সি জে সেভেন

মুভি রিভিউ
সি জে সেভেন
জাজাফী




নয় বছর বয়স ছেলেটির। ওর নাম ডিকি চাও। পরিবারে বাবা ছাড়া ওর আর কেউ নেই। শহরের নামী দামি এলাকায় নয় বরং নোংরা ঘুপচি গলিতে ভাঙ্গা ঘরে ওদের বাস। বাবা ওকে ভীষন ভালবাসেন। আর তাই এলাকার গরীবদের জন্য যে স্কুল সেখানে ডিকিকে না ভর্তি করে শহরের সবচেয়ে দামী স্কুলে ভর্তি করলেন। কিন্তু ডিকির বাবা চাও টি ছিলেন নির্মান শ্রমিক। সামান্য আয়ে খেয়ে পরে বেচে থাকাই কঠিন। সেখানে ছেলের দামী স্কুলের বেতন ও অন্যান্য খরচ চালানো তার পক্ষে ছিল অসম্ভব। কিন্তু আগেই বলা হয়েছে একমাত্র ছেলেকে তিনি নিজের থেকেও বেশি ভাল বাসতেন। কিন্তু বাবার এতো পরিশ্রম আর ভালবাসার পরও ডিকি স্কুলে আশানুরুপ ফলাফল করতে পারেনি। বরাবরের মতই খারাপ রেজাল্ট করে চলেছে। স্কুলে বড় লোকের ছেলে মেয়েরা পড়তো। যারা সব কিছুই দামি দামী ব্যাবহার করতো। স্কুলে টিফিনের ফাকে সবাই যখন ভাল ভাল খাবার খেত ডিকি নামের নয় বছরের ছেলেটা তখন বাড়ি থেকে নিয়ে আসা সামান্য পচা বাসি খাবার মুখে পুরতো। ওর মোটেও তা ভাল লাগতোনা। এর মাঝেই ঝামেলা শুরু হলো। একদিন ক্লাসের সবচেয়ে মারকুটে আর ধনী ছেলে জনি একটা আজব রোবট নিয়ে আসলো যেটার নাম সিজেওয়ান। সেটা এমন সব মজার বিষয় করতো যা দেখে যে কারোরই লোভ হত। ডিকি চাও নামের গরীব ঘরে জন্মনেয়া নয় বছরের ছেলেটারও ওটার প্রতি লোভ হলো। বাড়ি ফিরে বাবার কাছে বায়না ধরলো যে কোন মূল্যে ওটা কিনে দিতেই হবে। কিন্তু বাবারতো ক্ষমতা নেই অতো দামী একটা খেলনা কিনে দেয়ার। দাম শুনেই তার আক্কেল গুড়ুম। ডিকিতো অনেক ছোট একটা ছেলে তাই পছন্দের খেলনা না পেয়ে কান্নাকাটি ও মন খারাপ করলো। একদিন কাজ শেষে বাসায় ফেরার সময় ময়লার স্তুপের মাঝে চাও টি মানে ডিকির বাবা একটা বল খুজে পেল। তিনি ভাবলেন মন খারাপ করে বসে থাকা ছেলেটা এটা পেলে হয়তো খুশি হবে। এই ভেবেই তিনি সেই পুরোনো নোংরা বলটা বাড়িতে নিয়ে আসলেন। অবাক করা ব্যাপার হলো সেই বল থেকেই যেন ডিম থেকে বাচ্চা ফুটার মত একটা সুন্দর বাচ্চা বের হলো। অনেকটা কুকুরে বাচ্চার মত। ডিকি চাও সেটা পেয়ে কী যে খুশি হলো তা বলার নয়। সে ওটার নাম দিল সিজেসেভেন। সেটার অনেক অলৌকিক ক্ষমতাও ছিল। সে মুহুর্তের মধ্যে কয়েকদিন আগে কিনে আনা ফল তরতাজা করে দিল। ডিকি চাও নামের নয় বছরের ছেলেটা মনে করেছিল সিজেসেভেনকে দিয়ে সে এমন সব কান্ড ঘটাবে যে গোটা দেশ বদলে যাবে। স্কুলে সে বেশ কিছু কারসাজি করলেও দেখা গেল সব বিফলে যেতে লাগলো। একসময় ডিকি ক্লাসে হাসির পাত্র হয়ে উঠলো। পড়ালেখায় মন আগের থেকে উঠে গেল। বাবা খুব বকলেন। এক সকালে বাবা চাও টি কাজে বের হওয়ার সময় সিজেসেভেনকে ব্যাগে ভরে সাথে নিয়ে বের হলেন। আর ডিকি চাও নামের ছোট্ট ছেলেটা সিদ্ধান্ত নিল সে ভাল রেজাল্ট করতে না পারলে আর বাড়ি ফিরবেনা। সত্যি সত্যি সেদিন ক্লাস টেস্টে ডিকি চাও নামের নয় বছরের ছেলেটা সেরা হয়েছিল। বাবাকে বললে তিনি না জানি কতই খুশি হবেন। কিন্তু ডিকি আর কোনদিন ওর বাবাকে সেটা দেখাতে পারেনি। কারণ উচু বিল্ডিং এ কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে বাবা পড়ে গিয়ে মারা গেলেন। ডিকি চাও নামের নয় বছরের ছেলেটার পৃথিবীতে আপন বলতে আর কেউ থাকলোনা। কেবল মাত্র ছিল সিজেসেভেন নামের সেই কুকুর বা ওরকম ছানাটি। সে ওর বন্ধু হয়ে ওর পাশে থেকে কত কিছু যে করলো তা বলে শেষ করা যাবেনা। সব জানতে হলে দেখে নিতে পার স্টিফেন চো পরিচালিত এই বিখ্যাত সিনেমা সিজেসেভেন।

মুক্তির সনঃ ২০০৮
ধরণঃ শিশুতোষ বিজ্ঞান কল্পকাহিনী
পরিচালকঃ স্টিফেন চো।
ব্যাপ্তিঃ ৮৮ মিনিট।

আর হ্যা মজার ব্যাপার হচ্ছে ডিকি চাও এর বাবা চাও টিকে কিন্তু বলতে গেলে তোমরা সবাই চেন। কারণ তিনি শাওলিন সসার ও কুংফু হাসল সিনেমায় অভিনয় করেছেন মূল নায়ক হিসেবে। তো বন্ধুরা হয়ে যাক পুরো পরিবার নিয়ে এই অসাধারণ সিনেমাটি দেখার আয়োজন।

কোন মন্তব্য নেই: