ক্যাডেট কলেজ ভর্তি ভাইভা প্রস্তুতি পরামর্শ

এইতো কদিন আগেই বের হল ক্যাডেট কলেজ ভর্তি পরীক্ষার লিখিত পরীক্ষার ফলাফল। এখন বন্ধুরা প্রস্তুতি নাও মৌখিক পরীক্ষার জন্য। তারই কিছু দিকনির্দেশনা নিচে দেওয়া হলো।




শিক্ষাগত জীবনে ভালো ফলাফল এবং মেধা বা যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অনেকেই ভাইভা বোর্ডে নিজেকে যোগ্য করে উপস্থাপন করতে না পারার কারণে স্বপ্নময় সুযোগ হাতছাড়া হয়ে যায়ভাইভা বোর্ডে যাঁরা থাকেন, তাঁরা কিন্তু নানাভাবে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমেই তোমাকে তাঁদের প্রতিষ্ঠানে সুযোগ দেবেনএকজন প্রার্থীর যোগ্যতার পাশাপাশি তাঁর স্মার্টনেস, উপস্থাপন কৌশল, বাচনভঙ্গি এসব বিষয়ও কিন্তু কম গুরুত্বপূর্ণ নয়ভাইভা বোর্ডে ঢুকেই অনেকে নিজের অজান্তে প্রথমেই নিজেকে অযোগ্য প্রমাণ করে বসে বড়রাই সেখানে ছোট্টবন্ধুদের কিছুটা সমস্যা হতেই পারে। । বোর্ডের কর্মকর্তারা এ ধরনের প্রার্থীকে তেমন কোনো প্রশ্ন না করেই বা সৌজন্যতার খাতিরে দু-একটি প্রশ্ন করেই বিদায় করে দেনএ রকম পরিস্থিতি এড়াতে ও নিজেকে যোগ্য করে উপস্থাপন করার জন্য জেনে নাও কিছু কৌশল

১. প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিতে ভুলবে না

ভাইভা বোর্ডে তোমার  প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র সঙ্গে নিতে হবেআবেদনের সময় এসব কাগজপত্র দিতে হয়, তাই এসব কাগজপত্র ক্যাডেট কলেজের  কাছে থাকলেও এসব সঙ্গে করে নিতে হবেভাইভা বোর্ডের সদস্যরা যে কোনো সময় এসব চেয়ে বসতে পারেনএ ছাড়া সঙ্গে জীবনবৃত্তান্ত ও ছবিও রাখুনআর একটি কলমও সঙ্গে রাখা দরকারতবে একটি বিষয় সচেতন থাকা জরুরি, হাতের ফাইল টেবিলের ওপর না রেখে পাশে কোথাও রাখা উচিত

২. ক্লান্তিভাব ঝেড়ে ফেল

সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় তোমার মধ্যে যেন কোনো প্রকার কান্তিভাব না আসে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবেকেউ কেউ নির্দিষ্ট সময়ের ঠিক আগ মুহূর্তে তাড়াহুড়ো করে ভাইভা বোর্ডে এসে উপস্থিত হওয়ার কারণে শরীর ঘামে একাকার হয়ে যায়তাই নির্দিষ্ট সময়ের অন্তত আধাঘণ্টা আগে ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হয়ে নিজেকে প্রাণবন্ত করে রাখ। । প্রয়োজনে হাত-মুখ ধুয়ে নাও অনেকে সারা রাত জেগে বা গভীর রাত পর্যন্ত পড়ালেখা করে সকালে ভাইভা দিতে আসেএতে চেহারায় ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট হয়ে ওঠেনিজেকে সতেজ করে উপস্থাপনের জন্য ভাইভার আগের রাতের ভালো ঘুম খুব জরুরিতাই বেশি রাত না জেগে ঘুমিয়ে পড়ে সকালে ভালোভাবে গোসল করে ভাইভা বোর্ডের উদ্দেশে রওনা হও

৩. পরিচ্ছন্নভাবে সঠিক সময়ে

অনেকেই নিদিষ্ট সময়ের পরে সাক্ষাৎকার বোর্ডে এসে হাজির হয়এই সময়মতো আসতে না পারাটাই তোমার অযোগ্যতা প্রমাণের জন্য যথেষ্টভাইভা বোর্ডে কোনোক্রমেই দেরি করে উপস্থিত হবে নাদেরিতে এলে নিয়োগদাতারা ভাইভা নাও নিতে পারেন বা ভাইভার আগেই বাদ দিয়ে দিতে পারেননিজেকে পরিপাটিভাবে উপস্থাপন করার গুরুত্বও কিন্তু অনেকপরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, শালীন ও মার্জিত পোশাক পরে ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হতে হবেপোশাকই কিন্তু তোমার ব্যক্তিত্বের পরিচয় দেবে

৪. সালাম দিয়ে প্রবেশ করবে

ইন্টারভিউ বোর্ডে প্রবেশের সময় সালাম দিয়ে প্রবেশ করপ্রবেশের পর অনুমতি না নিয়েই বসে পড়বে নাঅনেকে কথা বলার সময় হাত-পা নাড়েভাইভা বোর্ডে কখনোই এ রকম করবে নাআর একটি বিষয় বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে, যখন যে ব্যক্তি তোমাকে প্রশ্ন করবেন, তাঁর দিকে তাকিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে হবেভাইভা বোর্ডে যিনি প্রধান হিসেবে থাকেন, অনেকেই শুধু তাঁর দিকে তাকিয়ে উত্তর দিয়ে থাকেএটা মোটেই সঠিক নয়

৫. আঞ্চলিকতা পরিহার করবে

ভাইভা দেওয়ার সময় কথা বলার ক্ষেত্রে আঞ্চলিকতা যেন প্রকাশ না পায় সেদিকে সজাগ থাকতে হবেকথা বলার সময় খেয়াল রাখতে হবে, যেন আঞ্চলিক টান না এসে যায়প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলাও জরুরিএ জন্য আগে থেকেই শুদ্ধ ভাষায় কথা বলার অভ্যাস করতে হবেইংরেজি বলার সময়ও উচ্চারণের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে

৬. ক্যাডেট কলেজ সম্পর্কে ধারণা নাও

ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হওয়ার আগে ক্যাডেট কলেজ সম্পর্কে যথাসম্ভব জেনে নিতে হবেযদি সম্ভব হয়, ভাইভা বোর্ডে কারা কারা থাকবেন, সে সম্পর্কেও জেনে নেওয়া ভালোভাইভার আগে হন্তদন্তভাবে হাজির না হয়ে হাতে সময় রেখেই যথাস্থানে উপস্থিত হতে হবেসবচেয়ে ভালো হয়, আগের দিনই পরীার কেন্দ্রটি দেখে আসাএ ক্ষেত্রে বাড়তি সুবিধা পাওয়া যায়

৭. সংক্ষেপে ও হাসিমুখে উত্তর দাও

ভাইবা বোর্ডে যে বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছে, শুধু সে বিষয়েই উত্তর দিতে হবেবেশি কথা বলা বা অপ্রাসঙ্গিক কোনো বিষয়কে টেনে আনা ঠিক হবে নাআবার গোমড়ামুখে বসে থাকলেও কিন্তু তা অযোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবেইন্টারভিউ বোর্ডের সদস্যরা বেশি কথা বলা যেমন পছন্দ করেন না আবার গোমড়ামুখের মানুষকেও পছন্দ করবেন নাআর ইন্টারভিউ বোর্ডে একটি বিষয় মেনে চলার চেষ্টা কররে, তা হলো সব প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় হাসিমুখে উত্তর দিবেতবে অকারণেও কিন্তু আবার হাসা যাবে নাআর একটি বিষয়, সব প্রশ্নেরই যে উত্তর জানা থাকবে তা কিন্তু নয়না পারলে বিনীতভাবে বলতে হবে- সরি স্যার, পারছি না

৮. উত্তেজিত হওয়া যাবে না

ভাইভা বোর্ডে প্রার্থীর মানসিক স্থিতিশীলতা, সমস্যা সমাধানের যোগ্যতা- এসব বিষয় যাচাইয়ের জন্য অনেক সময় অপ্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করা হয়ে থাকেএ সময় কোনোক্রমেই উত্তেজিত হওয়া যাবে নাঅনেক সময় প্রার্থীর মানসিক মতা যাচাইয়ের জন্য একসঙ্গে অনেকেই প্রশ্ন করে বসেন, এমনকি অনেক সময় বিব্রতকর প্রশ্নও করা হয়এ সময় কোনোক্রমেই মাথা গরম না করে সবকিছু সহজভাবে নিতে হবে এবং শান্তভাবে তাঁদের সব প্রশ্নের জবাব দিতে হবে

৯. বিনীতভাবে নিজেকে উপস্থাপন করবে

ভাইভা বোর্ডে সব প্রশ্নের উত্তর বিনীতভাবে দিতে হবেইন্টারভিউ বোর্ডে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার সময় সোজা হয়ে বসতে হবেচেয়ারে হেলান দিয়ে বসাটা ঠিক হবে নাএতে প্রার্থী সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি হতে পারেভাইভা শেষে হাত মেলাতে পার, তবে সেটা পরিস্থিতি অনুযায়ীঅনেকেই স্মার্টনেস দেখাতে গিয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করেনিজেকে ওভারস্মার্ট ভাবা ঠিক নয়সুন্দর, সাবলীল ও বিনীতভাবে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার মাধ্যমেই যোগ্যতার বহিঃপ্রকাশ দেখানো যেতে পারে

১০. মিথ্যার আশ্রয় নেবে না

ইন্টারভিউ বোর্ডে কখনোই নিজের যোগ্যতার বিষয়ে কোনো মিথ্যার আশ্রয় নেবে নাকোনো মিথ্যা তথ্য তোমার জন্য সমূহ বিপদ ডেকে আনতে পারেমিথ্যা তথ্য দিয়ে না হয় চান্স হলো, এ ক্ষেত্রে পরে সমস্যা হবেসেটি প্রকাশ পেলে তোমার ভর্তি বাতিল হয়ে যাবেআর হ্যাঁ, ভাইভা বোর্ড থেকে বেরোনোর সময় অবশ্যই সবাইকে কিন্তু ধন্যবাদ দিয়ে বেরোতে হবে

সবার জন্য শুভকামনা রইলো

লেখাঃ #Zahid Hasan

www.facebook.com/zahin9250