যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে


==========================
জাতীয় যাদুঘরের নলীনিকান্ত ভট্রশালী প্রদর্শনী কক্ষের বাইরে লাল ফিতা দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে।সামনে বেশ সুন্দর করে তাজা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। দুর থেকে ভেসে আসছে রবীন্দ্র সঙ্গীত। সর্ব সাধারনকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছেনা কারণ তখনো মধ্যমণি এসে পৌছান নি। সাংবাদিকদের সাথে যাদুঘরের কিউরেটর কথা বললেন। আমি সময়ের একটু আগেই পৌছেছি। সাধারণত এসব প্রোগ্রামের একটুও আমি মিস করতে চাইনা।
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৫ তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ইন্দিরাগান্ধী সংস্কৃতি কেন্দ্র এবং রবীন্দ্র একাডেমীর যৌথ আয়োজনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একক চিত্রকলা প্রদর্শনী এবং গুণীজন সংবর্ধনা অনুষ্ঠান ছিল সেটা। উপস্থিত হলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবং আসাদুজ্জামান নূর। তার পাশে প্রফেসর এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান স্যার। একটু দূরে দাড়ানো শিল্পী হাশেম খান এবং নাট্য ব্যক্তিত্ব রামেন্দুমজুমদার। ফিতা কেটে যেমন বর কনের বাড়িতে প্রবেশ করে তেমনি অতিথিদের নিয়ে আবুল মাল আব্দুল মুহিতও ফিতা কাটলেন। গায়ে গা ঘেষে দাড়িয়েছিলাম আমি। অবাক হয়ে ভাবছিলাম এই বয়সেও তিনি এতো তারুন্যের উদ্দীপনা কোথা থেকে পান।

ঘুরে ঘুরে রবীন্দ্রনাথের আঁকা ছবি দেখলেন। যাদুঘরের মহাপরিচালক বিভিন্ন ছবি সম্পর্কে বর্ণনা দিলেন। বক্তৃতা পর্বে খুব সংক্ষেপে মন্ত্রী তার অনুভূতি ব্যক্ত করলেন। ওখানে না গেলে জানা হতোনা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কত শত ছবি একেছেন। কবির যখন বয়স ৬৩ বছর তখন তিনি প্রথম ছবি আঁকা শুরু করলেন। বিচিত্র সব বিষয় নিয়ে তিনি ছবি একেছেন।
সুদুর কোলকাতা থেকে এসছেন প্রখ্যাত রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী প্রমিতা মল্লিক। উপস্থিত ছিলেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংগীত শিল্পী প্রখ্যাত রবীন্দ্র গবেষক জন থর্প। জন থর্প উপস্থিত সবাইকে মুগ্ধ করেছেন। অসাধারণ বাংলা বলেন তিনি। সেই সাথে তার গানের গলাও অসাধারণ। তিনি রবীন্দ্রনাথকে ভালবেসেছেন অন্য যে কারো চেয়ে বেশিই। তাই তিনি সুর লয় ঠিক রেখে রবীন্দ্রনাথের অনেক গান ইংরেজীতে অনুবাদ করেছেন যা থেকে দু একটা তিনি গেয়ে শুনিয়েছেন। তিনি মনে করেন রবীন্দ্রনাথ তখনি বিশ্ব কবি হবেন যখন তার অসাধারণ সব লেখা ভিন্ন ভাষাভাষিদের হাতে পৌছানো যাবে। যদি অন্যরা নাই জানতে পারলো রবীন্দ্রনাথ কি লিখেছেন তবে তাদের চোখে তিনিতো কোন দিনই বিশ্বকবি হবেন না।

আমাদের মুগ্ধতা যেন কাটতেই চায়না। ১৯৮০ সালে তিনি যখন বাংলাদেশে এসেছিলেন তখন রবীন্দ্রনাথের নামই শোনেন নি। সেই তিনিই বিগত আঠার বছর ধরে রবীন্দ্রনাথে ডুবে আছেন। আক্ষেপ করে বলেছেন রবীন্দ্রনাথ অসংখ্য গান লিখেছেন কিন্তু সবাই তার থেকে বেছে বেছে চল্লিশ পঞ্চাশটা গানই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে গায়। বাকি গানগুলো আজীবন আড়ালেই থেকে যায়।
রবীন্দ্র একাডেমী আয়োজন করে প্রফেসর আনিসুজ্জামান,প্রমিতা মল্লিক এবং জন থর্পকে সংবর্ধনা দেয়। এর পর উপস্থিত হন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী। তিনি মঞ্চে না উঠে দর্শক সারিতে বসে অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। 

সব কিছুকে ছাপিয়ে যায় ‪#‎তক্ষশীলা‬ বিদ্যা নিকেতনের ক্ষুদে বন্ধুদের রবীন্দ্রনাথে মুগ্ধ হয়ে অসাধারণ উপস্থাপনায়। অরিত্ররা এতো অসাধারণ ভাবে রবীন্দ্রনাথকে তুলে ধরেছে যে স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর উপস্থিত থাকলে উঠে দাড়িয়ে পিচ্চিগুলোকে সাধুবাদ জানাতেন। রফিকুল ইসলামের সংগীত পরিবেশনা এবং জয়ন্ত চট্টপাধ্যয়ের আবৃত্তিকে ছাপিয়ে তাই সবার মনে স্থান করে নেয় অরিত্র নামের আট বছরের ছেলেটি ও তার দলের বাকি এগারজন সদস্য।
যাদু ঘর থেকে বেরিয়ে যখন টিএসসির দিকে যাচ্ছি তখনো কানে বাজছে রবীন্দ্রনাথ "যখন পড়বেনা মোর পায়ের চিহ্ন এই বাটে"
সন্ধ্যায় যখন মৃত্তিকাদের সাথে সাক্ষাত হলো তখনো যেন আমি রবীন্দ্রনাথে আচ্ছন্ন ছিলাম।

কোন মন্তব্য নেই: