আব্দুল স্যার
ক্ল্যাসে আসলেই সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা তোলেন। উনি গণিতের শিক্ষক অথচ এমন ভাবে কথা
বলেন যেন উনি রাষ্ট্রবিজ্ঞান কিংবা সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক। গত কাল ক্লাসে এসেই
প্রথমে লেকচার শুরু করলেন “বুঝলি আবারতো মধ্য প্রাচ্য তেলের দাম
বাড়িয়ে দিল। নে সবাই একটা অংক কর। যদি তেলের মুল্য লিটারে ছয়টাকা বাড়ানো হয় তবে কি
পরিমান খরচ কমালে একটা পরিবারের তেলের খরচ আগের মত থেকে যাবে।”
স্যারের বলা শেষ হতে না হতেই জামিল উঠে দাড়ালো। স্যার অংক
করতে পারবোনা তবে উত্তরটা বলতে পারবো। স্যার জানতেন জামিল দুষ্টুর দুষ্টু। তিনি
বললেন তা শুনি আমাদের পন্ডিত মহাশয়ের উত্তর। জামিল বললো তেলের দাম বেড়েছে খরচ
কমাতে হবে এমন ভাবে যেন আগের খরচরে সমান থাকে। আচ্ছা স্যার আগে যেন কত খরচ হতো? ওর
কথা শুনে স্যারতো রেগে আগুন। আগে কত খরচ হতো তা কে জানে? ধর চল্লিশ টাকা। জামিল
বললো তাহলে স্যার চল্লিশ থেকে ছয় বাদ দিলে চৌত্রিশ টাকার তেল কিনলেই খরচ আগের সমান
থেকে যাবে।
স্যারের অংক করানোর মুড চলে গেল। তিনি ক্লাসের সবাইকে বললেন আজ আর অংক
করাবোনা। যে অংকটা বলেছি এর ওপর সবাই মতামত দাও। এবার উঠে দাড়ালো মহান। নামেই মহান
কাজে লাপাত্তা। সে বললো স্যার যখন রান্না করবো তার কিছুক্ষন আগে কেউ একজন তেলের
বোতলটা অন্য কোথাও লুকিয়ে রেখে আসলে তেল খরচ বেচে যাবে! স্যার একে একে নির্বাক হয়ে
সবার কথা শুনতে লাগলেন।
এবার অনীক উঠে দাড়ালো। মনে হচ্ছিল উঠতে তার বেশ কষ্ট
হচ্ছে। সে বললো স্যার স্যার তেলের মুল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তো কি হয়েছে ঘুষ বেশি করে
খেলেইতো খরচ নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা। আমাদের ক্লাসের বিজ্ঞানী জিহাদ বললো স্যার
এতো কিছুর দরকার নেই রান্নার সময় চুলার পাশে তেলের বোতলের সিপি খুলে রাখলেইতো হলো।
রান্না হবে আর তার সাথে তেলের একটা আন্তঃনাক্ষত্রিক যোগাযোগ হবে। এর ফলে যে
বিক্রিয়া করবে তা নিউটনের তৃতীয় সুত্র মতে..........ওর বলা আর শেষ হলোনা স্যার ওকে
থামিয়ে দিলেন।
রাজনীতি নিয়ে মাথা ঘামায় আমাদের নিনাদ। এবার নিনাদ বলে উঠলো স্যার
এটা ভারি অন্যায় সময় নেই অসময় নেই ইচ্ছে হল আর মধ্যপ্রাচ্য তেলের দাম বাড়িয়ে
দেবে?এটা হতে পারেনা। তেলের দাম এভাবে বাড়লেতো আমাদের গণিতও পাল্টে যাবে। এতে করে
ছাত্রছাত্রীদের চিন্তা শক্তি কমে যাবে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই। রাজনীতিবিদের
কথা শেষ হলে স্যার বললেন আচ্ছা করতে দিলাম অংক তা তোরা করলিনা আউল ফাউল উত্তর দিতে
শুরু করলি আমি তাও মেনে নিলাম। কিন্তু তোর এই উত্তরের সাথে অংকটারতো কোন সম্পর্কই
দেখতে পেলাম না। পাশ থেকে নিলয় বলে উঠলো স্যার সম্পর্ক আছে। ও দেখেন না কি
মোটাসোটা। পেটেতো তেল জমেছে। ওর বাবা ওকে কষে একটা ধমক দিয়েছে। বলেছে দিন দিন বসে
বসে খেয়ে তেল বৃদ্ধি করছো?তোমার তেল বাড়ানো কমাচ্ছি।
এবার উঠে দাড়ালো ইফতি। ও বললো স্যার তেলের দাম
বৃদ্ধি পাওয়া এবং খরচ আগের মত রাখা ও দুটো এক করে সমাধান করতে অনেক কষ্ট হবে। এখন
সবচেয়ে সহজ হবে যদি আমরা তেলের বদলে অন্য কিছু দিয়ে রান্না করি। আব্দুল স্যার
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে উঠে দাড়ালেন। ঘন্টা পড়ে গেছে। আজ তিনি কিছুই পড়াতে পারলেন না।
তেলের দাম বেড়েছে কি করে তিনি পড়াবেন? ক্লাসের প্রায় সবাই কিছুনা কিছু বলেছে শুধু
আমি কিছু বলিনি। স্যারের সেটা হঠাৎ খেয়াল হলো। স্যার বললেন কিরে তুই কিছু বললিনা
যে?
আমি বললাম স্যার আমি স্বর্গ। আমারতো তেলের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার
নেই। আমার এখানেতো সব সময় সব কিছুই ফ্রি।আমার বোন পুন্যকে নিয়ে স্বর্গ সুখেই আছি।
স্যার আরো একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন স্বর্গতো স্বর্গ সুখেই আছে। তোরা দেখ তেলের
বদলে অন্য কিছু আবিস্কার করতে পারিসকিনা যা দিয়ে রান্না করা যাবে।
জাজাফী
এস এম হল
ঢাকা
বিশ্ববিদ্যালয়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন