শিশুর প্রতি নৃশংসতা ও আমাদের দায়িত্ব



.....................

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ভাষায় সাতকোটি সন্তানেরে হে মুগ্ধ জননী,রেখেছ বাঙ্গালী করে মানুষ করোনি। সত্যিই আমরা মানুষ হতে পারিনি। তাই আমাদেরই হাতে নৃশংসভাবে খুন হয়েছে রাজন রাকিব সহ আরো কত জন।সভ্যতার মূখোশ পরে আমরা হয়ে উঠছি ক্রমাগত অসভ্য ও বর্বর।সামাজিক অবক্ষয় আর মূল্যবোধের অভাব এখন চরম পর্যায়ে পৌছেছে।হিতাহীত জ্ঞান শুন্য হয়ে পড়ছে জাতি।যে বর্বরতা আর নৃশংসতায় রাজন রাকিবকে হত্যা করা হয়েছে তা স্বয়ং সীমারের নিষ্ঠুরতাকেও ছাপিয়ে গেছে।

স্বাধীন দেশে এরকম বর্বর ঘটনা ঘটিয়ে তার ভিডিও চিত্র ধারণ করার মত দুঃসাহস যারা দেখিয়েছে তারা মানুষ ছিলনা কোন কালেও। সেই অমানুষ গুলোকে গ্রেফতার করার পরও এখনো কেন বিচার হচ্ছেনা সেটাই আশ্চর্যের বিষয়। যেখানে সুস্পষ্ট প্রমান আছে সেখানে বিচারের বিলম্বিকরণ বিচারবিভাগকেই প্রশ্নের মূখে ঠেলে দিচ্ছে।দারিদ্রতার যাতাকলে পিষ্ঠ হয়ে আমাদের সমাজে অনেক শিশুকেই তাদের শৈশব কৈশর জলাঞ্জলী দিয়ে বেচে থাকার সংগ্রামে নামতে হচ্ছে। জীবন যুদ্ধের সেই শিশুরাই হচ্ছে নির্যাতিত নিগৃহীত।কি অপরাধ ছিল রাজনের?রাকিবকেই বা কেন অকালে ঝরে যেতে হলো।মাগুরার ছোট্ট শিশুটি ভুমিষ্ট হওয়ার আগেই সমাজের নিষ্ঠুরতার মূখোমুখি হয়েছে।আমাদের সমাজ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন দরকার। শিশুবান্ধব পরিবেশের বড়ই অভাব। 

দারিদ্রতার কবলে কোন শিশুকে যখন তার শৈশব বিসর্জন দিয়ে শ্রমিকের জীবন বেছে নিতে হয় তখনও তাকে নানা নির্যাতনের শিকার হতে হয়।এ ছাড়া অশিক্ষা এবং আইনের দুর্বলতার কারণে অপরাধীরা ছাড়া পেয়ে যায় বলেও অনেক অপরাধী নির্দ্বিধায় অপরাধ করতে থাকে।রাজন এবং রাকিবের সাথে যে আচরণ করা হয়েছে তা কেবল নেক্কার জনকই নয় রীতিমত জঘন্য অপরাধ এবং এই অপরাধে যারা অপরাধী তাদের শাস্তি কোনভাবেই যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তির থেকে কোন অংশে কম হওয়া উচিত নয়।

স্কুলের শিক্ষকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে শিক্ষার্থীদের শারীরিক শাস্তি বন্ধ করা হয়েছে তাহলে সমাজের অন্য স্তর গুলো কেন বাকি থাকবে।শিশুবান্ধব পরিবেশের নিশ্চয়তা দিতে সরকারকে কাজ করে যেতে হবে এবং শিশু অধিকার নিয়ে যারা কাজ করে তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। রাজন রাকিবের হত্যাকারিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে পারলে সেটার ভয়াবহতা দেখে আর কোন দিন কেউ শিশুদের প্রতি নৃশংসতা দেখাতে সাহস করবেনা। শিশুরা ফুলের মত পবিত্র এবং শিশুরাই আমাদের পৃথিবীর সৌন্দর্য। সেই শিশুকে আমাদের ভালবাসতে হবে। 

শিশুদের সব অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে। ক্ষুধায় জর্জরিত পৃথিবীতে শিশুটিকেতো আমরাই এনেছি, তাই তার তো কোন দোষ নেই। তবে কেন তাকে এভাবে অকালে ঝরে যেতে হবে।শিশু অধিকারের কথা শুধু মূখে বললেই হবেনা সেটাকে বাস্তবে রুপ দিতে হবে।শেখ রাসেল থেকে শুরু করে আজকের রাজন রাকিবকে যারা হত্যা করেছে তারা কেউই মানুষ নয়। সুতরাং মানুষরুপী জানোয়ারদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করে এ সমাজ থেকে নৃশংসতা সৃষ্টিকারীদের চির তরে দূর করতে হবে।যেন আর কোন রাজন রাকিবকে অকালে ঝরে যেতে না হয়।


........................
জাজাফী
এস এম হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

কোন মন্তব্য নেই: