পিকুলিয়ার


--জাজাফী

এ বিশ্ব চরাচরে কতো আজিব মানুষ দেখতে পাই। সেরকমই একজন আজিব মানুষ এই মুহুর্তে আমার সামনে বসে আছে। আজিব বলছি এ জন্য যে তার পকেট থেকে দুটো পাঁচশ টাকার নোট পড়ে গেল। আমি বললাম আপনার পকেট থেকে দুটো পাঁচশ টাকার নোট পড়ে গেছে তুলে নিন নয়তো অন্য কেউ নিয়ে নেবে। তার মনের মধ্যে কোন ভাবান্তর হলো বলে মনে হল না। সে বললো যে টাকা পড়ে যায় তা তুলে নিতে হয় না! শুনেতো আমার পোয়াবারো। আমি বেশ অভাবেই ছিলাম। কোন কথা না বলে টাকাটা তুলে নিলাম। তারপরও লোকটা কিছু বললো না। যেহেতু তার এক হাজার টাকা আমি নিয়ে নিয়েছি তাই তাকে আতিথেয়তা করা আমার কর্তব্য। দারোয়ানকে ডেকে বললাম দু'কাপ চা নিয়ে আসেন সাথে দুটো বিস্কুট। আমার কথা মতো দারোয়ান চা আর বিস্কুট নিয়ে হাজির। 

 লোকটা হাসি মুখে চা খেয়ে গেলেন আর যাওয়ার সময় বললেন চায়ের দামটা কি আমি দিতে পারি? আমি মনে মনে তাজ্জব হয়ে গেলাম। এ কোন আজিব লোক! কোন মতো সম্মতি দিলাম আর তিনি পকেট থেকে একটা দশটাকার নোট বের করে দারোয়ানের হাতে ধরিয়ে দিল। লোকটা যদি রোজ আসতো আর তার পকেট থেকে দুটো করে নোট পড়তো তাহলে আমার আর কোন চিন্তা থাকতো না। আমি বললাম আপনি আবার আসবেন। লোকটা বললো দেখি সময় পেলে আসবো। যাওয়ার সময় বললো ওহ ভুলে গেছি আমার দুই তিনশো টাকা দরকার। আপনার কাছে খুচরা হবে? আমি বললাম ঠিক আছে পাঁচশো টাকা নেন। সে মাথা নেড়ে বললো না পাঁচশো নেয়ার দরকার নেই আমার দরকার চারশো টাকা। 

আমি পকেট থেকে চারশো টাকা তার হাতে দিলাম। সে বললো আমি কালকেই আপনার টাকাটা ফেরৎ দেব। আমি বললাম না না ফেরৎ দেয়ার দরকার কী! আর তাছাড়া আমিতো একটু আগেই আপনার এক হাজার টাকা কুড়িয়ে নিলাম। লোকটা বললো বার বার ওই টাকাটার কথা বলে আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন কেন? আমিতো শিখেছি পড়ে যাওয়া টাকা তুলে নিতে নেই। তবে আপনার কাছ থেকে যে টাকা নিলাম এটা ফেরত দিয়ে যাব যদি বলেন। আমি আবার বললাম না দিতে হবে না। সে বললো দিতে হবে, কেন দিতে হবে না। পরে ভাববেন যে দিলেই ভালো হতো। 

আমি তার পিকিউলিয়ার চরিত্র দেখে মনে মনে হেসে নিলাম। এরকম দু'চারটা লোক কেন যে আমার সামনে রোজ আসে না। আমার অফিসে সে কোন একটা কাজে এসেছিল। তার কাজ হয়েছে কিনা জানি না তবে আমার যে কাজ হয়েছে সেটা অসাধারন। পকেটে মাত্র চারশো টাকা ছিল এখন সেখানে আছে এক হাজার টাকা। বাহ এর চেয়ে সুখের আর কি থাকতে পারে। লোকটা আবার আসুক আর আমার পকেট ভারি হোক। 

অফিস থেকে বেশ ফুরফুরে মেজাজে বের হলাম। কারণ আমার পকেটে দুটো পাচশো টাকার নোট আছে। যাবার সময় তানিয়ার জন্য বেশ ভাল দেখে কিছু কিনে নিয়ে যাব। বেশ কিছুদিন মাংস খাইনি তাই মীনা বাজার থেকে দু কেজি মাংসও কেনা যাবে। আমি মীনা বাজারে গিয়ে ভাল দেখে দু'কেজি মাংস নিলাম আর তানিয়ার জন্য একটা শ্যাম্পু। মোট দাম যা আসলো তাতে দেখা গেল আরো কিছু টাকা থেকে যায়। ভাবলাম থাক না কিছু টাকা পরে আবার কিছু কেনা যাবে। কাউন্টার মাস্টারকে পঞ্চাশ টাকা বকশিশ দেব ভাবছি। পকেট থেকে পাঁচশো টাকার নোট দুটো বের করে কাউন্টারম্যানকে দিলাম। লোকটা নোট দুটো নেড়ে চেড়ে দেখলো। এমন ভাব করছিল যেন পাঁচশো টাকার নোট সে জীবনেও দেখেনি। 

আমি মনে মনে বললাম ব্যাটা এতো ছোট মন নিয়ে এখানে এসেছ কেন? পাঁচশো টাকার নোটই দেখনি কাল যখন এক হাজার টাকার নোট দেব তখনতো তুমি ইহধাম ত্যাগ করবে। লোকটা নোট দুটো নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখে মুখটা গোমরা করে ফেললো। নোট দুটো আমার দিকে ফিরিয়ে দিয়ে বললো এই নোট দুটো জাল। আমারতো মাথা খারাপ। এ লোক বলেকি। আমি কি আন্ধা নাকি যে জাল আর আসল চিনবো না। 

আমি নোট দুটো তার হাত থেকে নিয়ে ভালো মতো নেড়ে চেড়ে দেখলাম। আমার মাথায় হাত। ব্যাটা বাটপার আমার অফিসে এসে আমার পকেটের শেষ চারশো টাকা নিয়ে গেছে আর এই জাল পাঁচশো টাকার নোট দুটো রেখে গেছে। আর বলে কিনা পড়ে যাওয়া টাকা তুলে নিতে নেই। শেষে আর কি করি মীনা বাজার থেকে বউয়ের জন্য মাংস বা শ্যাম্পু কোনটাই না নিয়ে অপমানিত হয়ে ফিরে আসলাম। রাস্তায় একা একা হাটছি আর ঘেমে যাচ্ছি। যে চারশো টাকা ছিল তা দিয়ে আগামী এক সপ্তাহ চলার কথা ছিল। এখন যদি বউকে গিয়ে বলি কিছু টাকা দাও, বউতো আমাকে ঝেটিয়ে বিদায় করবে।

১১/১২/২০১৩

কোন মন্তব্য নেই: