বাউন্ডারির ঘেরাটোপে আটকে রাখা জীবন

একাডেমীক ব্লকের নিচেয় দাড়িয়ে আছি। আমার সামনে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মাহমুদ। মাহমুদ আমার সহপাঠী। ও এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেন জীবনে প্রথম আমাকে দেখছে। আমি আলতো করে ধাক্কা দিয়ে বললাম এই কী দেখিস অমন করে? সে সম্বিত ফিরে পেয়ে বললো দাড়া দেখতে দে আরেকটু। আমার বিস্ময় যেন কাটছেনা তোকে দেখে। আমি আর ওকে ঘাটতে যাইনি।

গত কাল এইচএসসির রেজাল্ট দিয়েছে। সারা দেশ থেকে অনেকেই ভাল রেজাল্ট করেছে।আমার সামনে দাড়ানো মাহমুদও বেশ ভাল রেজাল্ট করেছে। ইংরেজী অক্ষরের সংখ্যাকে পুজি করে সারা দেশে সব শিক্ষাবোর্ড থেকে এবার এইসএসসিতে মাত্র ২৬ জন এ প্লাস পেয়েছে। সেই সারিতে কিভাবে কিভাবে যেন আমার নামটাও আছে। মাহমুদ সে কারণেই আমার দিকে ওভাবে তাকিয়ে ছিল।

গ্রীন হাউজ থেকে হেটে হেটে আমাদের সামনে এসে দাড়ালো আরমান।আরমানও যেন আমাকে আজই নতুন দেখছে। আমি আর ওখানে দাড়িয়ে থাকতে চাইলাম না। বাউন্ডারির ঘেরাটোপে আটকে রাখার কেউ আর রইলো না।ওদের সাথে নিয়ে বেরিয়ে এলাম বাউন্ডারি ঘেরা খাকি চত্ত্বর থেকে। হাটছি আর আমাদের মাথার উপরে আদিগন্ত খোলা আকাশ।
একদিন এই চত্ত্বরেই বাবা মা এক কিশোরকে রেখে গিয়েছিল।তাদের চোখে অবিরাম স্বপ্ন ছিল কিন্তু তারা জানতোই না তাদের দেখা স্বপ্ন সেই কিশোর কতটা পুরণ করতে পারবে।বাবার সাথে কোন এক বিকেলে বাড়ির পথে যখন সেই কিশোর তখন বাবার চোখ দিয়ে যেন আগুন ঝরছে। কত অভিযোগ যে জমা পড়েছে তার কোন হিসেব যেন নেই। সেই কিশোর আস্তে আস্তে বড় হয়ে গেছে। যার দিকে কেউ ফিরেই তাকাতো না সেই মানুষটির মুখের দিকে দুজন ক্যাডেট কিংবা আরো অনেক ক্যাডেট এবং নন ক্যাডেট তাকিয়ে আছে বিস্ময় নিয়ে।

সারা দেশ থেকে মাত্র ছাব্বিশ জন এ প্লাস ধারীদের মধ্যে সেই কিশোর থেকে তরুন হয়ে ওঠা মানুষটিও আছে ভাবতেই তার বন্ধুদের বুকটা গর্বে ভরে ওঠে।.............তার পর বাকিটা ইতিহাস হয়ে গেল। চির উন্নত মম শির মটোকে বুকে ধরতে না পারলেও বিদ্যাই বল মূল মন্ত্রকে ঠিকই মনের মধ্যে গেথে নিয়ে সে পড়তে শুরু করলো। তার পড়ার যেন আর শেষ নেই। সে যেন জন্মেছে কেবল অবিরাম পড়ার জন্য। কবে শেষ হবে তার পড়া? কি পড়ে সে এতো। 

একদিন যারা মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে ছিল তারা সব রথি মহারথি হয়ে নামি দামি গাড়িতে ঘুরে বেড়ায় আর সেই বিস্ময় ছড়ানো মানুষটি তার ঘেরাটোপে বসে বইয়ের রাজ্যে ছুটে বেড়ায় অবিরাম। শুধু সেই জানে এই ছুটে চলার আনন্দ।ব্যক্তি জীবনে অন্যদের যত সাফল্য আছে তার দ্বিগুন ব্যার্থতা আছে এই মানুষটির। কিন্তু তার নাকি ব্যর্থতাই ভাললাগে বেশি।

কোন মন্তব্য নেই: