প্রকৃতির অভিশাপ

পৃথিবীকে আর বোধহয় টিকিয়ে রাখা গেলনা। ভীষন চিন্তিত চিকিৎসা বিজ্ঞানী ড.ফাহিম। ৩০৪৯ সালের আজকের দিনটি হয়তো পৃথিবীর ইতিহাসে আজীবনের জন্য লেখা থাকবে। কিন্তু সেই  ইতিহাস পড়বে কে?মানুষের অস্তিত্বই যেখানে বিলীন হওয়ার দোরগোড়ায় সেখানে ইতিহাসের প্রশ্ন করে লাভ কি? তার কাছে খবর এসেছে কৃত্তিম ভাবে রাখা ভ্রূণ থেকে জন্ম নেয়া  সাত জন মেয়ে শিশুর মধ্য থেকে ছয় জনই মারা গেছে। এই সাতজনই ছিল পৃথিবীর আলো বাতাসে জন্ম নেয়া শেষ মেয়ে শিশু।
 Image result for ভ্রুন
এতো যত্ন চিকিৎসা দিয়েও তাদের বাঁচিয়ে রাখা যায়নি। পৃথিবীর মানুষ এতোটাই নিচে নেমে গিয়েছিল যে বেশ কয়েক বছর আগে পৃথিবীতে ধর্ষণ হত্যা নারী নির্যাতন অনেক বেড়ে গিয়েছিলো। ধর্ষণের মাত্রা এতো বেড়ে গিয়েছিলো যে ,মেয়ে শিশুরা জন্মনিতেই ভয় পেতো। মায়ের দুধের স্বাদ ভুলে যাবার আগেই তারা শিকার হতো নরপশুদের। এক বছর বয়সী বাচ্চারাও রেহাই পেতো না। ভালবাসা ছিলনা কোন মমতাও ছিলনা। আমিরাকান কালচারে ছেয়ে গিয়েছিল গোটা পৃথিবী ফলে বিয়ে সংসার সব ভুলে গিয়েছিল সবাই। একসাথে লিভ টুগেদার করে জন্ম দিতে গিয়ে সবাই ভয় পেতো যেন মেয়ে শিশুর জন্ম না হয় । 
বাবা মায়ের সামনেই জোর করে নরপশুরা নারকীয় তান্ডবে মেতে উঠতো।ফল স্বরূপ ভ্রূণ হত্যা।কেউ খেয়াল করেনি মেয়েদের সংখ্যা দ্রুত গতিতে কমতে লাগলো। জাহেলী জুগে মানুষ নারী শিশুকে হত্যা করতো নানা কারণে। আর এই অতি আধুনিক যুগে সেই নারী শিশুকে হত্যা করা হচ্ছে তাদের সম্মান বাচিয়ে রাখা যাবেনা ভেবে।হটাৎ করেই দেখা গেল যে ,যে অল্প সংখ্যক মেয়েরা আছে তাদের প্রাণঘাতী রোগ দেখা দিয়েছে।চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এর কোনো সমাধান বের করতে পারলেন না।মেয়েরা গণহারে মারা যেতে লাগলো ।অনেক
গর্ভবতী মায়েদের থেকে ভ্রূণ সংগ্রহ করে কৃত্তিম ভাবে রাখা হলো।কিন্তু তাদের কাউকেই বাঁচানো যাচ্ছেনা।
 
Image result for ভ্রুন
চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডক্টর ফুকোর ডাকে সম্বিত ফিরে পেলো ডক্টর ফাহিম। সম্বিত ফিরে পেয়ে চিন্তা ছিন্ন হয়ে গেলো
ডক্টর ফাহিমের। তিনি সাথে সাথে ছুটে গেলেন ইনকিউবেটর রুমে।যেখানে শেষ মেয়ে শিশুটাও চোখের সামনে মারা
যাচ্ছে।কারো কিছু করার ক্ষমতা নেই। কেউ জানেনা এটাই পৃথিবীর সর্ব শেষ মেয়ে শিশু।ও মারা গেলে সব শেষ।পৃথিবীর
মানুষরাও শেষ হয়ে যাবে কারন এখন আর কেউ নতুন করে জন্মও নেয়না। জনসংখ্যা আশংখা জনক ভাবে কমে
গেছে।চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডক্টর ফাহিম মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ডানহিলকে বললেন বিটাবাইটিন ইনজেকশান  শিশুটির গায়ে পুশ করতে। তার আশা ছিল বিটাবাইটিন হয়তো কিছুটা হলেও শিশুটিকে বাচিয়ে রাখবে।কিন্তু তার সব আশা ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে শিশুটি চলে গেল। বিটাবাইটিনে কোন কাজ হলোনা।সব শেষ।

  চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডক্টর ফাহিম মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালের বাইরে বেরিয়ে আসলেন।বাইরে হিম  শীতল বাতাস বয়ে চলেছে । আশ্চর্য সেই বাতাসে তার ঠান্ডা লাগলেও কোন গাছের পাতা  নড়ছেনা। নড়বে কি করে। শোকে সমস্ত পৃথিবী স্তবদ্ধ হয়ে গেছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের আর কিছুই করার নেই। তারা জানে তারাও কদিন পর হারিয়ে যাবে। একদিন এই পৃথিবীটা বিরান অঞ্চলে পরিণত হবে। চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডক্টর ফাহিম অনুভব করলেন কোথাও কেমন জানি একটা শব্দ হচ্ছে। তিনি কান পেতে শুনতে পেলেন প্রকৃতি ফিসফিস করে বলছে আমি ফিরিয়ে নিচ্ছি নারী ,মায়া ,মমতা ,স্নেহ ,ভালোবাসা,প্রেয়সী ,ফিরিয়ে নিচ্ছি মাকেও। যে পৃথিবীতে নারীর মর্যাদা নেই,নারীর সম্ভ্রমকে লুটে নিতে উন্মুখ একদল পঙ্গপাল সেই পৃথিবীতে আর কোন নারী থাকবেনা।আর কোন শিশুর জন্ম হবে না। এই পৃথিবীটা হয়ে উঠবে একটা বিরান অঞ্চল। 

ডাইনোসরদের সময়টাকে তোমরা ভয়ংকর বলে অভিহিত করো কিন্তু একবারও ভেবে দেখনা ডাইনোসরদের থেকেও তোমার ভয়ংকর। তোমাদের জন্য অভিশাপ ছাড়া আর কিইবা থাকতে পারে। চিকিৎসা বিজ্ঞানী ডক্টর ফাহিম আর কিছু ভাবতে পারেনা।তার সব ভাবনার অবসান হয়ে গেছে শেষ নারী শিশুটির মৃত্যুর সাথে সাথে।

গল্পঃ প্রকৃতির অভিশাপ
২ জুলাই ২০১৪
উত্তরা,ঢাকা-১২৩০

কোন মন্তব্য নেই: