বিভাজিত বাঙালী জাতিসত্ত্বা

আমরা শত ভাগে বিভক্ত এক জাতি। যদি দশজন বাঙ্গালী কবি সাহিত্যিকের নামের তালিকা করতে বলি দেখা যাবে সেখানে প্রথম সারির কবি সাহিত্যিকরা থাকবেন কিন্তু যদি একজন কবি বা সাহিত্যিককে নির্বাচিত করতে বলি তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাজী নজরুল ইসলামের নাম অবলিলাক্রমে বাদ পড়বে। একদল রীবন্দ্রনাথের নাম কেটে নজরুলের নাম বসাবে আর একদল নজরুলের নাম কেটে রবীন্দ্রনাথের নাম বসাবে।

দশজন রাজনীতিবিদের নামের তালিকা করতে বললে দেখা যাবে শেরে বাংলা থেকে ভাসানী হয়ে বঙ্গবন্ধু অবধারিত ভাবেই থাকবেন। জিয়াউর রহমান এরশাদও হয়তো থাকবে এবং মতিউর রহমান নিজামিরাও মতাদর্শীদের তালিকায় ঠাই পাবে। কিন্তু যদি একজনের নাম উল্লেখ করতে বলা হয় তবে বাদ পড়বেন শেরে বাংলা বাদ পড়বেন ভাসানী জিয়াউর রহমান এবং বঙ্গবন্ধুকেও বাদ দিবে এ দেশের অনেক মানুষ। নিজের মতাদর্শের বাইরের কাউকেই আমরা কৃতীত্ব দিতে রাজি নই। তাহলে দেশটাকে আমরা উন্নত করবো কি করে?

এ দেশের রাস্তায় রাস্তায় গিয়ে মতামত নিয়ে দেখুন দেশের অগণিত টিভি চ্যানেলের একটাকেও কেউ নিরপেক্ষ হিসেবে ভোট দিবেনা। একটা পত্রিকাকেও নিরপেক্ষ হিসেবে দেখেনে এ দেশের প্রতিটি মানুষ।
বাসের কন্ট্রাকটর মনে করে যাত্রীরা তাকে জোর করে কম ভাড়া দিচ্ছে আর যাত্রীরা মনে করে বাসের লোকেরা জোর করে তাদের থেকে বেশি ভাড়া আদায় করছে।
মেয়েরা মনে করছে নিয়মিত তারা বৈষম্যের শিকার হচ্ছে আর ছেলেরা মনে করছে সম অধিকারের নামে মেয়েদের নানা ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হচ্ছে।

সরকারী দল মনে করে বিগত সময়ে যারা ক্ষমতায় ছিল তারা কিছুই করেনি,সব উন্নয়ন তারা করেছে। আর বিরোধী দল মনে করে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।
ট্রেনের যাত্রীদের অনেকেই মনে করে ট্রেনতো সরকারের টাকায় চলে। ভাড়া না দিলেইবা কি আর টিটি মনে করে যাদের থেকে টাকা নিলাম তারাতো ফাও। টাকা গুলো জমা না দিলেইবা কি।
বাংলা মিডিয়ামের ছেলে মেয়েরা মনে করছে আরে ধুর ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলে মেয়েরা আবার কিছু শেখে নাকি? আর ইংলিশ মিডিয়ামের ছেলে মেয়েরা মনে করছে বাংলা মিডিয়ামে পড়ে কি জীবনে কিছু করা যায় নাকি।

রাজউকিয়ানরা বলছে "রাজউকিয়ান্স আর বর্ন টু লিড" ডিআরএমসি খোচা দিচ্ছে এনডিসিকে আর এনডিসি খোচাচ্ছে অন্যদেরকে।
বুয়েটিয়ানরা পাত্তা দিচ্ছেনা ঢাবিকে আর ঢাবি পাত্তা দিচ্ছেনা বুয়েটিয়ানদের।
সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেকেই মনে করছে বেসরকারীতে কি আর কোন লেখাপড়া হয়। হুদাই বিশাল সিজিপিএ দেওয়া হচ্ছে। আর বেসরকারীরা মনে করছে সরকারীতে পড়ে জীবনে কিছুই করা যায়না। সময় নষ্ট হয়।

মেসি ভক্তরা মনে করে রোনালদো মেসির ধারে কাছেও নেই আর রোনালদো ভক্তরা মনে করছে মেসি আবার খেলা শিখলো কবে?
মেরাডোনা আর পেলের কথা বাদই দিলাম। তারা গলা ফাটিয়ে নিজেদের ঢোল পিটিয়ে কি প্রমান করতে চাইছে তা জানিনা। নিজেদের সেরা বলা না বলায় পাবলিকের কিছু যায় আসেনা। পাবলিক নিজে যা মনে করে তাই করবে। বিশেষত বাঙ্গালীরাতো অবশ্যই।
একটা গল্প শুনুন। অনেক বছর আগে মাগুরাতে নিতাই রায় চৌধুরী তার মাকে বলেছে মা এবার কিন্তু নির্বাচনে নৌকা নেই। তাই তুমি আমার লাঙ্গলেই ভোট দিও। বৃদ্ধা মা ছেলেকে কথা দিয়েছেন। নির্বাচন বুথে গিয়ে দেখলেন নৌকা আছে তখন নিজের ছেলেকে ভোট না দিয়ে তিনি নৌকাতেই ভোট দিলেন। বাড়ি ফিরে বললেন কিরে নিতাই এবার নাকি নৌকা নেই? আমিতো দেখলাম নৌকা আছে। নৌকাতেই ভোট দিয়ে এসেছি।

মোদ্দা কথা হলো কামারে যা করে তা মনে মনেই করে।

কোন মন্তব্য নেই: