মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাঃ মেধাবীদের স্বপ্ন ভঙ্গ



মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষাঃ মেধাবীদের স্বপ্ন ভঙ্গ


ব্যথিত মানুষের পাশে পরম মমতা নিয়ে দাড়াবে বলে যারা পণ করেছিল আজ তারাই নিজেদের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখতে রাজপথে গলা ফাটিয়ে মিছিল করছে,তারাই আহত হয়ে ভর্তি হচ্ছে কোন হাসপাতালে।তাদের স্বপ্নকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছে বলে তারা আজ রাজপথে নেমেছে।তাদের স্বপ্নের কথা কেউ ভাবছেনা বরং তাদের প্রতিহত করা হচ্ছে নানা ভাবে। মানুষের সব স্বপ্ন পূরণ হয়না।স্বপ্ন পূরণ না হওয়ার পিছনে তিনটা কারণ থাকতে পারে।প্রথমত জোর করে স্বপ্নটাকে মেরে ফেলা,দ্বিতীয়ত স্বপ্ন পূরনের ব্যাপারে যথাযথ চেষ্টা না থাকা আর তৃতীয়ত অবাস্তব স্বপ্ন দেখা। 

আমরা অবাস্তব কোন স্বপ্ন দেখিনা,আমাদের স্বপ্ন পুরনে যথেষ্ট আন্তরিকতাও আছে কিন্তু আমাদের দেশে এখন প্রথম কারণটাই প্রকপ আকারে ধারণ করেছে। জোর করে আমাদের স্বপ্ন গুলোকে মেরে ফেলা হচ্ছে।আমাদের ছেলে মেয়েরা বড় হওয়ার জন্য যে সব স্বপ্ন দেখছে সেই স্বপ্ন পূরণে তাদের ছিল দৃঢ় অঙ্গীকার এবং সেই লক্ষ্যে মাসের পর মাস তারা তাদের ঘুমকে বিসর্জন দিয়েছে।সকাল থেকে সন্ধ্যা অবধী তারা একের পর এক বইয়ের পাতায় চোখ বুলিয়ে ক্লান্ত হয়েছে কিন্তু তাদের চেষ্টা থামেনি। তাদের স্বপ্ন ছিল বড় ডাক্তার হবে,নামকরা কোন মেডিকেলে ভর্তি হবে। 

১৯৭১ সালে মুক্তিযোদ্ধারা অনেক রক্তের বিনিময়ে আমাদেরকে যে দেশটা উপহার দিয়েছিল আমার সেই দেশটাকে ভালবেসে সমৃদ্ধির পথে নিয়ে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের স্বপ্নকে কতিপয় মানুষ গলা টিপে হত্যা করলো।বাঙ্গালীদের স্বপ্নকে বার বার অপশক্তি গলাটিপে হত্যা করেছে।বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে কিছু মানুষের বিরোধীতা,একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কিছু কুলাঙ্গার বাঙ্গালীর বিপক্ষ দল সাপোর্ট করা এবং পচাত্তরের পনেরই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করাও ছিল সেই স্বপ্ন গুলোকে গলা টিপে হত্যা করার ধারাবাহিক ইতিহাস। সবর্শেষ মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস আরো একটি স্বপ্নকে গলাটিপে হত্যার চূড়ান্ত দৃষ্টান্ত।

আমাদের দেশে জোরালো প্রমাণ থাকার পরও সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে যাওয়ার একটা রেওয়াজ চালু আছে। স্পষ্ট ভিডিও চিত্র থাকার পরও যেমন রাজন হত্যা মামলায় নানা ভাবে কালক্ষেপন করা হচ্ছে।  মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন পত্র ফাঁসও তার বাইরে নয়। সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে প্রশ্ন পত্র ফাঁস হয়নি কিংবা এ নিয়ে তদন্ত করা হবে। কিন্তু সরকার পক্ষের এই আশ্বাসে এ দেশের তরুণরা কতটা আস্থা রাখবে?বিগত সময়ে বিভিন্ন ঘটনায়ও তদন্তের কথা বলা হয়েছে। মাসের পর মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও সেই সব তদন্তের কোন অগ্রগতি হয়নি।মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার্থীদের দাবীকে তুচ্ছজ্ঞান করে তদন্তের নামে কালক্ষেপন করলে ওই সব ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের কি হবে তা কি তারা কখনো ভেবে দেখেছে।ওদের জীবন থেকে এক একটা সোনালী দিন পার হয়ে যাচ্ছে এর দায়ভার কে নেবে?

অন্যদিকে কেউ কেউ বলছেন ভর্তি পরীক্ষা সুষ্টু হলেও বা কি হতো! তিন হাজারের বেশি শিক্ষার্থীতো চান্স পেতনা! ওনাদের কথাও ঠিক আছে। তাই বলে মেধাবীদের বদলে যে সে ডাক্তার হলে দেশের ভবিষ্যৎ যে কোন দিকে যাবে তা কি তথাকথিত ওই সব চিন্তাবিদেরা কখনো ভেবে দেখেছেন?নাকি মনে মনে ভেবেই নিয়েছেন যে তারা আর কয়দিন দেশ যেদিকে যায় যাক।শুধু মুখে দেশের উন্নয়নের কথা বললে চলবেনা।দেশের স্বার্থে দেশের ভবিষ্যৎকে টিকিয়ে রাখতে এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।যোগ্যদেরকে বঞ্চিত করে অযোগ্যরা স্থান পেলে তার ফল ভাল হবেনা।তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে যারা চান্স পেয়েছিল তাদের মধ্যেও অনেক মেধাবী রয়েছে। কিন্তু আমাদের বিশ্বাস যারা মেধাবী তারা নতুন করে পরীক্ষা হলেও সেই পরীক্ষায় উত্তীর্ন হবে। 

তাই মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে যে অনুহুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা সরকারকে আন্তরিক হয়ে সমাধান করতে হবে।ভবিষ্যতের ডাক্তারেরা তাদের স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য রাজপথে নেমে আন্দলোন করছে।তাদের স্বপ্নের দাম দিতে হবে।আর যে সব শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছে তাদেরও উচিত শুধু মাত্র আন্দোলন নিয়ে পড়ে থাকলেই হবেনা পাশাপাশি পড়াশোনা করে যেতে হবে। তোমাদের মনে রাখা উচিত এ দেশে অনেক কিছু হয়, অনেক কিছু সয়ে যেতে হয়। যে মানুষটা না থাকলে হয়তো দেশটাই স্বাধীন হতনা সেই বঙ্গবন্ধুকে যদি এ দেশের কুলাঙ্গারেরা মেরে ফেলতে পারে সেখানে তোমার আমার স্বপ্নকে গলাটিপে হত্যা করা তাদের পক্ষে কঠিন কিছু নয়।

কিন্তু তাই বলে নিরাশ হলে চলবেনা।নিজ নিজ অবস্থানে দৃঢ় থাকো এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে থাকো। যিনি অনেক স্বপ্নকে বাঁচিয়ে রেখেছেন মায়ের মমতায় তিনি নিশ্চই তোমাদের স্বপ্নকে এভাবে মরে যেতে দিবেন না।নিশ্চই চ্যাম্পিয়ন অব দ্যা আর্থ খেতাব প্রাপ্ত মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তোমাদের পাশে শুধু মাত্র প্রধান মন্ত্রী হিসেবেই নয় বরং মায়ের মমতা নিয়ে এগিয়ে আসবেন। তোমাদের বিশ্বাস করতে হবে যে তিনি অন্য যে কারো থেকেই মমতাময়ী।যে লক্ষ্যে সরকার কাজ করে যাচ্ছে সেই ভিশন ও মিশনকে বাস্তবে রুপ দিতে হলে মেধাবীদের স্বপ্নকে এভাবে গলাটিপে হত্যা করলে চলবেনা।দেশকে উন্নত দেশের কাতারে নিয়ে যেতে হলে মেধার বিকাশ এবং মূল্যায়নের পথ সুগম করার কোন বিকল্প নেই।তাই ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে যে অনাহুত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তা আন্তরিকতার সাথে সমাধান করাই হবে সরকারের সাফল্যের মুকুটে আরেকটি পালক যুক্ত করা।
………………………………………….


জাজাফী
এস এম হল
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়


কোন মন্তব্য নেই: