বিভাজিত বাঙালী জাতিসত্ত্বা

আমরা শত ভাগে বিভক্ত এক জাতি। যদি দশজন বাঙ্গালী কবি সাহিত্যিকের নামের তালিকা করতে বলি দেখা যাবে সেখানে প্রথম সারির কবি সাহিত্যিকরা থাকবেন কিন্তু যদি একজন কবি বা সাহিত্যিককে নির্বাচিত করতে বলি তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাজী নজরুল ইসলামের নাম অবলিলাক্রমে বাদ পড়বে। একদল রীবন্দ্রনাথের নাম কেটে নজরুলের নাম বসাবে আর একদল নজরুলের নাম কেটে রবীন্দ্রনাথের নাম বসাবে।

দশজন রাজনীতিবিদের নামের তালিকা করতে বললে দেখা যাবে শেরে বাংলা থেকে ভাসানী হয়ে বঙ্গবন্ধু অবধারিত ভাবেই থাকবেন। জিয়াউর রহমান এরশাদও হয়তো থাকবে এবং মতিউর রহমান নিজামিরাও মতাদর্শীদের তালিকায় ঠাই পাবে। কিন্তু যদি একজনের নাম উল্লেখ করতে বলা হয় তবে বাদ পড়বেন শেরে বাংলা বাদ পড়বেন ভাসানী জিয়াউর রহমান এবং বঙ্গবন্ধুকেও বাদ দিবে এ দেশের অনেক মানুষ। নিজের মতাদর্শের বাইরের কাউকেই আমরা কৃতীত্ব দিতে রাজি নই। তাহলে দেশটাকে আমরা উন্নত করবো কি করে?

এ দেশের রাস্তায় রাস্তায় গিয়ে মতামত নিয়ে দেখুন দেশের অগণিত টিভি চ্যানেলের একটাকেও কেউ নিরপেক্ষ হিসেবে ভোট দিবেনা। একটা পত্রিকাকেও নিরপেক্ষ হিসেবে দেখেনে এ দেশের প্রতিটি মানুষ।
বাসের কন্ট্রাকটর মনে করে যাত্রীরা তাকে জোর করে কম ভাড়া দিচ্ছে আর যাত্রীরা মনে করে বাসের লোকেরা জোর করে তাদের থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছে।
মেয়েরা মনে করছে নিয়মিত তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে আর ছেলেরা মনে করছে সম অধিকারের নামে মেয়েদের নানা ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

সরকারী দল মনে করে বিগত সময়ে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কিছুই করেনি,সব উন্নয়ন তারা করেছে। আর বিরোধী দল মনে করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
ট্রেনের যাত্রীদের অনেকেই মনে করে ট্রেনতো সরকারের টাকায় চলে। ভাড়া না দিলেইবা কি আর টিটি মনে করে যাদের থেকে টাকা নিলাম তারাতো ফাও। টাকা গুলো জমা না দিলেইবা কি।
বাংলা মিডিয়ামের ছেলে মেয়েরা মনে করছে আরে ধুর ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলে মেয়েরা আবার কিছু শেখে নাকি? আর ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলে মেয়েরা মনে করছে বাংলা মিডিয়ামে পড়ে কি জীবনে কিছু করা যায় নাকি।

রাজউকিয়ানরা বলছে "রাজউকিয়ান্স আর বর্ন টু লিড" ডিআরএমসি খোচা দিচ্ছে এনডিসিকে আর এনডিসি খোচাচ্ছে অন্যদেরকে।
বুয়েটিয়ানরা পাত্তা দিচ্ছেনা ঢাবিকে আর ঢাবি পাত্তা দিচ্ছেনা বুয়েটিয়ানদের।
সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই মনে করছে বেসরকারীতে কি আর কোন লেখাপড়া হয়। হুদাই বিশাল সিজিপিএ দেওয়া হচ্ছে। আর বেসরকারীরা মনে করছে সরকারীতে পড়ে জীবনে কিছুই করা যায়না। সময় নষ্ট হয়।

মেসি ভক্তরা মনে করে রোনালদো মেসির ধারে কাছেও নেই আর রোনালদো ভক্তরা মনে করছে মেসি আবার খেলা শিখলো কবে?
মেরাডোনা আর পেলের কথা বাদই দিলাম। তারা গলা ফাটিয়ে নিজেদের ঢোল পিটিয়ে কি প্রমান করতে চাইছে তা জানিনা। নিজেদের সেরা বলা না বলায় পাবলিকের কিছু যায় আসেনা। পাবলিক নিজে যা মনে করে তাই করবে। বিশেষত বাঙ্গালীরাতো অবশ্যই।
একটা গল্প শুনুন। অনেক বছর আগে মাগুরাতে নিতাই রায় চৌধুরী তার মাকে বলেছে মা এবার কিন্তু নির্বাচনে নৌকা নেই। তাই তুমি আমার লাঙ্গলেই ভোট দিও। বৃদ্ধা মা ছেলেকে কথা দিয়েছেন। নির্বাচন বুথে গিয়ে দেখলেন নৌকা আছে তখন নিজের ছেলেকে ভোট না দিয়ে তিনি নৌকাতেই ভোট দিলেন। বাড়ি ফিরে বললেন কিরে নিতাই এবার নাকি নৌকা নেই? আমিতো দেখলাম নৌকা আছে। নৌকাতেই ভোট দিয়ে এসেছি।

মোদ্দা কথা হলো কামারে যা করে তা মনে মনেই করে।

বাবা আমাকে ভালই বাসেনা আমিও বাবাকে ভালবাসিনা

বাবা দিবস আজ তাইনা? সবাই দেখছি বাবার সাথে নিজের ছবি আপলোড দিচ্ছে,সুন্দর সুন্দর স্মৃতি রোমন্থন করছে। আমার কোন বাবা দিবস নেই! কারণ আমার বাবা আমাকে ভালবাসে না! আমিও তাই বাবাকে ভালবাসি না!

১। আমি তখন খুব ছোট। বাবা পুকুরে সাতার কেটে কেটে গোসল করতেন। আমি বললাম বাবা আমিও পুকুরে নামবো। বাবা পুকুর থেকে উঠে এসে আমাকে তুলে ধরলেন তার পর ছুড়ে মারলেন পুকুরের পানিতে! আমি প্রায় ডুবেই যাচ্ছিলাম। অনেক পানি খেলাম।বাবা তখন আমাকে তুলে নিলেন। এভাবে অনেক বার বাবা আমাকে মাঝ পুকুরে ছুড়ে মেরেছেন।আমি অবিরাম পানি খেয়েছি আর ডুবতে ডুবতে বেঁচে গেছি। আমার বাবা আমাকে ভালবাসলে নিশ্চই ওভাবে ছুড়ে ফেলতেন না।

২। আমার বাবা আমাকে ভালবাসেনা। আমিও বাবাকে ভালবাসিনা। আমি তখন একটু বড় হয়েছি। ভাইয়ার একটা সাইকেল ছিল।আমি চাইতাম সেই সাইকেল চালানো শিখবো।বাবাকে অনেকবার বলার পর বাবা আমাকে সাইকেলে চড়তে দিলেন। নিজে পিছনে ধরে রাখলেন।আমি খুব বিশ্বাস করে সাইকেলে উঠেবসলাম। প্যাডেল করলাম আস্তে আস্তে। বাবা তখন হুট করে সাইকেলে ধাক্কা দিয়ে ছেড়ে দিলেন। আমি কিছুদুর গিয়ে পড়ে গেলাম। হাটু ছুলে গেল। এভাবে বাবা আমাকে অনেক বার সাইকেলে চড়িয়ে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছেন। বাবা যদি আমাকে ভালবাসতো তবে নিশ্চই আমাকে ওভাবে সাইকেলে বসিয়ে দিয়ে পিছন থেকে জোরে ধাক্কা দিতেন না।

৩। আমার বাবা আমাকে ভালবাসেনা। আমিও বাবাকে ভালবাসিনা। আমি জুতার ফিতা বাধতে পারতাম না।বাবাকে বলার পরও বাবা আমার জুতার ফিতা বেধে দিত না। অথচ আমার অন্য বন্ধুদের বাবা তাদের জুতার ফিতা বেধে দিত।বাবা আমার পাশে বসে বার বার বলতেন এভাবে বাধো ওভাবেবাধো কিন্তু নিজে বেধে দিতেন না। বাবা যদি আমাকে ভালবাসতেন তবে নিশ্চই ছোট বেলা আমার জুতার ফিতা বেধে দিতেন।

৪। আমার বাবা আমাকে ভালবাসেনা। আমিও বাবাকে ভালবাসিনা। বাবার চা খাওয়ার খুব নেশা আছে।নিজে একা একা চা বানিয়ে খায়।আমি যখন বলি বাবা আমাকেও এক কাপ দাওনা প্লিজ। বাবা কিচেন দেখিয়ে দেয়। বলে দেয় কি কি করতে হবে। নিজের বানানো এককাপ চা খাওয়ার পরও বলে আমার জন্যও এক কাপ বানাসতো। আমার বাবা যদি আমাকে ভালবাসতো তবে নিজে যখন চা বানিয়েছিল আমার জন্যও এক কাপ বানাতো।

৫। আমার বাবা আমাকে ভালবাসেনা। আমিও বাবাকে ভালবাসিনা। বাবা খুব গাছে চড়তে পারতো।আমারও খুব লোভ হত। বাবাকে বলতেই বাবা আমাকে কাধে করে নারকেল গাছের বেশ উপরে নিয়ে যেত। তার পর বলতো গাছ জড়িয়ে ধরতে। আমি যখনি জড়িয়ে ধরতাম বাবা আমাকে ফেলে রেখে তরতর করে নিচে নেমে যেত। আমার কান্না পেতো। আমি তখন আস্তে আস্তে হেচড়েপেচড়ে নিচে নামতাম আর আমার বুকটা ছুলে যেত। বাবা যদি আমাকে ভালবাসতো তবে ওরকমটি করতে পারতো না।

এক প্যারেন্টস ডেতে বাবাকে নিয়ে বলতে বলা হয়েছিল আমাকে। আমি তখন এসব কথা বলেছিলাম। এ গুলোই ছিল বাবার বিরুদ্ধে আমার অভিযোগ। পরদিন বাংলা মিস ক্লাসে এসে বললেন আজ আর আমি পড়াবোনা। তোমাদের সাথে গল্প করবো।তোমাদেরকে কিছু প্রশ্ন করবো তোমরা যারা উত্তর জানো তারা হাত উচু করবা আর না জানলে চুপ থাকবা। তিনি প্রশ্ন করলেন তোমাদের মধ্যে কে কে সাতার কাটতে পারো? আমি সাথে সাথে হাত উচু করলাম। মিস আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলেন। আমি আশেপাশে তাকিয়ে দেখি আর কেউ হাত উচু করেনি। আমরা তখন ক্লাস ফোরে পড়ি। এর পর মিস একে একে প্রশ্ন করলেন কে কে সাইকেল চালাতে পারো কে কে গাছে চড়তে পারো কে কে নিজে নিজে জুতার ফিতা বাধতে পারো ইত্যাদি ইত্যাদি। দেখা গেল আমি ছাড়া আর কেউ হাত উচু করছেনা। মিসের চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো। 

আমার কাধে হাত রেখে বললেন ইবন তুমিকি বুঝতে পারছো কিছু? আমি বুঝতে পারলাম।আমার চোখেও তখন পানি চলে এসেছিল।মিসকে জড়িয়ে ধরে কেদেছিলাম আমি।তার পর ছুটি নিয়ে বাড়িতে গিয়ে দেখি বাবা বসে আছে। আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরে অনেক ক্ষণ কেঁদেছিলাম। বলেছিলাম বাবা তুমিই পৃথিবীর সেরা বাবা।
এখনও আমি বাবাকে খুব বেশি ভালবাসিনা!

কিছুদিন আগে ব্যান্ড শিল্পী হাসান সাহেবের বাসায় গিয়েছিলাম।আমাকে নাস্তা দেওয়ার পর আমি শুধু চা আর বিস্কুট বাদে কিছু খাইনি। আম খাইনি লিচু খাইনি এমনকি আপেলও খাইনি। হাসান সাহেবের বাসার অন্যরাতো অবাক।আমি বললাম দেখুন আমি কি করে এটা খাই? এ বছর আমার বাবা এখনো আম খেয়েছে কিনা আমি জানিনা,এখনো একটা লিচু খেয়েছে কিনা জানিনা,একটুকরো আপলে খেয়েছে কিনা জানিনা। তাহলে আমি কি করে খাই? আমি বাবাকে ভালবাসিনা! তাই আমার কোন বাবা দিবস নেই। রোজ নামাজ পড়ে অন্যরা যখন রব্বির হামহুমা কামা রব্বা ইয়ানি ছগিরা বলে দোয়া করে আমি করি তার উল্টোটা। আমি বলি "হে আল্লাহ আমার জীবনের সমস্ত হায়াত নিয়ে হলেও আমার বাবা মাকে দীর্ঘায়ু দান করো"

আমি প্রমান করে দিতে পারি এই পৃথিবীতে আমার বাবার মত সেরা বাবা একটিও নেই।যে কেউ আমার সাথে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন তার বাবাকে নিয়ে। হয়তো কারো কারো বাবা তাকে মাসে দু মাসে আগ্রার তাজমহল,মিশরের পিরামিড কিংবা নায়াগ্রা ফলস দেখাতে নিয়ে যায়,হয়তো কারো কারো বাবা তাকে আইফোন সিক্স থেকে শুরু করে অন্য সব না চাইতেই দেয়।কিন্তু আমার বাবা আমাকে কতটা দেয় সেটা আমি জানি। মনেও পড়েনা কবে বাবাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছি!এমনকি ঈদের দিনেও না। তবে বাবা আমাকে একটা কথা বলেছিলেন সেটা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করেছি।

"দেবার মত কিছুই আমার নেই।তোমার কাছে চাওয়ারও কিছু নেই। এই ছয় হাজার টাকা দিলাম এটা নিয়ে পথে রওনা হও।দেখ কতটা যেতে পারো।তবে মনে রেখ যে সম্মানটুকু আমার আছে তা যেন না কমে।তুমি আমার সম্মান বাড়াতে পারো না পারো সেটা বড় নয় কিন্তু আমার ওই সম্মানটুকু যেন না কমে"। 

আমি বাবার সম্মান কমাইনি।আমিকি বাবাকে ভালবাসিনা?
এবার একটা গল্প বলি শুনুন
এক বৃদ্ধ লোক একটা মোবাইল মেকানিকের কাছে তার মোবাইলটা দিয়ে বললেন দেখতো বাবা আমার মোবাইলটার কি সমস্যা। মোবাইল মেকানিক ভাল করে দেখে বললেন চাচা আপনার মোবাইলেরতো কোন সমস্যা নেই। বৃদ্ধা তখন মোবাইলটা হাতে নিতে নিতে বললেন মোবাইল যদি ঠিকই থাকবে তবে এই মোবাইলে আমার ছেলে মেয়েদের ফোন আসেনা কেন?বৃদ্ধর চোখে তখন অবিরাম অশ্রুধারা।(তার সন্তানেরা তাকে ছেড়ে চলে গেছে আলিশান বাড়িতে)।(এটা নিয়ে আমার একটা গল্প আছে পরে শেয়ার করবো)

শুধু চাওয়া একটাই পৃথিবীতে কোন বাবাকে যেন উহ শব্দটিও করতে না হয়।ফেসবুকের পাতায় যেন বাবাপ্রীতি সীমাবদ্ধ না থাকে।বিয়ের পরপরই বাবা মা যেন পর হয়ে না যায়।

তারেকের ব্রেকাপ কিংবা সালিম ভাইয়ের ভাইভা



ক্লাসে ঢুকে দেখি তারেক এক কোনায় মুখ গোমরা করে বসে আছে। আমি কাছে গিয়ে বললাম কিরে মন খারাপ কেন? সে জানাল সব শেষ হয়ে গেছে। ওর কথা থেকে বুঝলাম ছোট্ট একটা এসএমএস এর কারণে তারেকের রিলেশান ব্রেকাপ হয়ে গেছে। একটা এসএমএস যে মানুষের সাত বছরের রিলেশান ব্রেক করে দিতে পারে তা জানা ছিলনা। আমি বললাম দেখিতো কি এসএমএস।মোবাইলটা আনমনে সে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল।আমি ম্যাসেজ ঘাটতে গিয়ে দেখলাম সব ম্যাসেজই অনামিকার। অনামিকা তারেকের বান্ধবী। আমি শেষ ম্যাসেজটা বের করে পড়তে শুরু করলাম। খুব যত্ন করে ভালবাসা মাখিয়ে অনামিকা ওকে ম্যাসেজ দিয়েছে।

" If you are smiling,Send me your smile.
If you are sleeping,Send me your Dreams.
If you are Crying,Send me your Tears.
You know I love you More than i can say "

ম্যাসেজ পড়ে আবেগাক্রান্ত হয়ে প্রায় ক্রাশ খাইতেছিলাম!! এতো সুন্দর করে কেবল প্রেমিকারাই ম্যাসেজ দিতে পারে। আমি বললাম তোর বান্ধবীতো অসাধারন ম্যাসেজ দিয়েছে এতে ব্রেকাপ হওয়ারতো কিছু দেখিনা। তারেক একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো সে যখন ম্যাসেজটা দিয়েছিল আমি তখন ওয়াশ রুমে ছিলাম।ভাবলাম সাথে সাথেই ম্যাসেজের উত্তরটা দেই। তো উত্তর দিতেই সে ব্রেকাপ করে দিল!
আমি কৌতুহলী হয়ে জানতে চাইলাম "তুই তোর বান্ধবীর দেওয়া অসাধারণ ওই ম্যাসেজের উত্তরে কি লিখেছিলি যে ব্রেকাপ হয়ে গেল" সে কোন কথা বললো না। আমি সেন্ট আইটেমে গিয়ে দেখলাম ওর শেষ ম্যাসেজ।
" I am in the Toilet, What should I send? "

আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। কি প্রশ্নের কি উত্তর দিয়েছে গাধাটা! যদিও জানি সে মজা করার জন্য বলেছে। তবে ব্যক্তি জীবনে একটা কথা মনে রাখা দরকার যে কোন সময়ে কি সম্মোধন করতে হয় তা না জানলে হিতে বিপরীত হয়। যেটা হয়েছে তারেকের ক্ষেত্রে।

তো চলুন না একটা গল্প শুনি----সময়ের উত্তর সময়ে না দিলে কি হয় সেটাই গল্পের মুল।

ইন্টারভিউ বোর্ড বসেছে। লোক নিবে চার পাচ জন কিন্তু পরীক্ষার্থী অনেক। আমাদের সালিম ভাইও গিয়েছে পরীক্ষা দিতে।তার প্রস্তুতি একেবারে যাচ্ছেতাই। সে মনে মনে ভেবেছে ওখানে গিয়ে সবার সাথে আলোচনা করলেই ভাইভা দেওয়ার মত ব্যবস্থা হয়ে যাবে। তো একে একে পরীক্ষার্থীরা ভাইভা দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে আর সালিম ভাইয়ের ডাক আসার সময় চলে আসছে। সালিম ভাইয়ের আগে যে ব্যক্তি ভাইভা দিয়ে বের হলেন সালিম ভাই তাকে থামিয়ে জানতে চাইলেন
--তা ভাই কি কি প্রশ্ন করলো আপনাকে?

লোকটা বললো ভাই প্রশ্নগুলো মনে নেই তবে উত্তর মনে আছে।সালিম ভাই বললো আরে এটাইতো চাইছি। উত্তর গুলোই দিন। প্রশ্ন মনে রেখে লাভ কি?
লোকটা বললেন প্রথম প্রশ্নের উত্তর হবে পলাশীর যুদ্ধে। দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর হবে হওয়ার কথা ছিল ১৯৮৭ সালে কিন্তু হয়েছে ১৯৮৮ সালে। তৃতীয় প্রশ্নের উত্তর হবে আছেতো অনেক জন কোনটা রেখে কোনটা বলবো। আর শেষ প্রশ্নের উত্তর হবে আপনি ঠিকই বলেছেন।ধন্যবাদ।

লোকটার উত্তর গুলো বেশ ভালভাবে রপ্ত করে সালিম ভাই ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হলেন।
বোর্ডকর্মকর্তারা তাকে প্রশ্ন করলো এই চাকরির আগে আপনি কোথায় ছিলেন?সালিম ভাই মুখস্থ উত্তর দিলেন পলাশীর যুদ্ধে। প্রশ্নকর্তারা মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো।তাদের মুখে হাসি।দ্বিতীয় পশ্ন করা হলো আপনার জন্ম কত সালে?সালিম ভাই আগের মতই উত্তর দিলেন হওয়ার কথা ছিল ১৯৮৭ সালে কিন্তু হয়েছে ১৯৮৮ সালে। প্রশ্ন কর্তারা বোধহয় খুব মজার সাথে নিলেন বিষয়টা। তারা প্রশ্ন করলো মাহাত্মাগান্ধীর বাবার নাম কি? সালিম ভাই বললেন আছেতো অনেক জন। কোনটা রেখে কোনটা বলবো?

প্রশ্নকর্তারা কিছুক্ষণ থামলেন।তারা হাসিতে ফেটে পড়ছিল প্রায়। শেষ প্রশ্ন করা হলো সালিম ভাইকে। বলা হলো আপনারতো এই চাকরিটার কোন দরকার নেই।আপনি কি বলেন? সালিম ভাই মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে ফেললেন আপনি ঠিকই বলেছেন,ধন্যবাদ।
এবার হো হো করে হেসে উঠলো প্রশ্নকর্তারা। ঠিক তখন সালিম ভাইয়ের খেয়াল হলো যে কোন প্রশ্নের সে কী জবাব দিয়েছে।
মোদ্দা কথা হলো সঠিক সময়ে সঠিক ভাবে উত্তর না দিয়ে সালিম ভাইয়ের মতই আমার বন্ধু তারেক ফেসে গেছে। তার ব্রেকাপ হয়ে গেছে।

মিথ্যার উপর ভিত্তি করে দাড়িয়ে আছি আমরা

ইফতার পার্টিতে দাওয়াত পেয়েছে তানিশা আপু আর তার স্বামী।টেবিলে সাজানো আছে হরেক রকম জুস,শরবত এবং অন্যান্য খাবার।যে কেউ ইচ্ছা মত খেতে পারবে।তানিশা আপু আর তার স্বামী বেছে নিলেন পেস্তা বাদামের শরবত।অন্য গুলোর তুলনায় এটার দাম বেশি।নিজেদের যে সামান্য আয় তা দিয়ে পেস্তাবাদামের শরবত কিনে খাওয়ার কথা তখন তারা চিন্তাই করতে পারেনা। তানিশা আপুদের মত অনেকেই পেস্তাবাদামের শরবতই নিলেন। কিন্তু ইফতারির পর খাওয়ার সময় সবাই দেখা গেল বমি করে উগরে দিচ্ছে।বিষয়টা কি সেটা জানার জন্য যে শরবত বানিয়েছিল তাকে ডেকে এনে কিভাবে এই শরবত বানিয়েছে তা জানতে চাওয়া হলো। সে জানালো বাজারে পেস্তাবাদামের যে দাম তাতে তা দিয়ে শরবত বানানো খুবই কঠিন।টাকাও ছিলনা অত তাই বুদ্ধি করে সহজেই পেস্তাবাদামের শরবত বানিয়েছি। সবাই অবাক হয়ে জানতে চাইলো তা বুদ্ধিটা কি?তখন সে জানালো লাক্স সাবানে আছে পেস্তাবাদাম আর ডাব সাবানে আছে দুধ। তাই খুব কম টাকায় দুটো লাক্স সাবান আর দুটো ডাব সাবান কিনে সেটা গুলিয়েই শরবত বানিয়েছি। হয়ে গেছে পেস্তাবাদামের শরবত! 

সবাই যখন ওকে এক হাত দেখে নিতে যাবে তখন দাদা ভাই সবাইকে থামি দিয়ে বললো ওর আর দোষ কি বলো? দেখ কি দিন এসে গেল যে খাবার তৈরি হয় বিষাক্ত জিনিষ দিয়ে আর সাবান তৈরি হয় ফলমুল শাক সবজি দিয়ে।
দুবছরে তানিশা আপুর স্বামীর বেতন বেড়েছে মোটামুটি। কিছু টাকাও জমিয়েছে সে। একদিন তানিশা আপু তার স্বামীকে ফোন করে বললো ওগো শুনছো আমাকে কিছু টাকা দেওয়া যাবে আমি না স্পা নেব।তানিশা আপুর স্বামী বললেন এ আর এমন কি? কতটাকা লাগবে বলো।আপুর যেন খুশি আর ধরেনা।খুশিতে গদগদ হয়ে বললো বেশি না মাত্র এক লাখ টাকা।তাহমিদ ভাইয়া চুপ হয়ে গেলেন। তিনি চিন্তা করে দেখলেন সামান্য স্পা নিতে এক লাখ টাকা লাগবে?এই ঢাকা শহরে অন্তত কয়েক লক্ষ মানুষ আছে যাদেরকে এক লাখ টাকা দিলে বিশ বছর খেয়ে পরে বেঁচে থাকতে পারবে কারণ তারা কেউ কেউ দিন একবার খায় আবার কেউ কেউ দুই দিনে একবার খায়।চুপ থাকতে দেখে তানিশা আপু জানতে চাইলেন কি হলো দিবা টাকাটা? তাহমিদ ভাইয়া গলা খাকারি দিয়ে বললেন চিন্তা করোনা জানটুশ আমি তোমার জন্য স্পা নিয়ে আসতেছি।এটা শুনে তানিশা আপু যেন দুনিয়াতে বসেই স্বর্গ হাতে পেলেন।
অন্যরা যেখানে পার্লারে গিয়ে স্পা নেয় সেখানে তার স্বামী তার জন্য বাসায় নিয়ে আসছে এটা সত্যিই অকল্পনীয়। 

সে সাথে সাথে তার বান্ধবীদেরকে ফোন করে সব জানালো।অন্যরা সব শুনে তারা সবাই ঈর্ষান্বিত হলো। তানিশা আপু এই খুশিতে তাহমিদ ভাইয়ার জন্য তার পছন্দ মত সব খাবার রান্না করলেন। বাসায় ফিরে তাহমিদ ভাইয়া দেখলেন এলাহী কান্ড।খাবার টেবিলে নানা পদের খাবার।সে খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুললো। তানিশা আপু তখন স্বামীকে স্পার কথাটা মনে করিয়ে দিলেন। তাহমিদ ভাইয়া বললেন আরে আমিকি আর ওটার কথা ভুলি।আমি অবশ্যই তোমার জন্য স্পা নিয়ে এসেছি।তানিশা আপু এখানে সেখানে খুজেও স্পা পেলো না।ঠিক তখন তাহমিদ ভাইয়া তার হাতে একটি পানির বোতল ধরিয়ে দিলেন যার নাম স্পা!তানিশা আপু মেজাজ খারাপ করে শোবার ঘরে চলে গেল।

পরদিন সকালে ভাইয়া অফিসে চলে গেলে তানিশা আপু সবে মাত্র সোফাতে আরাম করে বসেছে ঠিক তখন দরজায় নক করলো।দরজা খুলেতেই দেখা গেল একটা বিশ বাইশ বছরের ছেলে হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে। সে বললো ম্যাডাম আমি এসেছি স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেড থেকে। আচ্ছা ম্যাডাম মনে করে দেখুনতো শেষ কবে দুধ দিয়ে গোসল করেছেন? এক কথা শোনার সাথে সাথে আগের রাতের রাগ উসকে উঠলো তানিশা আপুর মনে। সে ঝেটিয়ে বিদায় করলো লোকটাকে। আর বললো মশকরার জায়গা পায়না লোকজন।দুধ দিয়ে গোসল করাতে এসেছে। যে দেশের সিংহভাগ মানুষ দিনে দু বেলা পেট ভরে ডাল ভাতই খেতে পারেনা সেখানে দুধ দিয়ে গোলস করানোর রসিকতা করতে এসেছে। 

ওদিকে তাহমিদ ভাইয়া অফিস শেষে গেলেন একটা সিমেন্টের দোকানে।তার অনেক দিন থেকেই ভুল হচ্ছে সিমেন্ট কেনার কথা কিন্তু কেনা হচ্ছেনা। তিনি বেশ ভাল একটা দোকানে গিয়ে বললেন আপনাদের এখানে কোন কোন ব্রান্ডের সিমেন্ট আছে? আমাকে একটু দেখান।দোকানদার বিশাল বড় কাস্টমার পেয়ে খুশিতে আটখানা হয়ে গেলেন।কাজের ছেলেটিকে বলে চা বিস্কুট আনালেন সাথে কোল্ড ড্রিংসও আনালেন। তাহমিদ ভাইয়া তাদের আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়ে বললেন আরে না না এসবের কোন দরকার নেই। দোকানদার বললেন না বলছেন কেন অবশ্যই আপ্যায়নের দরকার আছে।দোকানের কর্মচারি একটা ছোট পলিথিনে কয়েক পদের সিমেন্ট এনে রাখলেন।দোকানী এবার জানতে চাইলেন তা বলুন আপনার কত বস্তা সিমেন্ট লাগবে আর কবে লাগবে। তাহমিদ ভাইয়া অবাক হয়ে বললেন কি বলছেন মশাই! কত শত বস্তা লাগতে যাবে কেন? আমার এই বিশ ত্রিশটাকার সিমেন্ট হলেই চলবে।বাসায় ফ্রিজ নেই তাই পানি ঠান্ডা রাখার জন্য একটা মাটির কলসি কিনেছিলাম। সেটাতে একটা ফুটো দেখা দিয়েছে। সেটা সারবো বলেই একটু সিমেন্ট নিতে বলেছে আমার স্ত্রী।সব শোনার পর দোকানীর মুখটা কালো হয়ে গেল। 

বাসায় ফিরে কলিংবেল চাপতেই তানিশা আপু দরজা খুলে দিল। তার হাতে তখন একটা ঝাটা। সেটা দেখে ভাইয়া বললেন কি ব্যাপার গত রাতের রাগ কমেনি এখনো?আমাকে কি ঝাটাপেটা করবা নাকি?তানিশা আপু লজ্জায় পড়ে গেলেন।ঠিক তখন তাহমিদ ভাইয়া বললেন এখন থেকে রোজ তুমি দুধ দিয়ে গোসল করতে পারবা!!কথাটা শুনেই তানিশা আপু থম করে দাড়িয়ে গেলেন।ভাইয়া তখন ব্যাগ থেকে একটা মেরিল সাবান বের করে দিলেন সেখানে লেখা মেরিল মিল্ক সোপ।দুধ দিয়ে গোসলের অনুভূতি। এটা দেখে তানিশা আপু একচোট হেসে নিলেন।ভাইয়া বিষয়টা বুঝতেই পারলেন না যে সকালে এক ব্রান্ডপ্রোমোটারকে এই কারণে আপু ঝাটাপিটা করে তাড়িয়েছে।

মিথ্যার উপর ভিত্তি করে চলছে আমাদের জীবন। চলুন একটা গল্প শুনি

রাসেলের পরীক্ষা শুরু হতে বেশিদিন বাকি নেই কিন্তু সে ঠিকমত পড়তেই বসছে না। এক সকালে বাবা তাকে ডেকে বললেন তুমি যদি এখনি পড়তে বাসো এবং তিন ঘন্টা মন দিয়ে পড়ো আর এভাবে এক মাস পড়তে পারো তবে তোমাকে আমি আইফোন সিক্স কিনে দেব। এটা শুনে রাসেল চলে গেল। সে নিয়মিত তিন ঘন্টা করে পড়া শেষ করে বাবাকে বলতো বাবা পড়া শেষকরেছি। এক মাস যেদিন পুর্ন হয়ে গেল সেদিন সে বাবার সামনেগিয়ে দাড়াল। বললো বাবা আমি এই মাত্র তিন ঘন্টা পড়া শেষ করে এসেছি এখন আমাকে আইফোন সিক্স কিনে দাও। বাবা বললেন আমি মিথ্যা বলেছিলাম। রাসেল তখন বললো বাবা জানো আম গাছে কখনো কাঠাল ধরেনা!বাবা বিষয়টা বুঝতে না পেরে জানতে চাইলেন এর মানে কি? রাসেল যেতে যেতে বললো বাবা আমিও মিথ্যা বলেছিলাম। আমিও রোজ তিন ঘন্টা পড়িনি!
বিজ্ঞাপনে হরহামেশাই মিথ্যা কথা বলে বলে আমাদেরকে আজেবাজে পন্য ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আমরা সেগুলো নির্দ্বিধায় ব্যবহার করছি।বিজ্ঞাপনের নামে যে অপসংস্কৃতি এ দেশে চালু হয়েছে তা বন্ধ না হলে আমাদের ভবিষ্যত যে কেমন হবে তা অন্য একদিন না হয় লিখবো।অবশ্য আমি না লিখলেও সবাই অনুমান করেত পারে বলেই আমি মনে করি।

বাজেট যেভাবে মাইর খায়




#জাজাফী

বাজেট নিয়ে লিখবো বলে ভাববেন না যে আমি অর্থনীতি কপচাবো। এটা নিরেট একটা কল্পিত বাজেটের গল্প। কল্পিত হলেও বাস্তবের সাথে মিল থাকে অনেকটাই।মশিউর সাহেব ঢাকায় থাকেন। তার সাথে তার ছোট ভাইও থাকে।ছোট ভাইয়ের নাম নাদের। ঈদের মাত্র একদিন আগে মশিউর সাহেব ছুটি পাবেন তাই নাদেরের হাতে টাকা দিয়ে সে বলে দিল কি কি করতে হবে। নাদের সেই টাকা নিয়ে বাড়ির পথে রওনা হল।মনে মনে ভাবল ভাইতো চার হাজার টাকা দিয়েছে। সব যদি দিয়েই দেই তাহলে আর আমার ভাগে কি থাকে। নাদের সেখান থেকে দুই হাজার টাকা সরিয়ে রাখল।সে জানে তার ভাই তাকে খুবই বিশ্বাস করে।তাই কোন দিন ভাবির কাছে প্রশ্নও করবেনা যে নাদের তোমাকে কত টাকা দিয়েছিল। 

অজ পাড়া গায়ে তাদের বাড়ি। শহরে পৌছার পর মশিউর সাহেবের বড় ছেলের কাবুলের সাথে দেখা হলো নাদেরের। কাবুল খুশিতে আটখানা হয়ে বললো কাকা কেমন আছ? বাবা কবে আসবে? নাদের সব বললো এবং কাবুলের হাতে সেই দুই হাজার টাকা ধরিয়ে দিয়ে মশিউর সাহেব যা যা করতে বলেছেন তাই তাই করতে বলল। তার বাড়ি যেতে নাকি সন্ধ্যা হবে। এবার মশিউর সাহেবের বড় ছেলে কাবুল টাকা গুলো নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা হলো। যেতে যেতে ভাবলো টাকাটা যদি সব মায়ের হাতে তুলে দেই তবেতো আমার তেমন কিছু থাকবেই না। তাই সে সেখান থেকে এক হাজার টাকা সরিয়ে রাখলো।

কাবুল জানে তার বাবা মা সবাই তাকে অত্যন্ত বিশ্বাস করে। তাই কাকা তার হাতে কত টাকা দিয়েছিল তা নিয়ে কেউ প্রশ্নই করবেনা। এমনকি কাকাও মাকে বলবেনা যে কাবুলের হাতে এতোটাকা দিয়েছিলাম।সেই ভাবনা থেকেই কাবুল এক হাজার টাকা সরিয়ে নিল।পথেই বড় আপার সাথে দেখা। সে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাবে বলে বড় আপার হাতে বাকি সেই এক হাজার টাকা দিয়ে কাকা যা যা বলেছেন তা বুঝিয়ে দিল। বড় আপা কলেজে পড়ে।তারও বেশ হাতখরচ লাগে। সব সময়তো বাবা মা ঠিকঠাক দিতে পারেনা। সে ভাবলো এক হাজার টাকাই যদি মাকে দিয়ে দেই তাহলেতো আমার ভাগে কিছুই থাকলোনা। সে তাই বুদ্ধি করে সেখান থেকে পাচশো টাকা সরিয়ে রাখলো। বাকি থাকলো পাচশো টাকা।পাচশো টাকাই মায়ের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাবা যা যা করতে বলেছেন তা তা করতে বলবে বলে মন স্থির করলো। 

হঠাৎ ফুটবল খেলে বাড়ির দিকে যাচ্ছিল তুহিন। তুহিন হলো মশিউর সাহেবের ছোট ছেলে। ক্লাস নাইনে পড়ে সে।তুহিনের বড় আপা ওকে থামিয়ে বললো এই তুহিন শোন বাবা কিছু টাকা পাঠিয়েছে। এই নে এটা মাকে দিয়ে বলবি বাবা এটা এটা করতে বলেছে। বাবার আসতে দেরি হবে। ঈদের আগের দিন আসবে।তুহিন টাকাটা নিয়ে বাড়ির দিকে যেতে যেতে ভাবলো ঈদতো এসেই গেল। বাবা মা ঈদে পঞ্চাশ টাকার বেশি দিবেই না। তাছাড়া আর কত দিন অন্যের বল খেলা যায়।এই ভেবে সে বড় আপার ধরিয়ে দেওয়া পাচশোটাকা প্যান্টের পিছন পকেটে রেখে বাড়িতে গিয়ে গুটিগুটি পায়ে মায়ের সামনে দাড়াল। মুখটা হাসি হাসি করে বললো মা জানো বাবা খবর পাঠিয়েছে সে ঈদের আগেরদিন বাড়িতে আসবে।আর তোমাকে সব কিছু সামলে নিতে বলেছে। তোমার কাছে যে টাকা আছে সেখান থেকে সবার জন্য টুকটাক বাজার করতে বলেছে। এবার অফিসে নাকি কি ঝামেলা আছে। 

মশিউর সাহেবের স্ত্রী তার ছোট ছেলের মুখে সব শুনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন। মশিউর সাহেব ঈদে বাড়িতে এসে দেখলেন তিনি যেভাবে যা যা করতে বলেছেন তার স্ত্রী ঠিক সেভাবেই সব সামলে নিয়েছেন। তিনি মনে মনে ভীষণ খুশি হলেন। তার পাঠানো টাকাগুলো তাহলে সঠিক ভাবেই ব্যয় হয়েছে!!
অথচ তিনি সত্যিটা জানতেই পারলেন না।

উপরের গল্পটা কল্পিত হলেও বাস্তবে এমটিই হয়। প্রতিবছর যে বিপুল পরিমান বাজেট ঘোষণা করা হয় তা মাঠ পযার্য়ে এভাবেই পৌছে। যদি সত্যি সত্যি বাজেটের অন্তত অর্ধাংশও সত্যিকার কাজে ব্যয় করা যেত তবে এই ছোট্ট দেশে একটাও কাদা মাটির রাস্তা থাকতো না। আমাদের গ্রাম থেকে শুরু করে কাটার মাস্টার মুস্তাফিজের গ্রামের মত কোন গ্রামই বিদ্যুতের আলো থেকে বঞ্চিত হতো না।
.............................................

#জাজাফী
৩ জুন ২০১৬