্টিনে এক জমকালো জন্মদিনের পার্টি হচ্ছে রাজপুত্রর।আমাকে জানায়নি সে। জানানোর প্রয়োজনও নেই বোধ করি।কারণ আজকের পার্টিতেতো কেউ মেটাল পলিশ নিয়ে কথা তুলবেনা কেউ টয়লেটে যেতে নিষেধ করবেনা,কোন স্টাফ ফল ইনে দেরি করার ওযুহাতে নাম লিখে নেবেনা।তাই সেখানে আমার থাকা আর না থাকা সমান।

আমাকে দাওয়াত দেয়নি বলে আমার মনখারাপ তা কিন্তু নয়।আমি আমার মত আছি। সে যদি যেতে বলে আমি যে কোন সময় যেতে প্রস্তুতি আছি। সন্ধ্যার কিছুক্ষন পর আমার ফোনটা বেজে উঠলো।স্ক্রিনে ওর নামটাই দেখতে পেলাম।রিসিভ করে শুভজন্মদিন বলতেই আহ্লাদে গদগদ হয়ে ও বললো শোন তেমন কিছু করা হচ্ছেনা ছোটখাট একটা পার্টি দিচ্ছি।আমি গাড়ি পাঠাচ্ছি তুই চলে আয়।মনে মনে এতো বেশি খুশি হলাম যে ওর বিগত দিনের সব ভুল এবং আগামীতেও যত ভুল করবে তা অগ্রিম মাফ করে দিলাম।আহ দোস্তর জন্মদিন বলে কথা।আমি আম্মুর কাছ থেকে এক হাজার টাকা নিয়ে একটা ভাল ব্রান্ডের পারফিউম কিনলাম।

অপেক্ষায় আছি ওর গাড়ির জন্য।বাইরে থেকে উচু গলায় কেউ একজন ডাকলো নাম ধরে।গলার স্বর শুনেই বুঝতে পারলাম এটা সাদমান ছাড়া কেউ নয়।শাশ্বত তাহলে সাদমানকে দিয়ে গাড়ি পাঠিয়েছে আমাকে নিয়ে যেতে! নিজেকে ভিআইপি ভাবতে ইচ্ছে হলো। গায়ে তিন পদের সেন্ট মেখে ওর জন্য কেনা গিফটা নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখি সাদমানই দাড়িয়ে আছে।কাছে যেতেই বললো বাড্ডি দারুন পার্টি হবে আজকে।আসে পাশে তাকিয়ে কোথাও কোন গাড়ি পেলাম না।সাদমানের সাথে একটা ফনিক্স সাইকেল। সেই সাইকেলের ক্যারিয়ারে বসে চলেছি শাশ্বতর জন্মদিনের পার্টিতে। যে পার্টিটা সে আয়োজন করেছে ওয়েস্টিনে।কিন্তু ভেবে পাচ্ছিনা উত্তরা থেকে এই লক্কড়ঝক্কড় সাইকেলে করে কতক্ষণে ওয়েস্টিনের পার্টিতে যেতে পারবো।

আমাকে অবাক করে দিয়ে একটা বাসার সামনে থামলো সাদমানের সাইকেল।দেখি গেটে দাড়িয়ে আছে তুর্য।আমি বুঝে উঠতেই পারিনি সাদমান কেন আমাকে এখানে নিয়ে আসলো আর তুর্যইবা এখনো এখানে দাড়িয়ে আছে কেন। পরে ভাবলাম মনে হয় এখান থেকে সবাই মিলে কোন পাজেরো মার্সিডিজ বা অন্য যে কোন গাড়িতে করে আমরা পার্টিতে যাব।তুর্য আমার কাধে হাত রেখে বললো দোস্ত আজকে সেই মজা হবে।আমি মনে মনে খুশিই হলাম।রুমে ঢুকতেই দেখি শাশ্বতর আম্মু।আন্টিকে আমি আগে থেকেই চিনি।তার মানে এটা শাশ্বতদের বাসা!তাহলে যে সবাই বললো ওয়েস্টিনে পার্টি হবে।

আমি কিছু বললাম না। রাত সাড়ে দশটার দিকে আমরা বাসার ছাড়ে উঠলাম।মনে পড়ে ফজলুল হক হাউজের ছাদে উঠে আমরা কত কি করতাম। ছাদে বিশাল একটা পাটি পেতে দেওয়া আছে সেখানেই বসে আছে শাশ্বত।যার জন্মদিন সে।ওকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ওর জন্য আনা গিফটটা ওকে দিলাম। খুশি হয়ে ধন্যবাদ দিল।একটু পরেই আন্টি একটা কেক নিয়ে উপরে আসলেন।আমরা কেক কাটলাম জন্মদিনের।এর পর একটা টিনের জারে মুড়ি আর চানাচুর দিয়ে গেলেন।সেই টিনের জারটা ছিল খুবই পুরোনো এবং জং ধরা।


আমি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম বাহ শাশ্বত এই তাহলে তোর ওয়েস্ট টিনের পার্টি!!!!!!!তুর্য সাদমান সহ বাকিরা হেসে উঠলো। আকাশে তখন জোছনারা খেলা করছে। আমার কেন যেন মনে হলো আমরা শাশ্বতদের বাসার ছাদে নই আমরা ফজলুল হক হাউজের ছাদে ক্যাডেটদের প্রিয় থেকে প্রিয়তর মুড়ি চানাচুর পার্টি করছি।কলেজে কারো জন্মদিন মানেই যেটা ছিল অবধারিত।পার্টি শেষে সেদিনও শাশ্বত বললো জীবনের সেরা পার্টি ছিল এটা।আমি জানি বাকি জীবনে যতবার ওর জন্মদিন আসবে সে সেই জন্মদিনটাকেই আগের জন্মদিনের চেয়ে সেরা বলবে। বলুকনা বলতে তো দোষ নেই। কদিন পর ক্লাস ইলেভেনে কলেজে গিয়ে এবারের জন্মদিন নিয়ে গল্পের ঝুলি খুলে বসবে তুর্য আর সাদমান।আমি তখন ভাব করবো যে আমি কিছু জানিইনা।আর চমকে উঠে বলবো ওর জন্মদিন ছিল?ওহহোরে দেখ আমি কত্ত বড় ইডিয়েট যে ওকে শুভেচ্ছা জানাতেই ভুলে গেছি। এই শাশ্বত এই প্রান্ত এই রাজপুত্র শুভজন্মদিন!



কবি সাহিত্যিকদের কবিতায় এ প্লাস যেভাবে উঠে এসেছে।


.....................................................‪#‎জাজাফী‬
=================================
মে মাসের এগার তারিখ দুপুর বেলা অক্ত
ভীড় করেছে স্কুলে আজ এ প্লাসের ভক্ত।
.............................(আল মাহমুদ)।


বন্ধু বান্ধব আজকে আমি দিলাম তোদের ছুটি
এই দেখে যা প্লাস আজ আমার হাতের মুঠি।
..............................(সুকান্ত ভট্রাচার্য)।

আমাদের যুগে আমরা যখন খেলেছি পুতুল খেলা
তোমরা এখন সেই বয়সেই এ প্লাস পাও মেলা।
....................................(সুফিয়া কামাল)।

প্রহর শেষে কষ্টে ভরা সেদিন যে মে মাস
রেজাল্ট হলে দেখেছিলাম আমার সর্বনাশ।
...............................(রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)।

এ প্লাস কথাটি ছোট্ট অতি কিন্তু জেনো ভাই
ইহার চেয়ে নাম যে মধুর এসএসসিতে নাই।
.................................(কাজী কাদের নেওয়াজ)।

তোমাদের পানে চাহিয়া বন্ধু আর আমি জাগিবোনা
এ প্লাস চেয়ে সারাদিনমান কারো ধ্যান ভাঙ্গিবনা।
নিশ্চল নিশ্চুপ!
আপনার মত পুড়িব একাকী গন্ধু বিধুর ধুপ।
...............................(কাজী নজরুল ইসলাম)।


আমাদের এ প্লাসটা সোনার সমান
রেজাল্ট খাতায় সেটা পেলে বাচে সম্মান।
..................................(বন্দে আলী মিয়া)।


এ প্লাসের কত দেরী পাঞ্জেরী?
এখনো তোমার রেজাল্টের নাকি দেরি
এখনোকি তুমি এ প্লাস করছো ফেরী?।
..........................(ফররুখ আহমেদ)।

এ প্লাস পাই আর নাই পাই
আজ রেজাল্ট।
...........(সুভাষ মুখোপাধ্যয়)।

মাগো ওরা বলে তোমার ছেলেকে ওরা এ প্লাস পেতে দেবেনা
বলো মা তাই কি হয়?
................................(আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ)।

যে সবে নকল করিয়া এ প্লাস পায়নি জানি
সে সবে কেমন প্রশ্ন পেলো নির্ণয় ন জানি।
..................................(আব্দুল হাকিম)।

এ প্লাস তুমি শিক্ষামন্ত্রীর দয়ার উপর ফুল ঝুলানো
এ প্লাস তুমি ছাত্র ছাত্রীর হাত উচু করা ভি চিহ্ন।
........................................(শামছুর রাহমান)।

হে শিক্ষা বোর্ড ভান্ডারে তব বিবিধ রেজাল্ট
তা সবে অবোধ আমি অবহেলা করি
এ প্লাস লোভে মত্ত করিনু প্রশ্ন চুরি।
................................(মাইকেল মধুসুদন দত্ত)।

এ প্লাস নেবে এ প্লাস
হরেক রকম এ প্লাস আছে, এ প্লাস নেবে এ প্লাস।
..............................(হেলাল হাফিজ)।

কেউ এ প্লাস পায়নি,এসএসসি পরীক্ষা দিল কেউ এ প্লাস পায়নি
স্কুলের এক ম্যাডাম বলেছিল,প্রশ্ন পত্র নাও তাহলে এ প্লাস পাবে
ম্যাডাম আর কত প্রশ্ন পত্র নেব আমি,তবেই আমাকে এ প্লাস দেওয়া হবে।
.............................................(সুনীল গঙ্গোপাধ্যয়)

প্রিয় ভাই ও বোনেরা
আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থিত হয়েছি। আপনারা সবাই জানেন এবং বুঝেন। আজ এসএসসি পরীক্ষার্থীরা এ প্লাস চায়। পরীক্ষা যখন দিয়েছি পরীক্ষা আরো দেব। তবুও এ প্লাস পেয়েই ছাড়বো ইনশা আল্লাহ।

ঘাস ফড়িং এর জীবন‬


===================================
----------‪#‎জাজাফী‬
===================================
আয়নার দিকে তাকাতে ভয় পাই। আমার মতই আয়না দেখতে ভয় পায় এদেশের ২৬ লাখ ৩১ হাজার যুবক। অবশ্য যুবক না বলে মধ্য বয়সীও বলা যেতে পারে। কারণ ৩০ পেরিয়ে গেলেই নাকি কেউ আর যুবক থাকেনা।আয়নার দিকে তাকালেই যে প্রতিচ্ছবিটি ভেসে ওঠে সেটা এক বেকার যুবকের প্রতিচ্ছবি। অবশ্য আয়নার দিকে তাকানোর প্রয়োজনও পড়েনা তাদের।কারণ চালচুলোহীন জীবনে আয়নায় মলিন মুখ দেখার মত বিলাসীতা ওই সব যুবক বা মধ্যবয়সীদের ভাগ্যেই লেখা নেই। আতিউতি করেও হয়তো তাই ঘরে একটা আয়না পাওয়া যাবেনা। 

ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখলে নাকি অমঙ্গল হয়। কিন্তু ওই সব মানুষেরতো কোন আয়নাই নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যন ব্যুরো (বিবিএস) সম্প্রতি বাংলাদেশ শ্রমশক্তি জরিপের কাজ শেষ করেছে।সেই জরিপে দেখা গেছে দেশে বর্তমানে বেকার সংখ্যা ২৬ লাখ ৩১ হাজার। যারা সপ্তাহে এক ঘন্টাও কাজ করার সুযোগ পায় না। এদের মধ্যে মাধ্যমিক ও প্রাথমিক শিক্ষাগত যোগ্যতা সম্পন্ন বেকারের সংখ্যা যথাক্রমে ৭ লাখ ৭৬ হাজার এবং ২ লাখ ৯২ হাজার। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করাদের মধ্যে ৭ লাখ ১৬ হাজার বেকার। আর স্নাতক বা স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বেকার হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে ৯৪ হাজার মানুষ। 

ন্যুনতম জ্ঞান সম্পন্ন যে কেউ জানে এই জরিপ মোটেও ঠিক সেরকম না। অন্তত যারা চাকরির পরীক্ষা দিচ্ছেন তারা নিশ্চই জানেন। একটা পদের বিপরীতে কয়েক লাখ আবেদন জমা পড়ছে যারা সবাই স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী। তবে সরকার পক্ষের এ নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নেই। কারণ জরিপে যদিও বলা হয়েছে মোট ২৬ লাখ ৩১ হাজার বেকার আছে কিন্তু আদতে বাংলাদেশে একজনও বেকার নেই।

এটা কোন দিবা স্বপ্ন নয় বরং এটাই সত্যি।বিশ্ব আজ অবাক চোখে তাকিয়ে দেখুক বাংলাদেশ শিশু মৃত্যুর হার কমিয়েছে, জিডিপিতে প্রবৃদ্ধির হার সন্তোষজনক অবস্থানে নিয়ে গেছে,যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছে,পদ্মা সেতু করতে শুরু করেছে,বাল্য বিবাহ কমিয়েছে,জনসংখ্যা আনুপাতিক হারে কমিয়েছে এবং সর্বশেষ দেশ বেকার মুক্ত হয়েছে। এই যে বাংলাদেশে এতো এতো বেকার আছে বলে যেটা বলা হয়েছে তা নিয়ে মাথা ঘামাতে নিষেধ করেছে আর্ন্তজাতিক শ্রম সংগঠন আইএলও এর বেকারত্বের সংজ্ঞা। 

আইএলও বেকারদের সংজ্ঞা দিয়েছেন বেশ ভাল ভাবে এবং সেই সংজ্ঞা পড়ে দেশের সরকার এবং রাষ্ট্রযন্ত্র নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন এবং বাকিদের চোখের জল, বুকের হাতাশাকে পাশ কাটিয়ে যেতে পারেন অনায়াসেই। আইএলওর সংজ্ঞা অনুযায়ি সপ্তাহে কেউ যদি অন্তত এক ঘন্টা গৃহস্থালির কাজও করেন তবে তাকে আর বেকারের তালিকায় রাখা যায়না।
সপ্তাহে এক ঘন্টা মানে দিনে আট মিনিট করে পরিশ্রম করার কথা বলা হয়েছে। এই আট মিনিট গৃহস্থালির কাজ করেনা এমন লোক এ দেশে একজনও নেই। সুতরাং আমাদের দেশে কোনই বেকার নেই। যেহেতু আমাদের দেশে কোন বেকার নেই সেহেতু কোম্পানী গুলো এখন থেকে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিদেশ থেকে শ্রম শক্তি আমদানী করতে পারে।দেশের সুনাম আরো বাড়বে। বর্হিবিশ্ব জানবে বাংলাদেশ এতোটাই উন্নত হয়ে গেছে যে বিদেশ থেকে শ্রমিক কর্মচারি আমদানি করছে।

জন সংখ্যা নিয়ন্ত্রনে রাখার জন্য আমরা কতরকম পদক্ষেপ নিয়েছি কিন্তু কাজের কাজ তেমন কিছুই হয়নি। অথচ মুখের একটি কথাই রাতারাতি জনসংখ্যাকে স্থির করে দিয়েছে। এখন বেকারত্বের বোঝা মাথায় নিয়ে বেঁচে থাকা ওই ২৬ লাখ ৩১ হাজার যুবক নাম ধারী মধ্যবয়সীদের দুই কুলই হারিয়েছে। সকালের সুর্য ওঠার আগেই তাদের বিয়ে ভেঙ্গে গেছে,বান্ধবী ছেড়ে চলে গেছে। 

সংজ্ঞা অনুযায়ি ৩০ পেরিয়ে গেলে কেউ আর যুবক থাকেনা। যেহেতু যুবক থাকেনা তাই কোন বাবা মাই চায়না তাদের মেয়েকে কোন মাঝ বয়সীদের সাথে বিয়ে দিতে। অন্য দিকে যদি যুবক কারো সাথে বিয়ে দিতে হয় তবে সে অবধারিত ভাবেই বেকার। কোন বাবা মা এটাও চায়না যে তাদের মেয়ের কোন বেকারের সাথে বিয়ে হোক। 

বিচুর্ণ আয়নায় মুখ দেখলে অমঙ্গল হয় এই ভাবনাটুকু ভাবার আগে আপনা আপনিই স্বপ্ন ভংগ হয়। আর যেহেতু বিয়ে হচ্ছেনা, যেহেতু মধ্য বয়সী হয়ে গেছে তাই সংসার সন্তান কোনটাই আর হবেনা। একই সাথে জনসংখ্যা নিয়মন্ত্রন হবে, বেঁচে যাবে বরাদ্দ কৃত জন্মনিয়ন্ত্রনের সামগ্রি।

একজন বেকার অতঃপর মধ্য বয়সীর বিয়ের মত বিলাসীতাও সাঝেনা। এ ছাড়াও শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই এমন বেকারও আছে ৪ লাখ ১৩ হাজারের অধিক। কিন্তু এটা নিয়ে ভাবার সময় কোথায়? আইএলও যেখানে বলে দিয়েছে দিনে আট মিনিট কাজ করলেই তাকে আর বেকার বলা চলেনা সেখানে আমরাতো প্রতিনিয়তই ঘন্টা ধরে বেঁচে থাকার জন্য লড়ছি।
কোন এক দায়িত্বশীল ব্যক্তি একদিন বলেছিলেন, এ দেশে কোন বেকার নেই। কারণ চাকরি খোঁজাও একটা কাজ। সেই দিক বিবেচনা করলে তার কথাটা অকপটে স্বীকার করতেই হয়। “কি যাতনা বিষে বুঝিবে সে কিসে? কভু আসিবিষে দংশেনি যারে” বেকারত্বের যন্ত্রনা যে কী ভয়াবহ তা কেবল বেকারেরাই জানে। 

এদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার দরুন অধিকাংশই পাশ করে বের হতে হতে বয়স পেরিয়ে যায়। সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ানো হবেনা। যে বাবার কাঁধে বসে বেকার হয়ে খাচ্ছি, সে বাবার অবসরে যাওয়ার বয়স বাড়ানো হচ্ছে কিন্তু যে ছেলেটি বেকার হয়ে বাবার কাঁধে বসে খাচ্ছে তার চাকরিতে প্রবেশের বয়স বাড়ছেনা। ফলে ভবিষ্যত আরো অনিশ্চিত হচ্ছে। 

ছেলেটির কর্ম সংস্থান হলে শেষ বয়সে বাবা মা তার উপর নির্ভর করতে পারতো সেখানে হচ্ছে উল্টো। প্রবীন বাবার উপর বোঝার মত চেপে বসছি আমরা। যে বয়সে কাজ করে খাবার কথা আমরা সেই বয়সে বাবার কাঁধে আলাদীনের দৈত্যের মত চেপে বসেছি। আর যে বয়সে বাবার একটু খানি আরাম করার কথা সেই বয়সে বাবাকে চাকরি করতে হচ্ছে।
চাকরি দাতা কোম্পানী গুলো লোক নিয়োগের ক্ষেত্রে এমন সব অজুহাত দাড় করাচ্ছে যে অধিকাংশই খেই হারিয়ে ফেলছি।একটা চাকরির বিজ্ঞাপনে যত গুলো শর্ত থাকে তার একটা বাদে সব গুলোতে যোগ্য হওয়ার পরও সিংহভাগ মানুষ সেই চাকরিতে আবেদনই করতে পারছেনা। সেই একটি শর্ত হলো সাবজেক্টের খড়গ। 

যে যে বিষয়েই পড়ুকনা কেন তাকে অন্তত প্রতিযোগিতার বিশ্বে একটু খানি প্রতিযোগিতার সুযোগ দেওয়া উচিত।সেই প্রতিযোগিতায় যদি সে টিকে যায় তবে তাকে যোগ্য বলে মেনে নিতে সমস্যা কোথায় এ সমাজ ব্যবস্থার। প্রতিনিয়ত আমরাই নানা ক্ষেত্রে বৈষম্য তৈরি করছি আবার আমরাই বলছি আমরা অসাম্প্রদায়িক, আমরা সমান অধিকারে বিশ্বাসী। এভাবে চলতে থাকলে নিশ্চিত একদিন এ শহর, এ আকাশ বেকারদের দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়ে উঠবে। সে ভার কি সইতে পারবে এ আকাশ এ জাতি।
.........................................................................................................................
১২ মে ২০১৬