যদিও সন্ধ্যা


---জাজাফী

প্রতিতির জন্মদিনের পার্টি শেষ করে ফিরতে অন্তরার বেশ রাত হয়ে গেল।বেশ রাত বলতে তখন হয়তো নয়টা বাজে।প্রথমে বাসে করে বসুন্ধরা থেকে সোজা রাজলক্ষ্মী এসে নেমেছে।সেখান থেকে রিক্সা করে তিন নাম্বার সেক্টরে ওদের ভাড়া বাসার সামনে এসে নেমেছে।গেট বন্ধ থাকায় দু তিনবার নক করতে দারোয়ান চাচা এসে গেট খুলে দিল।লিফটের জন্য অপেক্ষা করছিল অন্তরা।লিফটা তখন পনের তলায় অপেক্ষমান।এমন সময় সম্পুর্ন অপরিচিত একজন গেট দিয়ে ঢুকে ওর পাশে এসে দাড়াল।সেও লিফটে উঠবে।হতে পারে অন্য কোন ফ্ল্যাটের বাসিন্দা। অন্তরা তার দিকে একবার সুক্ষ্মভাবে তাকিয়ে কিছু একটা বুঝতে চেষ্টা করলো।লোকটাও ওর দিকে কেমন যেন ভয়ংকর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে থাকলো।জানতে চাইলো ও কত তলায় যাবে।অন্তরার মনে হলো কি দরকার তাকে সেটা বলার তার পরও ভদ্রতা বসে বললো আমি পনের তলায় যাব।লোকটা বললো আমি উনিশ তলায় যাব।অন্তরা এসব নিয়ে ভাবছেনা।সে শুধু ভাবছে লোকটার চাহুনীতে কিছু একটা আছে।নিচেয় মৃদু আলো পরিবেশটাকে অন্যরকম করে রেখেছে।দারোয়ান চাচা গেট বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়েছে।এখন লিফটের জন্য অপেক্ষমান অন্তরা আর সেই অপরিচিত লোকটা।

গত ছাব্বিশ মে একমাসের ভ্যাকেশানে বাড়ি এসেছে অন্তরা।ক্যাডেট কলেজে পড়ুয়া মেয়েটির সাহসের কোন অভাব নেই।সে মনে মনে ছক কষে নিতে থাকে।লোকটার হাবভাব সুবিধাজনক মনে হয়না।কয়েক মিনিট পর লিফট গ্রাউন্ডফ্লোরে আসে। প্রথমে অন্তরা লিফটে ঢুকে লোকটার অগোচরেই প্রথম থেকে পনের তলা পযর্ন্ত সবগুলো বোতাম চেপে দেয়। লোকটা ঢুকে উনিশ তলার বোতাম চাপে।সে প্রথমে খেয়াল করেনি পরে দেখে প্রত্যেক তলায় সিগনাল দেওয়া।সে মনে মনে বলে মেয়ে তুমি খুব চালাক।অপরিচিত লোকটা যেন কিছু করতে না পারে তাই অন্তরা বুদ্ধি করে প্রতি ফ্লোরে সিগনাল দিয়ে রাখে যেন লোকটার সাহস না হয় কিছু করার।অন্তরার মনে তবুও কিছুটা ভয় থাকে তবে সাহস হারায় না।পনের তলা পযর্ন্ত যেতে যেতে আর কেউ লিফটে ওঠেনা।অন্তরা যখন লিফট থেকে নামে তখন লোকটার দিকে তাকায়।লোকটা নিজ থেকেই বলে তুমি খুব চালাক।অন্তরা কোন জবাব দেয়না।সে নিশ্চিত হয় সে যদি প্রতি ফ্লোরে সিগনাল দিয়ে না রাখতো তবে লোকটা তাকে নাজেহাল করতে চেষ্টা করতো।ক্যাডেট অন্তরার তাৎক্ষণিক বুদ্ধি তাকে লোকটার হিংস্রতা থেকে রক্ষা করে।

লোকটা কিন্তু সব মনে রেখেছে।অন্তরার প্রতি তার এক রকম ক্ষোভ জন্ম নিয়েছে।সে যে কোন ভাবেই হোক অন্তরাকে হেনস্তা করবেই।পরদিন সকালে অন্তরার বাবা মা আর ভাই রামপুরা বেড়াতে যায়।ওকেও যেতে বলে কিন্তু ও রাজি হয়না।গত দিনের পার্টি ওকে বেশ ক্লান্ত করে দিয়েছিল।অগত্য বাবা মা ভাই ওকে বাসাতে রেখেই রামপুরাতে চলে যায়।বাসাতে অন্তরা তখন একা।বিকেল হবে হবে অবস্থা এমন সময় ডোর বেল বেজে ওঠে।এ সময় কে এলো?বাবা মা কি তবে ফিরে এলো? দরজাতে কোন পিনহোল ছিল কিন্তু সেটা দিয়ে বাইরে দেখার কথা মনেই আসেনি অন্তরার।অন্তরা কথা বলে উঠলো কে?ওপাশ থেকে কথার জবাব এলোনা।আবার বেল বাজলো।অন্তরার কিছুটা রাগ হলো।সে দরজা খুলে যখন বাইরে তাকাল তখন সেই লিফটের লোকটা সাই করে ওকে সরিয়ে দিয়ে ঘরে ঢুকে পড়লো।মুহুর্তেই অন্তরার বুঝতে আর বাকি থাকলোনা যে সে খুবই বিপদে পড়ে গেছে।সে তাই বলে সাহস হারালোনা।লোকটার থেকে সরে গিয়ে দৌড়ে কিচেনে চলে গেল।লোকটাও হিতাহিত জ্ঞানশুন্য হয়ে ওর পিছু পিছু কিচেনে গেল।একজন ক্যাডেটের সাথে দ্রুততায় তার পেরে ওঠার কথা নয়।অন্তরা যখন কিচেনে ঢুকলো লোকটা তার দু মিনিটের মধ্যেই কিচেনে ঢুকে পড়লো।অন্তরা মোটেও বিচলিত হয়নি।লোকটা যখন প্রায় নিঃশ্বাস দুরত্বে চলে এসেছে ঠিক তখন অন্তরার ডান হাতের মুঠো খুলে গেল।লোকটা চোখ ডলতে ডলতে বসে পড়লো।ঝনঝন করে শব্দ করে ভেঙে গেল একটা চীনামাটির প্লেট আর একটা কাঁচের গ্লাস।অন্তরা কিচেনে ঢুকেই মরিচের গুড়ো হাতের মুঠোতে ভরে নিয়েছিল সেটাই লোকটার চোখে ছুড়ে মেরে আত্মরক্ষার পাশাপাশি লোকটাকে ঘায়েল করেছে।সেই সাথে কিচেন সিঙ্কের উপর রাখা একটা চীনামাটির প্লেট আর কাচের গ্লাস লোকটার গায়ের উপরে সজোরে ছুড়ে মেরেছে।বদ লোকটা ব্যথায় ককিয়ে উঠে চোখ ডলতে ডলতে হাতড়ে হাতড়ে অন্তরাদের বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে।অনেক বড় বিপদের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে অন্তরা।এতোটা চৌকস সে হতে পেরেছে তার ক্যাডেট লাইফের জন্য।লোকটা বেরিয়ে যাবার সাথে সাথে সে দরজাটা ভাল করে লক করেছে।সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেল বাজলেও সে আর খুলবেনা।সেদিন সন্ধ্যার পর বেল বাজলো।সে খুললোনা।এরকম সময় ওর ফোন বেজে উঠলো।রিসিভ করতেই শোনা গেল বাবার কন্ঠ ‘মামনি দরজা খোল,আমরা গেটে দাড়ানো’।বাবার গলা শুনে শেষে দরজা খুললো অন্তরা।আম্মু বাইরে থেকে আসলেই সবার আগে লেবুর শরবত বানিয়ে সবাইকে খেতে দেন।সেদিনও শরবত বানাবেন বলে কিচেনে গিয়ে দেখেন গ্লাস আর প্লেটের ভাঙ্গা টুকরো গুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে।তিনি শরবত বানানো বাদ দিয়ে ড্রয়িং এ এসে অন্তরার কাছে জানতে চাইলেন কিভাবে প্লেট আর গ্লাস ভাংলো।অন্তরা মাকে বললো আগে সবার জন্য শরবত বানাও তার পর শরবত খেতে খেতে সেটা শুনো।আগে শুনলে আর শরবত খাওয়া হবেনা কারো।

আম্মু সবার জন্য শরবত বানিয়ে সোফাতে বসতে বসতে ঘটনাটা জানতে চাইলো।অন্তরা গতদিন সন্ধ্যা থেকে তখন পযর্ন্ত যা ঘটেছে সব বললো।শুনে অন্তরার বাবা মা এবং ভাইয়ের মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়লো।অন্তরার বুদ্ধি আর সাহসের বলে যে বড় রকম বিপদের হাত থেকে বেচে গেছে এটাই একমাত্র শান্তনা হয়ে থাকলো। শরবত খেয়েই সেই বিকেলেই অন্তরার বাবা আর ভাই অন্তরাকে নিয়ে সাম্ভাব্য উনিশ তলার চারটা ফ্ল্যাটেই খোঁজ নিলো।নাহ ওরকম কোন লোক নেই ওই ফ্ল্যাটে।তার মানে লোকটা ওকে মিথ্যে বলেছিল।

কোন মন্তব্য নেই: