……….জাজাফী
স্বপ্ন
ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়।ক্ষুধার্তের চোখ দিয়ে কবি পূর্নিমার পূর্ণ চাদঁকে ঝলসানো
রুটি রুপে দেখে। প্রতিদিন সড়ক দুর্ঘটনায় অকালে ঝরে যায় কত প্রাণ।কত ঘরে জমে বুক
চাপা কান্না। কত পরিবারের বেঁচে থাকার আলোটুকু নিভে যায় চোখের নিমিষে।কিন্তু তবুও
মানুষকে পথ চলতে হয়। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রতিনিয়ত হাজারো মানুষ হারিয়ে যাচ্ছে আমাদের
মাঝ থেকে,ধুলিসাৎ হয়ে যাচ্ছে হাজারো স্বপ্ন। পত্রিকার পাতা খুললেই চোখে পড়ে
দুর্ঘটনার খবর।
একটি স্বাধীন সুন্দর দেশে অনেক অনাবিল হাসি ব্যথিতের আর্তনাদের
নিচেয় চাপা পড়ে যাচ্ছে।অনেক অর্জনের আনন্দ নিমিষে ফিকে হয়ে যাচ্ছে স্বজন হারানো
মানুষের আকুল আর্তনাদে। দম ফেলতে হয়তো আমাদের কিছুটা দেরি হচ্ছে কিন্তু দুর্ঘটনা
ঘটতে দেরি হচ্ছেনা। প্রতিনিয়ত দেশের কোথাও না কোথাও ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা। কিন্তু
অব্যাহত সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কাযকর কোন উদ্যোগ চোখে পড়ছেনা।ফলে বহু মূল্যবান
জীবন বিনষ্ট হচ্ছে। অনেকেই পঙ্গুত্ব বরণ করছে। চোখের সামনে হারিয়ে যাচ্ছে মিশুক
মুনির,তারেক মাসুদদের মত ক্ষণজন্মা মনীষী।
দেশে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটেছে।
স্থানে স্থানে গড়ে তোলা হয়েছে ফ্লাইওভার,আন্ডারপাস,ফুট ওভার ব্রিজ।কিন্তু কমছেনা
সড়ক দুর্ঘটনা।ক্রমাগত ভাবে তাই সড়ক পথ হয়ে উঠছে বিপজ্জনক। অতিরিক্ত যাত্রী
বোঝাই,অদক্ষ চালক,অপ্রশস্ত রাস্তায় বাস চালনার প্রতিযোগিতা,ত্রুটিযুক্ত যানবাহন
এগুলোই হয়তো সড়ক দুর্ঘটনার কারণ।কিন্তু ওই সবের দোহাই দিয়েতো আমরা আমাদের দায়িত্ব
এড়িয়ে যেতে পারিনা।সব কিছুর মূলে রয়েছে সচেতনতার অভাব। যদি আমরা সচেতন হতাম তাহলে
মালিক হিসেবে আমরা কখনোই আমাদের ত্রুটিপূর্ন গাড়িটি রাস্তার বের হতে দিতাম না,চালক
হিসেবে আমরা ত্রুটিপূর্ণ গাড়ি চালাতে সম্মত হতাম না কিংবা প্রকৃত প্রশিক্ষণধারী না
হয়ে গাড়ির স্টিয়ারিংএ হাত দিতাম না।
সচেতন হলে আমরা কখনোই অদক্ষ কাউকে ড্রাইভিং
লাইসেন্স দিতামনা কিংবা কিছু টাকার বিনিময়ে আমাদের হাত থেকে কোন ত্রুটিপুর্ণ গাড়ি
ছাড়া পেতো না। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের
উপস্থাপিত তথ্য মতে সড়ক দূর্ঘটনার কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে বেপরোয়া গাড়ি
চালানো,অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল ওঠানো,গাড়ি চালকের প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব,গাড়ীর
যান্ত্রিক ত্রুটি, যানবাহনের সংখ্যা ক্রমাগত হারে বৃদ্ধি,ট্রাফিক আইন
অমান্য,মহাসড়কের স্থানে স্থানে অনুমোদনহীন স্পিড ব্রেকার,জনগণের উদাসীনতা ইত্যাদি
অন্যতম।
নিঃশব্দ আততায়ির মত প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনা আমাদের চার হাজার স্বজনকে
মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছে।কিন্তু সত্যিকার অর্থে যদিও কেউ মৃত্যুকে ঠেকাতে পারেনা
তবে এ মৃত্যুকে আমরা ঠেকাতে পারি।এড়াতে পারি পঙ্গুত্বের অভিশাপকে।
খুব
বেশি কিছু করতে হবেনা। এ জন্য দরকার একটুখানি সচেতনতা,ধৈয,সতর্কতা আর ট্রাফিক
আইনের যথাযথ প্রয়োগ। আমাদের মনে হয় যে সব কারণে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে তার প্রত্যেকটি
কারণই প্রতিরোধযোগ্য। এক জরিপে দেখা গেছে ৯১ শতাংশ চালক জেব্রাক্রসিং এ অবস্থানরত
পথচারিদের অধিকার আমলেই নেয়না। পাশাপাশি ৮৪ ভাগ পথচারি নিয়ম ভেঙ্গে রাস্তা পার হয়।
অন্য এক সমীক্ষার তথ্য মতে শতকরা ৯৪ জন রিকশাচালক ট্রাফিক আইন ও নিয়মের প্রাথমিক
বিষয় গুলোও ঠিকমত জানেনা।তারা জানেনা ডানে বা বায়ে যেতে হলে কি সংকেত দিতে হয়।
কোথায় কিভাবে মোড় নিতে হয়।
যারা তা জানে তাদের অধিকাংশ ইচ্ছাকৃতভাবে সিগন্যাল
অমান্য করে,দ্রুত এবং দিগ্বিদিক শুন্য হয়ে গাড়ি চালায়। ফলে দুর্ঘটনা ঘটে।এ ছাড়াও
অনেক পথচারীই নানা কারণে ওভার ব্রিজ পার হতে ইচ্ছুক নয়। কোথাও কোথাও ওভার ব্রিজ
অত্যন্ত প্রয়োজনীয় কিন্তু সেখানে ওভার ব্রিজ নেই বরং অপরিকল্পিত ভাবে ওভার ব্রিজ করা
হয়েছে এমন কোথাও যেখানে ওভারব্রিজ থাকাটা অতটা জরুরী নয়।সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধ
কাযক্রম জোরদার না করলে এ নিঃশব্দ ঘাতকদের রোধ করা সম্ভব হবেনা।
এ জন্য বাড়াতে হবে
জনসচেতনতা। সচেতন হতে হবে যানবাহন চালক,হেলপার,যানবাহন মালিক,যাত্রী,পথচারি থেকে
শুরু করে ট্রাফিক পুলিশকেও। মনে রাখতে হবে বেপরোয়া গতিতে যেমন গাড়ি চালানো যাবেনা
তেমনি অতিরিক্ত যাত্রী ও মালামাল পরিবহন করা যাবে না।রাস্তায় চলতে হলে গাড়ি ও
চালকের ফিটনেস থাকতে হবে এবং কোন ক্রমেই চলন্ত গাড়িতে ওঠা যাবেনা।
ক্রসিং এবং ওভারব্রিজ
ও আন্ডার পাস দিয়ে রাস্তা পারাপারের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।ট্রাফিক আইন মেনে চলতে
হবে। যদি এসব কিছুকে আমরা আয়ত্বে আনতে পারি তবে আশা করা যায় সড়ক দুর্ঘটনায় আমাদের
স্বজন হারানো আর্তনাদ শুনতে হবেনা।আইনের ফাকফোকর দূর করে আরো কঠোরতা আনতে হবে, এর
পাশাপাশি সব ধরনের অনিয়ম রোধে কর্তৃপক্ষকে আন্তরিক হতে হবে।
এক কৃষক তার জমিতে চার
জন কাজের লোক লাগিয়েছেন যাদের মধ্যে একজন অন্ধ।কৃষক দুপুরে তার ক্ষেতে আসলেন। কাজ
ঠিক মত হয়নি দেখে জিজ্ঞেস করলেন এখানে এরকম ঘাস রয়ে গেছে কেন? অন্যরা তখন জোর গলায়
বললো ওই জায়গাতো আমরা পরিস্কার করিনি,ওটা অন্ধলোকটা করেছে।এভাবে একে একে কৃষক পুরো
জমি দেখলেন এবং সবখানেই একই অবস্থা।যখনই কৃষক জানতে চাইলেন তখনই বাকি লোক গুলো
বললো ওই জায়গাতো আমি পরিস্কার করিনি ওটা অন্ধ লোকটা করেছে। কৃষক বললেন সব যদি অন্ধ
লোকটাই করে থাকে তাহলে তোমরা কি করেছ। যাও তোমাদের আর দরকার নেই।ঠিক একই ভাবে ওই
অন্ধলোকটার ঘাড়ে সব চাপিয়ে দেওয়ার মত সড়ক দূর্ঘটনা রোধের সব দায়িত্ব কেবল সরকারের
ওপর চাপিয়ে দিলেই হবেনা বরং সকলকে এ নিয়ে কাজ করতে হবে। তবেই হয়তো সড়ক হবে
নিরাপদ,জীবন হবে সুন্দর,ঠিক যেমনটি আমরা কল্পনা করি।
…………
জাজাফী
এস
এম হল
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন
Thank You.